ঢাকা মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ইতিহাস গড়ে এশিয়ান কাপে বাংলাদেশের মেয়েরা

ইতিহাস গড়ে এশিয়ান কাপে বাংলাদেশের মেয়েরা

দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্ব প্রদর্শনের মঞ্চ সাফ। সেখানে টানা দুবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। লাল সবুজের মেয়েরা এশিয়ার মঞ্চে খেলার সুযোগ খুঁজছিল। সেই সুযোগ তৈরি করে দেয় এএফসি নারী এশিয়ান কাপের বাছাই পর্ব। এই বাছাই টুর্নামেন্টটি হচ্ছে মিয়ানমারে। প্রতিবেশী দেশটিতে যাওয়ার আগে স্বপ্নের কথা বলে গিয়েছিলেন বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের কোচ পিটার বাটলার ও অধিনায়ক আফঈদা খন্দকার। তারা বলেছিলন প্রথমবারের মতো এশিয়ান কাপের মূল পর্বে খেলতে চান! লক্ষ্য পূরণে মেয়েদের সামনে প্রথম বাঁধা ছিল বাহরাইন। যারা ফিফা র‍্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে ৩৬ ধাপ এগিয়ে। নিজেদের প্রথম ম্যাচে মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটিকে ৭-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে আফঈদা খন্দকারের দল। এই জয়ে স্বপ্ন পূরণের সিঁড়িতে পা রাখে বাংলাদেশ। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে লাল সবুজ কন্যাদের সামনে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় স্বাগতিক মিয়ানমার। যারা ফিফা র‍্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে ৭৩ ধাপ এগিয়ে। কিন্তু কেনো বাঁধাই মানেনি তহুরা, মনিকারা। গতকাল বুধবার ইয়াঙ্গুনের থুউন্না স্টেডিয়ামে ঋতুপর্ণা চাকমার জোড়া গোলে স্বাগতিক মিয়ানমারকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়েছে পিটার বাটলারের দল। অবিশ্বাস্য এই জয়ে এশিয়ান কাপের মূল পর্বে পৌঁছে গেছে বাংলাদেশ।

গতকালই সুখবরটা পেয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। র‌্যাঙ্কিংয়ে ৭৩ ধাপ এগিয়ে থাকা মিয়ানমারকে হারিয়ে উৎসবের উপলক্ষটা আগেই সাজিয়ে রেখেছিল বাংলাদেশ। অপেক্ষা ছিল বাহরাইন বনাম তুর্কমেনিস্তান ম্যাচের ফলাফলে। তুর্কমেনিস্তান পয়েন্ট হারানোয় এশিয়ান কাপের টিকিট মিলেছে বাংলাদেশের মেয়েদের। তাতে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে পিটার বাটলারের শিষ্যরা। ইয়াঙ্গুনের থুয়ান্না স্টেডিয়ামে বাছাইপর্বের ‘সি’ গ্রুপের ম্যাচে বাহরাইনের সঙ্গে ২-২ গোলে ড্র করেছে তুর্কমেনিস্তান। দুইবার এগিয়ে থেকেও যোগ করা সময়ের শেষ মুহূর্তে গোল হজম করে সুযোগ হারায় দলটি। এদিকে দুই ম্যাচে পূর্ণ ৬ পয়েন্ট নিয়ে এশিয়ান কাপ নিশ্চিত হয়েছে বাংলাদেশের। নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবার এশিয়া কাপের মঞ্চে জায়গা করে নিয়েছে তারা। বাইলজ অনুযায়ী, দুই কিংবা তার বেশি দলের পয়েন্ট সমান হলে তখন দেখা হবে হেড টু হেড ব্যবধান। যেখানে মিয়ানমার ও বাহরাইন দুই দলকেই হারিয়েছে বাংলাদেশ। তাই এ দুই দলের কোনো সম্ভাবনাই নেই পরবর্তী রাউন্ডে যাওয়ার। তবে বাহরাইনকে হারিয়ে শেষ ম্যাচে বাংলাদেশকে হারাতে পারলে সুযোগ ছিল তুর্কমেনিস্তানের। কিন্তু সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি দলটি। এদিন বাহরাইনের সঙ্গে যেভাবে খেলেছেন, তার কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। মিয়ানমারের বিপক্ষে একইভাবে দুর্দান্ত খেলে জয় পেয়েছেন আফঈদা খন্দকাররা। এই জয়ে মধুর প্রতিশোধও নিল লাল সবুজের মেয়েরা। ৭ বছর আগে ঠিক ইয়াঙ্গুনের এই মাঠেই ৫ গোল হজম করেছিল বাংলাদেশ। সেই বাংলাদেশ দল যে বদলে গেছে তা প্রমাণিত হল। এবারও গ্রুপের সবচেয়ে শক্তিশালী দল মিয়ানমার। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে ৭৩ ধাপ এগিয়ে থাকা দলটিকে হারিয়ে বাংলাদেশ চমক দেখিয়েছে। ঋতুপর্ণা চাকমার অসাধারণ দুই গোলে দারুণ এক প্রতিশোধও নেওয়া হয়েছে। টানা দুই ম্যাচ জিতে বাংলাদেশ দল এখন মূল পর্বে খেলার কাছাকাছি। আগামী শনিবার গ্রুপের শেষ ম্যাচে তুর্কমেনিস্তানের সঙ্গে ড্র করলেই চলবে বাংলাদেশের। তাহলেই আফঈদারা খেলতে পারবেন অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠেয় মূলপর্বে। নারী এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে গ্রুপের সবচেয়ে শক্তিশালী দল মিয়ানমার। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়েও তারা (৫৫) বাংলাদেশের (১২৮) থেকে অনেক এগিয়ে। কিন্তু গতকাল মাঠের লড়াইয়ে স্বাগতিকদের বিপক্ষে লাল-সবুজ দল চোখে চোখ রেখে খেলছে। ম্যাচের মাত্র ১৮ মিনিটে ঋতুপর্ণা চাকমার অসাধারণ এক গোলে মিয়ানমারের বিপক্ষে এগিয়ে প্রথমার্ধ শেষ করে বাংলাদেশ (১-০)। ২৪ মিনিটে বাংলাদেশ আবার এগিয়ে যেতে পারতো। ঋতুপর্ণার ক্রসে তেকাঠির একদম সামনে থেকে ফাঁকায় শামুসন্নাহার প্লেসিং করলেও পোস্টে লেগে বলের দিক পরিবর্তন হলে আফসোস বাড়ে তাতে। ৪২ মিনিটে স্বাগতিকদের দুর্ভাগ্য। কিন মো মোর একটি জোরালো শট ক্রস বারে লেগে ফিরে আসে। সামনে থাকা হোয়াইয়ের শট ক্রস বারের ওপর দিয়ে গেলে হতাশ হন স্বাগতিক দর্শকরা। শেষ দিকে মিয়ানমার চাপ দিয়েও গোল শোধ দিতে পারেনি। ৭১ মিনিটে বাঁ প্রান্ত দিয়ে দুরপাল্লার শটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন সেই ঋতুপর্ণা চাকমা (২-০)। দুরন্ত এক ঋতুপর্ণাকেই দেখলেন দর্শকরা। ফরোয়ার্ডে বল আসা মানেই তার পায়ে থাকা। তবে ম্যাচের অন্তিম সময়ে স্বাগতিক দলের মিডফিল্ডার উইন উইন গোল করলে ব্যবধান কমে (১-২)। কিন্তু দলের হার এড়াতে পারেননি তিনি। শেষ পর্যন্ত এই ব্যবধানে জয় নিয়েই মাঠ ছাড়েন আফঈদারা। ম্যাচ শেষে জোড়া গোল করে দলকে জেতানো ঋতুপর্ণা চাকমা ছিলেন খুবই উচ্ছ্বসিত। তার কথা, ‘দেশ থেকে আমরা ম্যাচ বাই ম্যাচ জেতার লক্ষ্য নিয়ে এখানে (মিয়ানমার) এসেছি। নিজেদের সেরা পারফরম্যান্স দেওয়ার চেষ্টা করেছি। সেটাই পেরেছি। সমর্থকদের বলব, আমাদের সমর্থন দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। তাদের অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদের যেভাবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। আগামীতেও যেন আরও সমর্থন দিয়ে যান তারা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত