ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ঢাকাই সিনেমা এখন বিশ্ব দরবারে

ঢাকাই সিনেমা এখন বিশ্ব দরবারে

হলিউড ও বলিউড সিনেমা বিশ্বব্যাপী মুক্তি পায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের এ পরিধি আরও বাড়ছে, বিস্তৃত হচ্ছে বাজার। শুধু তাই নয়, তামিল, তেলেগু সিনেমার পাশাপাশি ভারতের আঞ্চলিক সিনেমাও বিশ্বের অন্যান্য দেশে মুক্তি দেওয়া হয়। কিন্তু এদিক থেকে অনেকটা পিছিয়ে ছিল ঢাকাই সিনেমা। বলা যায়, বিদেশে সিনেমা মুক্তি দেওয়ার মতো সাহস করতেই পারছিল না সংশ্লিষ্টরা। কারণ, ঢালিউডের অবস্থা এতটাই করুণ ছিল যে, এগুলো দেশের প্রেক্ষাগৃহেই দর্শক টানতে ব্যর্থ হচ্ছিল। সেখানে এগুলো বিদেশে মুক্তি দেওয়াটাও একটা আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের মতোই ছিল। তাই হয়তোবা এতদিন বিদেশের বাজার ধরার চিন্তাও করতে পারেনি প্রযোজনা সংস্থাগুলো। তবে দেরিতে হলেও, এবার সে পথেই হাঁটছেন তারা। গত কয়েক বছরে অনেক ভালো সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। যা দেশের দর্শকদের প্রেক্ষাগৃহমুখী করেছে। ফলে এগুলো নিয়ে প্রবাসীদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। বিদেশের মাটিতে সিনেমাগুলো প্রবাসীরাও যেন প্রেক্ষাগৃহে বসে দেখতে পারেন সেই আবেদনও অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে জানিয়ে আসছিলেন। প্রবাসী দর্শকদের উৎসাহ উদ্দীপনাতেই বিদেশে বাংলা সিনেমার একটি বাজার তৈরি হওয়ার সম্ভাবনাও লক্ষ করেছেন প্রযোজক ও পরিবেশকরা। তাই সিনেমাগুলো এখন মুক্তি পাচ্ছে বিদেশে। উন্মুক্ত হয়েছে বাংলা সিনেমার বিশ্ব দুয়ার। হলিউড বলিউডের পাশাপাশি এখন ঢাকাই সিনেমাও চলছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। শুধুই যে চলছে এমনটাও নয়, বেশ ভালো ব্যবসাও করছে। যা রীতিমতো বাংলা সিনেমার জন্য এক অপার সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। ‘অস্তিত্ব’ নামের একটি সিনেমা দিয়ে ২০১৬ সাল থেকে বিদেশে বাংলা সিনেমা প্রদর্শনের যাত্রা শুরু হয়।

এরপর ‘শিকারি’, ‘আয়নাবাজি’, ‘নবাব’, ‘দেবী’, ‘ঢাকা অ্যাটাক’, ‘মুসাফির’, ‘শান’, ‘সম্রাট’, ‘মিশন এক্সট্রিম’, ‘স্বপ্নজাল’, ‘পরাণ’, ‘হাওয়া’ সিনেমাগুলোও মুক্তি দেওয়া হয়। আর তাতে করে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলা সিনেমার বাজার ধীরে ধীরে বিস্তৃত হতে থাকে। ধারাবাহিকভাবে গতবছর বিদেশে মুক্তির তালিকায় যুক্ত হয় ‘প্রিয়তমা’, ‘সুড়ঙ্গ’, ‘রাজকুমার’, ‘দেয়ালের দেশ’, ‘ওমর’ সিনেমাগুলো।

যে সময়টাতে হলিউড সিনেমার সুপারপিক মৌসুম, ঠিক সে সময় এ সিনেমাগুলো যুক্তরাষ্ট্র, কানাডার প্রেক্ষাগৃহগুলোতে দেখিয়েছে দাপট, চোখ রাঙিয়েছে হলিউড সিনেমাকে। এদিকে গত ঈদে দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে ছয়টি সিনেমা। যার মধ্যে ‘বরবাদ’, ‘দাগি’, ‘জংলী’ নামের তিনটি সিনেমাই মুক্তি পেয়েছে বিদেশে। যা এখনও চলছে প্রেক্ষাগৃহগুলোতে। ‘দাগি’ সিনেমার নির্মাতা শিহাব শাহীন বলেন, ‘দেশের বাইরে প্রবাসী বাংলাদেশি যারা আছে, তারা বাংলাদেশি সিনেমা দেখতে চান। তাদের আগ্রহ রয়েছে অনেক। দেশি কিছু পেলেই তারা ঝাঁপিয়ে পড়েন। প্রবাসীরা উৎসবের মতো করেই বাংলা সিনেমা দেখেন এবং তা উদযাপন করেন। তাই আমরাও আমাদের সিনেমাটি নিয়ে তাদের কাছে পৌঁছাচ্ছি। আমরা চাই আমাদের সিনেমাগুলো ভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের কাছে পৌঁছে যাক। দেশের সিনেমার গল্প আরও গ্লোবাল ও ইউনিভার্স হোক এটাই চাই। আর তাতেই ভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের মধ্যেও আমাদের সিনেমার গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। এখন যেভাবে দেশের সিনেমা বিদেশে মুক্তির ধারাবাহিকতা তৈরি হয়েছে এটি নিঃসন্দেহে বাংলা সিনেমার জন্য এক অপার সম্ভাবনাই বলব আমি।’ ‘বরবাদ’ সিনেমার পরিচালক মেহেদি হাসান হৃদয় বলেন, ‘বিদেশে আমাদের দেশের সিনেমা মুক্তি পাওয়াটাকে আমি ইতিবাচকভাবেই দেখছি। এটা দেশের জন্য গর্বের, বাংলাদেশিদের জন্য অহংকারের। অনেক আগে থেকেই বিদেশে দেশের সিনেমা মুক্তি পেলেও, কয়েক বছরে সেটি কিন্তু বাড়ছে। ধীরে ধীরে আরও বাড়বে। বিদেশেও আমাদের বাজার তৈরি হবে। আমরা যদি ভালো কনটেন্ট বানাতে পারি, তাহলে একদিন বিশ্ববাজারে বাংলা সিনেমা শক্ত অবস্থানে থাকবে।’ কয়েকবছর আগেই বিদেশে মুক্তি পেয়েছিল ‘আয়নাবাজি’ নামে একটি সিনেমা। এটি নির্মাণ করেছেন অমিতাভ রেজা।

দেশের বাইরে বাংলা সিনেমার সম্ভাবনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার সিনেমাটি যখন বিদেশে মুক্তি দিয়েছিলাম, তখন তেমন ব্যবসা করতে পারিনি। কিন্তু গত কয়েক বছরে দেশের বাইরে বাংলাদেশের সিনেমার একটা নেটওয়ার্ক তৈরি হয়েছে। এখনও বাণিজ্যিকভাবে তেমন সাফল্য না এলেও, আশা সঞ্চারিত হয়েছে। এ প্রক্রিয়া বাংলা সিনেমার জন্য নতুন পথ খুলে দিয়েছে। বাঙালি প্রবাসীরা দেশের টানে কিন্তু বাংলা সিনেমা দেখতে চান। তবে এসব দর্শকের কথা মাথায় রেখে বাংলাদেশের সংস্কৃতি নিয়ে সিনেমা বানাতে হবে। প্রবাসীরা কিন্তু হলিউড বলিউডের সিনেমা দেখে অভ্যস্ত, তাই বিদেশের মাটিতে আমাদের বাজার বাড়াতে হলে গুণগতমানের কোনো বিকল্প নেই।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত