ঢাকা বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

শিল্পাঞ্চলে গ্যাস সংকট

দ্রুত নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি

দ্রুত নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি

আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, দেশে বেশ কিছুদিন ধরে গ্যাসের তীব্র সংকট বিরাজ করছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়াই গ্যাস সংকটের কারণ। এমন অবস্থায় ভয়াবহ ঝুঁকির মুখে পড়েছে শিল্প খাত। গত রোববার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ, তীব্র গ্যাস সংকটের কারণে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার, রূপগঞ্জ ও ভুলতা শিল্পাঞ্চলে উৎপাদনে ধস নেমেছে। রুগ্ন হয়ে পড়েছে শতাধিক রপ্তানিমুখী শিল্প-কলকারখানা। অনেক কারখানা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। গত ৬ মাস ধরে চলা এ বিপর্যয়ে স্বাভাবিকভাবেই লোকসানের মুখে পড়েছেন উদ্যোক্তারা। এমন অবস্থায় পরিস্থিতি সরেজমিন দেখতে শনিবার সকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব ও পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পাঞ্চলের কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এসময় শিল্পাঞ্চলে গ্যাস সংকট দ্রুত নিরসনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান। জানিয়েছেন, শিল্পকে বাঁচাতে বিষয়টি দ্রুত সমাধানের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

গ্যাসের সরবরাহ কমে যাওয়ায় বাসাবাড়ি, সিএনজি স্টেশনসহ সর্বত্র এর প্রভাব পড়লেও শিল্পকারখানার পরিস্থিতি সবচেয়ে সঙ্গিন। গ্যাস সংকটের কারণে অধিকাংশ কারখানা ডিজেলচালিত জেনারেটরের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, যা উৎপাদন ব্যয় বহুলাংশে বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে অনেক ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান এরইমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। তবে সরকারের উচ্চপর্যায়ের এই পরিদর্শনে শিল্প-মালিকদের মধ্যে যে আশার সঞ্চার হয়েছে, তা বলাই বাহুল্য। আমরাও আশা করি, দেশের শিল্প খাতের স্বার্থে দ্রুত গ্যাস সংকট সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ভুলে গেলে চলবে না, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে চাহিদামাফিক উৎপাদিত পণ্য সময়মতো সরবরাহ করতে না পারলে কিংবা পণ্যের গুণগত মান ঠিক না থাকলে বিদেশি ক্রেতারা অর্ডার কমিয়ে দেওয়া শুধু নয়, বাতিলও করতে পারেন, যা অর্থনীতির জন্য মঙ্গলজনক হবে না। বস্তুত গ্যাসের এ তীব্র সংকট দ্রুত নিরসন করা না গেলে অর্থনীতি ও বাণিজ্যে এর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, তার অভিঘাত হবে সুদূরপ্রসারী।

কাজেই গ্যাস সমস্যার সমাধান করতে হবে দ্রুত। এ লক্ষ্যে মজুত গ্যাস উত্তোলনে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। গ্যাসক্ষেত্র ও সঞ্চালন লাইনে সমস্যা থাকলে তাও অবিলম্বে দূর করতে হবে। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত পাইপলাইন দ্রুত মেরামত করতে হবে। গ্রাহকদের ভোগান্তি হ্রাসে এবং শিল্প রক্ষার স্বার্থে গ্যাস সংকট কাটাতে দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়া উচিত বলেও মনে করি আমরা। পাশাপাশি এলএনজি আমদানির পরিমাণও প্রয়োজনমাফিক বাড়াতে হবে। সর্বোপরি জ্বালানি খাতে স্মার্ট ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে। তা না হলে নিকট ভবিষ্যতে এ সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব হবে না। মনে রাখা দরকার, দেশে ডলার আসার যে কয়টি ক্ষেত্র রয়েছে, তার মধ্যে রপ্তানি বাণিজ্য অন্যতম। রপ্তানিমুখী শিল্প-কারখানা যদি গ্যাস সংকটে ভোগে, তাহলে উৎপাদন যেমন ব্যাহত হবে, তেমনি ডলার আয়ের প্রবাহ কমে গেলে এর প্রভাবও দেশের অর্থনীতিতে পড়বে। চাহিদামাফিক উৎপাদিত পণ্য সময়মতো সরবরাহ করতে না পারলে কিংবা পণ্যের গুণগত মান ঠিক না থাকলে বিদেশি ক্রেতারা অর্ডার কমিয়ে দিতে, এমনকি বাতিলও করতে পারেন, যা অর্থনীতির জন্য কোনোভাবেই মঙ্গলজনক হবে না। সব দিক বিবেচনায় সরকার দ্রুত গ্যাস সংকট নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত