ঢাকা মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ধর্ষণ ঠেকাও দেশ বাঁচাও

মাহমুদুল হাসান শোভন
ধর্ষণ ঠেকাও দেশ বাঁচাও

‘ধর্ষণ’ হলো- একজন ব্যক্তির ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা। এটি একটি গুরুতর অপরাধ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন। ধর্ষণ শুধু শারীরিক নয়, এটি মানসিক ও সামাজিকভাবেও ভয়ানক ক্ষতি করে। বাংলাদেশে ধর্ষণের হার নিয়ে নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান পাওয়া কঠিন, কারণ অনেক ঘটনা রিপোর্ট হয় না। তবে, বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ধর্ষণের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে ঘটেছে।

সাম্প্রতিক ধর্ষণের পরিসংখ্যান : ২০২৩ সালে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (অঝক)-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ৫৭৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হন। এর মধ্যে ৩৩ জন ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় এবং ৫ জন আত্মহত্যা করেন। ২০২৪ সালের প্রথম তিন মাসে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, এই সময়ে ১১৪ জন নারী ধর্ষণের শিকার হন।

২০২৩-২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত : দেশজুড়ে মোট ৯,৯৭৭টি ধর্ষণের মামলা নথিভুক্ত হয়েছে, যা প্রতিদিন গড়ে ১৩টি ধর্ষণের ঘটনা নির্দেশ করে। শিশু ধর্ষণ গত ১০ বছরে ৫,৬০০-এর বেশি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। শুধু ২০২২ সালে ৫৬০টি শিশু ধর্ষণের ঘটনা রিপোর্ট হয়েছে।

ধর্ষণ বা যৌন সহিংসতা বৃদ্ধির পেছনে অনেক জটিল সামাজিক, মানসিক, অর্থনৈতিক ও আইনি কারণ কাজ করে। যেমন : নারীদের ‘ভোগের বস্তু’ হিসেবে দেখা এবং মেয়েদের স্বাধীনতা ও অধিকারকে হুমকি হিসেবে দেখা। ধর্ষণের ঘটনার পর মামলা না নেওয়া, তদন্তে গাফিলতি। বিচার বিলম্ব ও অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া। ভিকটিমকে দোষারোপ করার সংস্কৃতি। পরিবারে নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধের অভাব। সমাজে যৌনতা নিয়ে বিকৃত কৌতূহল ও খোলামেলা অশ্লীলতা। বিভিন্ন মিডিয়াতে মেয়েদের ভোগের পণ্য হিসেবে উপস্থাপনা করা এবং ছেলেদের উত্তেজিত করে এমন পোশাক পরিধান করা। ইন্টারনেটে সহজে পর্নোগ্রাফি পাওয়া যায় এ থেকে কিশোর ও যুবকদের বিকৃত যৌন কল্পনা তৈরি হয়। ক্ষমতাবানদের দ্বারা ধর্ষণ করে ভয় দেখানো বা আধিপত্য স্থাপন করা। মাদক সেবনের ফলে আত্মনিয়ন্ত্রণ কমে যায় ফলে অনেক ধর্ষণ মাদক গ্রহণের পর সংঘটিত হয়। অনেক তরুণ-তরুণী নিজেদের শারীরিক, মানসিক পরিবর্তন বুঝতে পারে না। সঠিক যৌন শিক্ষা না থাকলে বিকৃত উপায়ে কৌতূহল মেটাতে চায়। উপযুক্ত বয়সে বিয়ে না করে যৌন শক্তি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা।

ধর্ষণ বন্ধ করা একটি জটিল ও বহুস্তর বিশিষ্ট সামাজিক কাজ, যার জন্য প্রয়োজন আইনি, সামাজিক, শিক্ষাগত ও নৈতিক পরিবর্তন। ধর্ষণের জন্য দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা। পুলিশ, তদন্তকারী ও বিচার বিভাগের দক্ষতা ও জবাবদিহি বাড়ানো। ভুক্তভোগীকে নিরাপদে অভিযোগ জানানোর সুযোগ ও গোপনীয়তা নিশ্চিত করা। স্কুল, কলেজ ও কমিউনিটিতে যৌন ও নৈতিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা। পর্নোগ্রাফির আসক্তি থেকে তরুণদের দূরে রাখা। নারীর প্রতি বিকৃত দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে গণমাধ্যম, পরিবার ও ধর্মীয় নেতার ভূমিকা জরুরি।

কর্মস্থল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও যানবাহনে নারীবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা। ছোটবেলা থেকেই নারীর প্রতি সম্মান ও সহানুভূতির শিক্ষা দেওয়া। বাবা-মায়ের সচেতন ভূমিকা ও খোলামেলা আলোচনা জরুরি। সামাজিকমাধ্যমে নারীর প্রতি বিদ্বেষমূলক, অশ্লীল বা হিংসাত্মক কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণ করা। পর্নোগ্রাফির সহজলভ্যতা রোধে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ নেওয়া।

ধর্ষণের শিকারকে অপমান নয়, সহানুভূতি দেওয়া। উপযুক্ত বয়সে বিবাহ সম্পন্ন করার পরিবেশ তৈরি করা। পাড়া-মহল্লায় সচেতনতা বাড়ানো ও প্রতিবাদ সংগঠিত করা।

নারী নিরাপত্তা ও অধিকার রক্ষায় সামাজিক সংগঠন ও নেতৃত্বের বিকাশ ঘটানো। নারী-পুরুষ উভয়কে সচেতন হতে হবে। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, ধর্ষণ দণ্ডবিধির ৩৭৫ ও ৩৭৬ ধারায় অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত এবং এ ধরনের অপরাধের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ড।

লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত