ঢাকা বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

শিশুদের মোবাইল আসক্তি

ক্ষতিকর প্রবণতা রোধ করুন

ক্ষতিকর প্রবণতা রোধ করুন

অনেক মা-বাবা শিশুদের শান্ত রাখতে বা খুশি রাখতে শিশুদের হাতে স্মার্ট মোবাইল ফোন, ট্যাব বা ল্যাপটপ তুলে দেন। শিশুরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা এসব নিয়ে বসে থাকে বা মোবাইলের পর্দায় ডুবে থাকে। অনেক সময় তারা এমন সব কনটেন্ট দেখে, যেগুলো দেখা উচিত নয়। এতে তারা শারীরিক-মানসিক নানা ধরনের ক্ষতির শিকার হয়। অনেকে ক্রমে নেশা ও অপরাধজগতের দিকে পা বাড়ায়। বাংলাদেশে সাইবার অপরাধের ক্ষেত্রে বড় ধরনের ঝুঁকিতে রয়েছে শিশু-কিশোররা। গত পাঁচণ্ডছয় বছরে দেশে সাইবার অপরাধের শিকার শিশুর সংখ্যা বেড়েছে দেড় গুণেরও বেশি। ২০২৩ সালের মে মাসে সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন (সিক্যাফ) প্রকাশিত ‘বাংলাদেশে সাইবার অপরাধপ্রবণতা ২০২৩ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে সাইবার অপরাধের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে ১৪.৮২ শতাংশের বয়স ১৮ বছরের কম। মূলত ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবচেয়ে বেশি সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছে শিশু।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমানে প্রায় ৭২ শতাংশ শিশু দিনে তিন ঘণ্টার বেশি সময় মোবাইল ফোন বা ট্যাবের ভার্চুয়াল দুনিয়ায় ডুবে থাকে। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব কমিউনিটি মেডিসিন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ পত্রিকায় ভারতের কেরালার থিরুভান্থাপুরাম সরকারি মেডিক্যাল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগ পরিচালিত জরিপের ফলাফল তুলে ধরা হয়। এতে দেখা যায়, পাঁচ থেকে ১২ বছর বয়সের প্রায় অর্ধেক শিশুই মোবাইল ফোনে আসক্ত। এই শিশুদের মধ্যে দৃষ্টিশক্তির সমস্যা প্রকট। এছাড়া মাথাব্যথা, মনোযোগের অভাব এবং ঘুমের সমস্যাও অনেক বেশি।

শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি নানা ধরনের শারীরিক জটিলতাও এই শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। অপরাধ ও সমাজ বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, অভিভাবকের অগোচরে বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা প্রযুক্তির অপব্যবহারে পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হয়ে পড়ছে। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সাইবার অপরাধ ও ফেসবুকে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছে অনেক শিশু-কিশোর। এসবের জেরে উঠতি বয়সী শিশু-কিশোরদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। এভাবে প্রযুক্তির নেতিবাচক ব্যবহারের ভয়াবহ প্রভাব পড়ছে সমাজে।

নানা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্তির একটি বড় কারণ হচ্ছে লাইক, কমেন্ট ও ফলোয়ার পাওয়া, যা তাদের সাময়িক আনন্দ দেয়। আর তা করতে গিয়েই তারা আরো বেশি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ে। এ ছাড়া অনেক সময় ফেসবুক ভুয়া খবর, আজেবাজে ছবি, ভিডিও, পোস্ট এসব নানা জঞ্জালে ভরা থাকে। এগুলো শিশুদের মনে অনেক সময় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই আসক্তি প্রতিরোধে অভিভাবকদের আরও সচেতন হতে হবে। শরীরচর্চা, খেলাধুলাসহ শিশুদের ভারসাম্যপূর্ণ জীবনের দিকে আগ্রহী করে তুলতে হবে। এ থেকে উত্তরণে সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকেরও যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। ক্ষতিকর ও অনুপযোগী কিছু কনটেন্টে ফিল্টার করা জরুরি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত