চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। এ বছর দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৬৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ। গত বছর অর্থাৎ, ২০২৪ সালে গড় পাসের হার ছিল ৮৩ দশমিক ০৪ শতাংশ। সে হিসাবে এবার পাসের হার ১৪.৫৯ শতাংশ কমেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে এ ফল প্রকাশ করা হয়। ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সম্মেলনকক্ষে ফলাফলের বিস্তারিত তুলে ধরেন বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির। প্রকাশিত ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চলতি বছর দেশের ৩ হাজার ৭১৪টি কেন্দ্রে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নেয় ১৯ লাখ ৪ হাজার ৮৬ জন। তাদের মধ্যে পাস করেছে ১৩ লাখ ৩ হাজার ৪২৬ জন। পাস করাদের মধ্যে ছাত্র ৬ লাখ ২৬ হাজার ৯৮১ জন এবং ছাত্রী ৬ লাখ ৭৬ হাজার ৪৪৫ জন।
দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডে এবার গড় পাসের হার ৬৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ। ছাত্রদের পাসের হার ৬৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ এবং ছাত্রীদের পাসের হার ৭১ দশমিক ০৩ শতাংশ। এবার মোট জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩২ জন। তাদের মধ্যে ছাত্র ৬৫ হাজার ৪১৬ জন এবং ছাত্রী ৭৩ হাজার ৬১৬ জন। এবার ছাত্রীদের পাসের হার ৭১.০৩ শতাংশ এবং ছাত্রদের পাসের হার ৬৫.৮৮ শতাংশ। সেই হিসাবে এবারও পাসের হারে এগিয়ে রয়েছে ছাত্রীরা। এ নিয়ে টানা ১০ বছর এসএসসিতে পাসের হারে এগিয়ে ছাত্রীরা। বিগত ১১ বছরের এসএসসি ও সমমানের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, সবশেষ ২০১৫ সালে ছাত্রীদের চেয়ে পাসের হারে এগিয়ে ছিল ছাত্ররা। সে বছর ১১টি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ছিল ৮৭ দশমিক ০৪ শতাংশ। তার মধ্যে ছাত্রদের পাসের হার ছিল ৮৭ দশমিক ৪১ শতাংশ এবং ছাত্রীদের পাসের হার ছিল ৮৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এরপর থেকে প্রতিবছর পাসের হারে এগিয়ে ছাত্রীরা।
৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের ফল: দেশের ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় ১৫ লাখ ৭৯ হাজার ৩১০ জন। তাদের মধ্যে পাস করেছে ১০ লাখ ৬ হাজার ৫৫৪ জন। গড় পাসের হার ৬৮ দশমিক ০৪ শতাংশ। এসএসসিতে পাস করাদের মধ্যে ছাত্র ৪ লাখ ৫৫ হাজার ৪৭৭ জন এবং ছাত্রী ৫ লাখ ৫১ হাজার ৭৭ জন। পাসের হার যথাক্রমে ছাত্র ৬৫ দশমিক ১১ শতাংশ এবং ছাত্রী ৭০ দশমিক ৬৭ শতাংশ। ৯টি সাধারণ বোর্ডের অধীনে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ১৮ জন। তাদের মধ্যে ছাত্রী ৬৬ হাজার ৭৮০ জন এবং ছাত্র ৫৮ হাজার ২৩৮ জন।
দাখিলে পাস ৬৮.০৯ শতাংশ, জিপিএ-৫ ৯০৬৬ জন : বাংলাদেশ মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেন ২ লাখ ৮৬ হাজার ৫৭২ জন। পাস করেছে ১ লাখ ৯৫ হাজার ১১৫ জন। তাদের মধ্যে ছাত্র ৯৬ হাজার ৯৩৫ এবং ছাত্রী ৯৮ হাজার ১৮০ জন। দাখিলে এবার গড় পাসের হার ৬৮ দশমিক ০৯ শতাংশ। ছাত্রদের পাসের হার ৬৫ দশমিক ৮৩ এবং ছাত্রীদের পাসের হার ৭০ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এবার দাখিলে সারা দেশে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯ হাজার ৬৬ জন। তাদের মধ্যে ছাত্র ৪ হাজার ৮৮৭ জন এবং ছাত্রী ৪ হাজার ১৭৯ জন।
কারিগরিতে পাসের হার ৭৩.৬৩ শতাংশ : বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবার পরীক্ষায় অংশ নেয় ১ লাখ ৩৮ হাজার ২০৪ জন। তাদের মধ্যে পাস করেছে ১ লাখ ১ হাজার ৭৫৭ জন। মোট পাস করাদের মধ্যে ছাত্র ৭৪ হাজার ৫৬৯ জন এবং ছাত্রী ২৭ হাজার ১৮৮ জন। এবার কারিগরিতে গড় পাসের হার ৭৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ। তার মধ্যে ছাত্ররা পাস করেছেন ৭১ দশমিক ০৯ শতাংশ এবং ছাত্রীদের পাসের হার ৮১ দশমিক ৬২ শতাংশ। কারিগরি বোর্ডের অধীনে এবার সারা দেশে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ হাজার ৯৪৮ জন। তাদের মধ্যে ছাত্র ২ হাজার ২৯১ জন এবং ছাত্রী ২ হাজার ৬৫৭ জন।
বোর্ডভিত্তিক পাসের হার : এবার সবচেয়ে বেশি পাস করেছে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা। এ বোর্ডে পাসের হার ৭৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ। এরপর আছে- যশোর বোর্ড: ৭৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ, কারিগরি বোর্ড: ৭৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ, চট্টগ্রাম বোর্ড: ৭২ দশমিক ০৭ শতাংশ, সিলেট বোর্ড: ৬৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ, মাদ্রাসা বোর্ড: ৬৮ দশমিক ০৯ শতাংশ, ঢাকা বোর্ড: ৬৭ দশমিক ৫১ শতাংশ, দিনাজপুর বোর্ড: ৬৭ দশমিক ০৩ শতাংশ, কুমিল্লা বোর্ড: ৬৩ দশমিক ৬০ শতাংশ, ময়মনসিংহ বোর্ড: ৫৮ দশমিক ২২ শতাংশ, বরিশাল বোর্ড: ৫৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
সাধারণ ৯ বোর্ডে পরীক্ষার্থী: ১৪ লাখ ৯০ হাজার ১৪২ জন। তার মধ্যে- ছাত্র: ৭ লাখ ১ হাজার ৫৩৮ জন, ছাত্রী: ৭ লাখ ৮৮ হাজার ৬০৪ জন। এবার সর্বমোট ২ হাজার ২৯১টি কেন্দ্রে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া অংশগ্রহণ করেছে ১৮ হাজার ৮৪টি প্রতিষ্ঠান।
মাদ্রাসা বোর্ডে পরীক্ষার্থী : ২ লাখ ৯৪ হাজার ৭২৬ জন। এর মধ্যে— ১ লাখ ৫০ হাজার ৮৯৩ জন ছাত্র ও ১ লাখ ৪৩ হাজার ৮৩৩ জন ছাত্রী ৭২৫টি কেন্দ্রে, ৯ হাজার ৬৩টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেছে।
এছাড়া কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৩১৩ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় বসেছে। তার মধ্যে- ১ লাখ ৮ হাজার ৩৮৫ জন ছাত্র এবং ৩৪ হাজার ৯২৮ জন ছাত্রী।
এবার সবগুলো শিক্ষা বোর্ডের জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩২ জন শিক্ষার্থী। তার মধ্যে- ঢাকা বোর্ড: ৩৭ হাজার ৬৮ জন, চট্টগ্রাম বোর্ড: ১১ হাজার ৮৪৩ জন, কুমিল্লা বোর্ড: ৯ হাজার ৯০২ জন, ময়মনসিংহ বোর্ড: ৬ হাজার ৬৭৮ জন, যশোর বোর্ড: ১৫ হাজার ৪১০ জন, বরিশাল বোর্ড: ৩ হাজার ১১৪ জন, দিনাজপুর বোর্ড: ১৫ হাজার ৬২ জন, সিলেট বোর্ড: ৩ হাজার ৬১৪ জন, রাজশাহী বোর্ড: ২২ হাজার ৩২৭ জন।
অন্যান্য বোর্ডের ফলাফল- মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড: জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৯ হাজার ৬৬ জন, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড: জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৪ হাজার ৯৪৮ জন শিক্ষার্থী। এবারের পরীক্ষায় পাসের হার এবং জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা গত বছরের তুলনায় কম।
পাসের হারে দেশসেরা রাজশাহী বোর্ড, তলানিতে বরিশাল : চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে এ ফল প্রকাশ করা হয়। এতে দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৬৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ। ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় এবার পাসের হারে সবার উপরে রয়েছে রাজশাহী বোর্ড। এ বোর্ডে পাস করেছেন ৭৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। এরপরই দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে যশোর বোর্ড। এ বোর্ডে পাসের হার ৭৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ। তৃতীয় স্থানে থাকা কারিগরি বোর্ডে পাসের হার ৭৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
এছাড়া ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৬৭ দশমিক ৫১, কুমিল্লায় ৬৩ দশমিক ৬০, চট্টগ্রাম ৭২ দশমিক ০৭, সিলেটে ৬৮ দশমিক ৫৭, দিনাজপুরে ৬৭ দশমিক ০৩, ময়মনসিংহে ৫৮ দশমিক ২২ ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে ৬৮ দশমিক ০৯ শতাংশ। পাসের হারে সবার নিচে অবস্থান করছে বরিশাল শিক্ষা বোর্ড। এ বছর বরিশাল বোর্ডে গড় পাসের হার ৫৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
সব বোর্ডেই গণিতে ভরাডুবি : এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় সব বোর্ডেই গণিতে পাসের হার আশঙ্কাজনক হারে কমেছে। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, অন্যান্য বিষয়ের তুলনায় গণিতেই বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী কৃতকার্য হতে পারেনি। ফলে সব শিক্ষাবোর্ডে গণিতেই ভরাডুবি ঘটেছে। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ফল বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
১১টি বোর্ডের বিভিন্ন বিষয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী সবচেয়ে ভালো ফল হয়েছে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে, যেখানে গণিতে পাসের হার ৮৮ দশমিক ৭২ শতাংশ। এই ফল অন্যান্য বোর্ডের তুলনায় অনেকটাই ভালো হলেও বাকি সব বোর্ডেই চিত্রটা হতাশাজনক।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে গণিতে পাস করেছে ৭৫ দশমিক ১৪ শতাংশ শিক্ষার্থী। রাজশাহী বোর্ডে এ হার কিছুটা ভালো- ৮৬ দশমিক ৫২ শতাংশ। যশোর বোর্ডেও তুলনামূলক ভালো ফল হয়েছে, পাসের হার ৮৫ দশমিক ০২ শতাংশ। তবে কুমিল্লা, দিনাজপুর ও ময়মনসিংহ বোর্ডে ফল অনেকটাই খারাপ। কুমিল্লা বোর্ডে গণিতে পাসের হার ৭২ দশমিক ০১ শতাংশ, দিনাজপুর বোর্ডে ৭১ দশমিক ৩৫ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বোর্ডে মাত্র ৬৪ দশমিক ২৭ শতাংশ। বরিশাল বোর্ডে এই হার আরও কম-মাত্র ৬৪ দশমিক ৬২ শতাংশ। চট্টগ্রাম বোর্ডে গণিতে পাস করেছে ৮১ দশমিক ৫৩ শতাংশ শিক্ষার্থী, যা তুলনামূলকভাবে ভালো হলেও আশানুরূপ নয়। সিলেট বোর্ডে পাসের হার ৮৩ দশমিক ১৭ শতাংশ। এছাড়া, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডেও গণিতে পাসের হার কম, যেখানে ৭৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ শিক্ষার্থী কৃতকার্য হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গণিত বিষয়টিকে শিক্ষার্থীরা এখনো ভয় পায়। পাশাপাশি স্কুলে গণিতশিক্ষকের সংকট, মানসম্মত পাঠদানের অভাব এবং পর্যাপ্ত অনুশীলনের সুযোগ না থাকায় এমন ফলাফলের দেখা মিলছে। একইসঙ্গে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে গাণিতিক ধারণার দুর্বলতা, অনুশীলনমূলক প্রশ্নে অনভ্যস্ততা এবং পাঠ্যবইনির্ভর না হয়ে কোচিং ও গাইড নির্ভরতা বৃদ্ধিও অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকা বোর্ডের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, স্কুলপর্যায়ে গণিতশিক্ষার পদ্ধতিগত পরিবর্তন এবং হাতে-কলমে শিক্ষাদান ও অনুশীলনের সুযোগ বাড়ানো না হলে ভবিষ্যতেও এ ধরনের ভরাডুবি এড়ানো কঠিন হবে। অন্যদিকে, এবার ফল প্রকাশ উপলক্ষে এবার কোনো আনুষ্ঠানিকতা রাখা হয়নি। শিক্ষা উপদেষ্টা জানিয়েছেন, গোঁজামিল ও বাহুল্য এড়িয়ে, স্বচ্ছতায় গুরুত্ব দিয়েই ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে।
১৩৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শতভাগ শিক্ষার্থী অকৃতকার্য : চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় দেশের ১৩৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শতভাগ শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে। অর্থাৎ, এসব প্রতিষ্ঠানে শতভাগ ফেল করেছে। গত বছর শূন্য পাস করা এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল মাত্র ৫১টি। এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩৪টিতে। এসএসসির প্রকাশিত ফলাফল বিশ্লেষণে এ তথ্য জানা যায়।
কাউকে বাড়তি নম্বর দেওয়া হয়নি, এটিই প্রকৃত ফল -চেয়ারম্যান : চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় কাউকে গ্রেস মার্কস বা বাড়তি নম্বর দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির। তিনি বলেন, যে ফলাফল আমরা প্রকাশ করলাম, এটি প্রকৃত ফল। এবার কোনো ধরনের বাড়তি নম্বর বা গ্রেস মার্কস কাউকে দেওয়া হয়নি। মেধার প্রকৃত মূল্যায়নের শতভাগ প্রচেষ্টা করা হয়েছে। পরীক্ষকদেরও সেভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। ফলে এটিই প্রকৃত ও সত্য ফলাফল। এ নিয়ে সন্দেহ-সংশয় ও ক্ষোভের সুযোগ নেই। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে ঢাকা বোর্ডের সম্মেলনকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় ফলাফল তুলে ধরে তিনি এসব কথা বলেন। অধ্যাপক এহসানুল কবির বলেন, বিগত সময়ে কী হয়েছে, কীভাবে ফল তৈরি করা হয়েছে; তা আমরা বলবো না। এখন যে ফল আমরা দিয়েছি সেটিই প্রকৃত। উত্তরপত্র যথাযথভাবে মূল্যায়নের পর যা এসেছে, সেটি উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে আমাদের কোনো হাত নেই। তিনি বলেন, এবার আমাদের ওপর মহল থেকে কোনো ধরনের চাপ ছিল না। আমাদের বলা হয়েছে যে রেজাল্ট হবে, সেটিই দিতে হবে। আমরাও পরীক্ষকদের এ অনুরোধ জানিয়েছি। তাদের যথার্থভাবে খাতা মূল্যায়ন করার জন্য বলা হয়েছে। বিশেষ কোনো নির্দেশনা ছিল না জানিয়ে খন্দকার এহসানুল কবির বলেন, শিক্ষার্থীরা খাতায় যা লিখেছে, সে অনুসারে নম্বর পেয়েছে। শিক্ষার্থীদের খাতার প্রাপ্ত নম্বরই যথাযথভাবে আমরা কম্পিউটারের মাধ্যমে প্রকাশ করেছি। কোনো নির্দিষ্ট নম্বর পাওয়ার পর বিশেষ নম্বর দিয়ে ভালো গ্রেড করে দেওয়া হয়নি। ফলাফল তৈরিতে কোনো উদারনীতিও অবলম্বন করা হয়নি।
বরিশাল বোর্ডে পাসের হার কমার বিষয়ে চেয়ারম্যান বলেন, বরিশাল অঞ্চলে খাল-বিলসহ প্রান্তিক এলাকা বেশি। তাই ওসব অঞ্চলের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা একটু কঠিন হয়। এছাড়া আমরা ঢাকা মহানগরের বাইরে যত উপজেলা পর্যায়ে যাবো, তত পাসের হার কমতে থাকে। কারণ ঢাকাসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তারা ফলাফল ভালো করার চেষ্টা করে সব সময়। তাই শহরের তুলনায় গ্রামের দিকের ফলাফলে একটু তারতম্য ঘটে।
প্রসঙ্গত, চলতি বছর এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয়েছিল গত ১০ এপ্রিল। পরীক্ষা শেষ হয় ১৩ মে। এ পরীক্ষায় অংশ নিতে ফরম পূরণ করেছিলেন ১৯ লাখ ২৮ হাজার ৯৭০ জন। তাদের মধ্যে ছাত্রী ৯ লাখ ৬৭ হাজার ৭৩৯ জন এবং ছাত্র ৯ লাখ ৬১ হাজার ২৩১ জন। মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে সাধারণ ৯টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন ১৪ লাখ ৯০ হাজার ১৪২ জন। মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে দাখিল পরীক্ষার্থী ২ লাখ ৯৪ হাজার ৭২৬ জন এবং কারিগরি বোর্ডের অধীনে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৩১৩ জন ফরম পূরণ করেছিলেন। পরীক্ষার প্রথম দিনেই সারা দেশের ৩ হাজার ৭১৫টি কেন্দ্রে অনুপস্থিত ছিলেন ২৬ হাজার ৯২৮ জন পরীক্ষার্থী। পরে এ অনুপস্থিতির সংখ্যা আরও বাড়ে।