ঢাকা মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে

রাজনৈতিক স্থিতি জরুরি

রাজনৈতিক স্থিতি জরুরি

দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংকের প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশন (আইএফসি)। এতে বলা হয়, বাংলাদেশে ব্যবসায় করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা দুর্নীতি। ব্যবসায় করতে ২৩ শতাংশ প্রতিষ্ঠানকে ‘উপহার’ বা ঘুষ দিতে হয়। ৩৫ শতাংশ সংস্থাকে বৈদ্যুতিক সংযোগ বা অপারেটিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য উপহার দিতে হয়েছে। ৭২ শতাংশ সংস্থা আমদানির লাইসেন্স পাওয়ার জন্য ‘উপহার’ (ঘুষ) দেওয়ার কথা ভাবে এবং ১৯ শতাংশ সংস্থাকে কর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে উপহার দিতে হয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ২১৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৮২তম স্থানে। অর্থনীতিসহ পুরো দেশ ধ্বংসকারী আওয়ামী স্বৈরাচারের পতনের পর দেশে অর্থনীতি আবারাে টেনে তোলার চেষ্টা চলছে। অন্তর্বর্তী সরকার একটি বিনিয়োগ সম্মেলন করে বিশ্বের অনেক বিনিয়োগকারীর মনোযোগ আকর্ষণ করতে পেরেছে। বিনিয়োগের পরিবেশ দ্রুত উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। চীনের ব্যবসায়ীরা এ দেশে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে।

দেশের বর্তমান ভঙ্গুর ও স্তিমিত অর্থনীতিতে গতি আনা নিঃসন্দেহে দুরূহ; কিন্তু অসম্ভব নয়। আমাদের দুর্নীতিবিরোধী আইন ও বিধিবিধান যথেষ্টই আছে। এর কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করাই প্রথম কাজ। এ ক্ষেত্রে চোখণ্ডকান বন্ধ করে প্রভাব প্রতিপত্তি পরিচয় নির্বিশেষে অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। অর্থনীতিতে সুশাসন ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। এজন্য গত ১৫ বছরে ফ্যাসিস্ট শাসকের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে যারা নির্বিচারে ব্যাংক লুট ও বিদেশে অর্থ পাচার করেছে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে যতটা দরকার ক্ষমতায়ন করতে হবে। দ্বিতীয় যে করণীয় তার অন্যতম অর্থায়ন সংকট, ঋণ সহায়তা, সুদহার বৃদ্ধির মতো সমস্যাগুলো দূর করা। দুর্নীতি বন্ধ হলে স্বাভাবিকভাবেই ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থা ফিরে আসবে এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি আসবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও খানিকটা উৎসাহ পাবে। সুদহার কমিয়ে আনা সরকারের অঙ্গীকার। এটি যত দ্রুত সম্ভব করে ফেলা দরকার।

বিদেশি বিনিয়োগ আসার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা রাজনৈতিক সামাজিক স্থিতির অভাব। এতে স্থানীয় বিনিয়োগকারীরাও নিরুৎসাহিত হচ্ছে। আমরা জানি, নব্বই দশকের সরকার অর্থনীতির কাঠামোগত সংস্কারের মাধ্যমে দেশে শিল্প-বাণিজ্য-বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে অনেকটাই সফল হয়েছিল; কিন্তু তখনকার বিরোধীদল আওয়ামী লীগ তার বিদেশি প্রভুদের ইঙ্গিতে দিনের পর দিন হরতাল অবরোধসহ চরম আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সৃষ্টি করে দেশের অগ্রগতির পথ রুদ্ধ করে। অর্থনীতিতে বাংলাদেশের ইমার্জিং টাইগার হিসেবে আবির্ভাবের সব সম্ভাবনা নস্যাৎ করে দেয়।

এখনও বিদেশি শক্তির কলকাঠি নাড়া বন্ধ হয়নি। কোনো সুযোগসন্ধানীকে মাঠে নামিয়ে দেশের অগ্রগতি রুখে দেওয়ার চেষ্টা অনেক ক্ষেত্রেই দৃশ্যমান। দেশে সংস্কার নির্বাচন ইত্যাদি মুখ্য বিষয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করে চলমান অস্থিরতা দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা স্পষ্ট। এ ব্যাপারে শুধু অন্তর্বর্তী সরকারের নয়, রাজনীতিতে সক্রিয় সব দলেরই দায়িত্ব আছে। ধ্বংসাত্মক ফ্যাসিবাদী শক্তির উৎখাতের পর দেশ ও জাতির সামনে যে নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে তা যাতে কোনোভাবেই নষ্ট না হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত