ঢাকা ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৬ ফাল্গুন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অবশেষে কর্মসূচি প্রত্যাহার তিতুমীরের শিক্ষার্থীদের

সাতদিনের আল্টিমেটাম
অবশেষে কর্মসূচি প্রত্যাহার তিতুমীরের শিক্ষার্থীদের

সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিতে আমরণ অনশন ও সড়কে অবস্থান নিয়েছিল শিক্ষার্থীরা। অবশেষে আগামী ৭ দিনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ইস্যুতে সরকার পদক্ষেপ নেবে এমন আশ্বাসে আমরণ অনশন ভাঙলেন কলেজটির শিক্ষার্থীরা। গতকাল সোমবার রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নুরুজ্জামান, সরকারি তিতুমীর কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক শিপ্রা রাণী মন্ডলের উপস্থিতিতে অনশন ভাঙেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় অধ্যক্ষকে অনশনরত শিক্ষার্থীকে প্যাকেটজাত আমের জুস পান করিয়ে দিতে দেখা যায়।

দেশের চলমান পরিস্থিতিতে তিতুমীরকে বিশ্ববিদ্যালয় মেনে নিলে অন্যান্য ছোট ছোট কলেজগুলোও মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। তাই তিতুমীরকে কীভাবে স্বতন্ত্র কাঠামোর দিকে এগিয়ে নেয়া যায়, সে লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের ৭ দফা দাবিগুলো খুব শিগগিরই মেনে নেবেন শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ৭ দিনের মধ্যেই দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেবেন তারা।

এর আগে রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিতে গতকাল টানা পঞ্চম দিনের মতো সড়কে নেমেছিলেন কলেজটির শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুর সোয়া ১২টার দিকে তারা মহাখালী থেকে গুলশানগামী সড়ক বন্ধ করে দেন। এতে সড়কের উভয় পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়া মানুষরা ভোগান্তিতে পড়েন। তাদেরই একজন যশোরের কেশবপুরের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম। মহাখালীতে তিতুমীর কলেজের সামনে গতকাল দুপুর দেড়টার দিকে এই প্রতিবেদকের কথা হয় জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে। দুই হাতে ব্যাগপত্র নিয়ে মহাখালীর আমতলী মোড়ের দিকে হেঁটে যাচ্ছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন ক্যান্সারে আক্রান্ত বোন।

জাহাঙ্গীর বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা রাস্তা আটকে রেখেছেন। কোনো বাস চলছে না। রিকশা নিতে চেয়েছিলাম। বলল, মহাখালী পর্যন্ত যেতে পারবে না। কলেজের সামনে নামিয়ে দেবে। ভাড়া ৪০ টাকা চাইল। পরে হেঁটেই রওনা দিয়েছি। কিন্তু বোনের কষ্ট হচ্ছে। হাসপাতাল থেকে কলেজের সামনে পর্যন্ত দুবার জিরিয়ে নিয়েছে।’ সরজমিনে দেখা যায়, দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের দিকে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের কলেজ ফটকের সামনে বাঁশ ফেলে সড়ক অবরোধ করেন। এ সময় মহাখালী থেকে গুলশানে যাওয়ার এবং গুলশান থেকে মহাখালী আমতলীর দিকে আসার সময় উভয় পাশের রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শিক্ষার্থীরা অসুস্থ রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স বা বাহন বাদে আর কোনো যানবাহন চলাচল করতে দিচ্ছিলেন না। এ সময় অনেক মানুষকেই হেঁটে গন্তব্যে রওনা দিতে দেখা গেছে। কারও হাতে ছিল জিনিসপত্রের বড় ব্যাগ-বস্তা, কারও কোলে ছিল সন্তান। কেউবা বয়স্ক মা-বাবাকে হাতে ধরে হাঁটিয়ে নিচ্ছিলেন। রাস্তা বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়া এসব লোকজনের কেউ কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

সড়ক অবরোধে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েন রজ্জব আলী রাশেদা বেগম দম্পতি। রাশেদা বেগমের বাঁ হাত কনুইয়ের নিচে ব্যান্ডেজে মোড়ানো ছিল। সেই হাত সাবধানে ধরে নিয়ে ধীরগতিতে হাঁটছিলেন তারা। তিতুমীর কলেজের সামনে কথা হয় তাদের সঙ্গে। ধামরাইয়ের বাসিন্দা অটোচালক রজ্জব আলী দুর্ভোগের কথা জানিয়ে বলেন, ‘কোনো গাড়ি নাই। রিকশা ভাড়া তিন-চারগুণ বেশি চাইছে। রাস্তা আটকানোর কারণে কোনো গাড়িও পেলাম না। এখন হাঁটা ছাড়া কোনো গতি নাই। তাদের তো মানুষের কষ্ট বোঝা উচিত। তারাই যদি মানুষের কষ্ট না বোঝে, আর কে বুঝবে?’

মহাখালী থেকে গুলশানের রাস্তায় যানবাহন সরাসরি না চললেও মহাখালী থেকে তিতুমীর কলেজের সামনে পর্যন্ত এবং তিতুমীর কলেজের পর থেকে আবার গুলশান পর্যন্ত রিকশা ও ব্যাটারিচালিত রিকশা চলছিল। কিন্তু ভাড়া নেয়া হচ্ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। মহাখালী থেকে তিতুমীর কলেজের সামনে পর্যন্ত রিকশায় জনপ্রতি ৩০ টাকা নেওয়া হয়। সে হিসাবে দুজন যাত্রীর ভাড়া ৬০ টাকা। স্বাভাবিক সময়ে এই ভাড়ায় গুলশানে যাওয়া যায়। ভাড়া নিয়ে রিকশাচালক ও সাধারণ মানুষদের বাগ্?বিতণ্ডায় জড়াতে দেখা গেছে। এ সময় শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধে বিরক্ত হয়ে কেউ কেউ গালমন্দও করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবির যৌক্তিকতা নিয়েও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কেউ কেউ বিতণ্ডায় জড়ান।

গুলশান ১ নম্বরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী শাহজাহান উদ্দিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যখন মন চাইছে, রাস্তায় নেমে সড়ক অবরোধ করছে। প্রশাসনও কিছু করছে না। যত কষ্ট, সব সাধারণ মানুষের। আর দুর্ভোগের সুযোগে রিকশাচালকেরা ভাড়া বেশি নিচ্ছেন। সরকার কি মানুষের দুর্ভোগ দেখে না? তিন ঘণ্টা সড়ক অবরোধের পর বেলা সোয়া তিনটার দিকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে মহাখালী আমতলীর দিকে রওনা দেন। বিকেল পৌনে চারটার দিকে শিক্ষার্থীরা মহাখালী রেললাইন অবরোধ করেন। এ সময় জাহাঙ্গীর গেট থেকে মহাখালী হয়ে (উড়াল সড়কের নিচে) গুলশান-বনানী যাওয়ার রাস্তা এবং গুলশান-বনানী থেকে বিজয় সরণিতে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। শেষ সন্ধ্যা পৌনে ৬টা পর্যন্ত প্রায় ২ ঘণ্টা ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগের পাশাপাশি নিচের সড়কেও যান চলাচল বন্ধ ছিল।

তিতুমীর শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো-

১। তিতুমীরকে নতুন স্বতন্ত্র কাঠামো হিসেবে গঠন করে কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। ২। স্বতন্ত্র কাঠামো গঠন করে ২৪-২৫ সেশনের ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করা। ৩। শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ নতুবা অনতিবিলম্বে শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসিক খরচ বহন।

৪। ২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ন্যূনতম দুটি বিষয় ল’ এবং জার্নালিজম সাবজেক্ট সংযোজন।

৫। একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন পিএইচডিধারী শিক্ষক নিয়োগ। ৬। শিক্ষার গুণগতমান শতভাগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে আসন সংখ্যা সীমিতকরণ। ৭। আন্তর্জাতিকমানের গবেষণাগার বিনির্মাণের লক্ষ্যে জমি ও আর্থিক বরাদ্দ নিশ্চিতকরণ। ৮। উন্নতমানের পরিবহন ব্যবস্থা সরবরাহ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত