ঢাকা শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ৫ পৌষ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

পাথরঘাটায় ৯৬ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই

৭৯১ পদের বিপরীতে সহকারী শিক্ষক পদ শূন্য ৯১টি
পাথরঘাটায় ৯৬ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই

উপকূলীয় ও দুর্যোগপ্রবণ উপজেলা পাথরঘাটায় সরকারি প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা চরম সংকটে পড়েছে। উপজেলায় মোট ১৬ হাজার ১১২ জন শিক্ষার্থীর পাঠদান কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক সংকটের কারণে। বর্তমানে উপজেলার ১৪৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৯৬টিতেই পূর্ণ মর্যাদায় প্রধান শিক্ষক নেই। পাথরঘাটা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ৭টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এই উপজেলায় মোট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৪৯টি। এর মধ্যে ৫১টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় সহকারী শিক্ষককে ‘ভারপ্রাপ্ত’ হিসেবে দায়িত্ব দিয়ে পাঠদান ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

অপরদিকে আরও ৪৫টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় সহকারী শিক্ষককে ‘চলতি দায়িত্ব’ দিয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা করা হচ্ছে। ফলে মোট ৯৬টি বিদ্যালয়- অর্থাৎ প্রায় ৬৫ শতাংশ- প্রধান শিক্ষকবিহীন অবস্থায় চলছে। একই সঙ্গে সহকারী শিক্ষক সংকট পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। উপজেলায় মোট অনুমোদিত সহকারী শিক্ষক পদ ৭৯১টি। এর বিপরীতে বর্তমানে ৯১টি পদ শূন্য রয়েছে। ছাত্রসংখ্যা ও শ্রেণিকক্ষের চাপ বিবেচনায় এই ঘাটতির কারণে অনেক বিদ্যালয়ে জোড়াতালি দিয়ে শ্রেণি কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে বলে জানান উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জিনাত জাহান। তিনি বলেন, ‘সহকারী শিক্ষকদের একদিকে অতিরিক্ত ক্লাস নিতে হচ্ছে, অন্যদিকে প্রশাসনিক কাজ, বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি ও অভিভাবকদের সঙ্গে সমন্বয়ের দায়িত্বও পালন করতে হচ্ছে। এতে পাঠদানের গুণগত মান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’

পাঠদান তদারকি ও শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য উপজেলাকে ছয়টি ক্লাস্টারে ভাগ করা হলেও সেখানে ৬ জন সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার স্থলে বর্তমানে মাত্র ১ জন দায়িত্ব পালন করছেন। বাকি ৫টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য থাকায় নিয়মিত তদারকি কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষাবিদ স্কুল কলেজ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ও মানবাধিকার কর্মী চৌধুরী মোহাম্মদ মাসুম বলেন, শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তার এই সংকট ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি)-এর ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক, সমতাভিত্তিক ও গুণগত প্রাথমিক শিক্ষা’ লক্ষ্য অর্জনের পরিপন্থী।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জিনাত জাহান জানান, শূন্য পদগুলো পূরণের জন্য বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হয়েছে। তিনি বলেন, শূন্য পদের প্রায় ৬৫ শতাংশ স্থানীয়ভাবে অথবা পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব। তবে আদালতে চলমান মামলার কারণে পদোন্নতি প্রক্রিয়া আটকে আছে।

বরগুনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু জাফর মো. সালেহ প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, বর্তমানে বাধ্য হয়েই সহকারী শিক্ষকদের দিয়ে পাঠদান ও প্রশাসনিক কাজ করানো হচ্ছে। তবে সহকারী শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষক- উভয় পদেই শিগগিরই নিয়োগ প্রদান করা হবে। স্থানীয় বিভিন্ন অভিভাবক ও সচেতন মহল দ্রুত শূন্য পদ পূরণ করে পাথরঘাটার ১৬ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর স্বাভাবিক ও গুণগত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত