ঢাকা শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

দৃষ্টিহীন গণি মিয়ার বাঁশের ঝুড়িতে জীবনের আলো

দৃষ্টিহীন গণি মিয়ার বাঁশের ঝুড়িতে জীবনের আলো

আব্দুল গণি। বয়স এখন ৬৭। একসময় চোখ ছিল একেবারেই স্বাভাবিক, কিন্তু বয়সের সঙ্গে সঙ্গে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে তিনি এখন পুরোপুরি অন্ধ। ১৮ বছর ধরে পৃথিবীর আলো দেখতে পান না। তবুও থেমে যাননি তিনি।

গণি মিয়ার বাড়ি টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কাকড়াজান ইউনিয়নের বুড়িচালা গ্রামে। সংসারে সঙ্গী ৬২ বছরের হাউসি বেগমণ্ডকিন্তু দুর্ভাগ্য, তিনি দীর্ঘদিন ধরে প্যারালাইজড হয়ে ঘরেই শয্যাশায়ী। অন্ধ হয়েও গণি মিয়া কারও কাছে হাত পাততে চান না। বন-জঙ্গল থেকে বাঁশ এনে ইশারায় কেটে ফেলেন, আবার সেই বাঁশ চিড়ে তৈরি করেন- কুলা, টেপারি আর ঝুড়ির মতো হস্তশিল্প। প্রতিদিন আলিশার বাজারে বসে এগুলো বানান ও বিক্রি করেন। কাজ করার সময় ধর্মীয় গজল বা গান গাইতে গাইতে যেন ভুলে থাকার চেষ্টা করেন নিজের কষ্ট। দিন শেষে হাতে আসে মাত্র ৭০-৮০ টাকা। সেটাই তাদের একমাত্র ভরসা। অথচ সংসারে নেই সুস্থ কোনো উপার্জনক্ষম মানুষ।

গণি মিয়ার দুই ছেলে প্রবাসে থাকেন। ভেবেছিলেন বিদেশে থাকা ছেলেদের কারণে হয়ত বার্ধক্যের দিনগুলো একটু স্বস্তিতে কাটবে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। ছোট ছেলের ঘরে বাবা-মায়ের আশ্রয় হয়েছে ঠিকই, কিন্তু আর্থিক সহায়তা নেই। দুইজন ছেলে প্রবাসে থাকলেও তারা কেউই নিয়মিত খোঁজ নেন না, দেন না প্রয়োজনীয় টাকা-পয়সা। তাই দারিদ্র্যের কঠিন বাস্তবতা মেনে নিয়ে এক প্রকার লড়াই করেই দিন কাটাচ্ছেন গণি মিয়া দম্পত্তি। তবুও থেমে থাকেনি তাদের জীবন সংগ্রাম।

প্রতিবেশী জাকির হোসেন বলেন- ‘গণি ভাই খুব পরিশ্রমী মানুষ। চোখে দেখতে পান না, তবুও কখনও কারও কাছে হাত পাতেননি। বাঁশ কেটে কুলা-ঝুড়ি বানিয়ে বাজারে বিক্রি করেন। স্ত্রী অসুস্থ, তাই সংসার চালানো আরও কঠিন হয়ে গেছে। সরকারি সাহায্য বা কোনো ভালো মানুষের সহায়তা পেলে ওনাদের জীবনে একটু স্বস্তি আসতো।’ এলাকাবাসী মাঝে মাঝে সাহায্যের হাত বাড়ালেও তা পর্যাপ্ত নয়।

অথচ একটু সরকারি সহযোগিতা বা কোনো বিত্তবান মানুষের সহায়তা পেলে জীবনের শেষ বয়সে অন্তত শান্তিতে বাঁচতে পারতেন এই দৃষ্টিহীন মানুষ ও তার অসুস্থ স্ত্রী। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মনসুর আহমেদ জানান, গণি মিয়াকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে। অন্ধ হয়েও গণি মিয়া বাঁশ-বেত দিয়ে বিভিন্ন ধরণের জিনিসপত্র তৈরি করেন, এটি নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত