ঢাকা শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

বিরোধীপক্ষকে হিটলারের মতো দমন করতেন হাসিনা

ট্রাইব্যুনালে মাহমুদুর রহমান
বিরোধীপক্ষকে হিটলারের মতো দমন করতেন হাসিনা

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধীপক্ষকে ফ্যাসিবাদী অ্যাডলফ হিটলারের মতো দমন করতেন বলে জানিয়েছেন আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যার মামলায় হাসিনার বিরুদ্ধে জবানবন্দিতে তিনি এ মন্তব্য করেন। গতকাল সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল সাংবাদিক মাহমুদুর রহমানের জবানবন্দি গ্রহণ করে। মামলার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষীর জবানবন্দি পেশ করেন মাহমুদুর রহমান। তিনি মামলার ৪৬তম সাক্ষী।

ট্রাইব্যুনালে মাহমুদুর রহমান বলেন, হিটলারের জার্মানিতে প্রথমে কমিউনিস্ট, পরে ইহুদিদের গণশত্রু আখ্যায়িত করে তাদের এথনিক ক্লিনজিংয়ের প্রেক্ষাপট তৈরি করা হয়েছিল। বাংলাদেশেও একইভাবে ২০১৩ সালে একটি বিশেষ রাজনৈতিক শ্রেণিকে নির্মূলের লক্ষ্যে জনমত তৈরির জন্য সরকার দিনের পর দিন গণজাগরণ মঞ্চের নামে শাহবাগে বিক্ষোভের আয়োজন করে। সেসময় শাহবাগের কিছু বিক্ষোভকারীর নির্দেশে সরকার পরিচালিত হতে থাকে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা পারিবারিকভাবে সেনাবিদ্বেষী ছিলেন। তিনি ও তার পিতা শেখ মুজিবুর রহমান দুজনেই সেনাবিদ্বেষী ছিলেন। পিলখানায় দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে নির্মমভাবে হত্যা করার পর ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিচার বিভাগের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য প্রথমে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে ক্যান্টমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করেন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পদক্ষেপ নেন।

জবানবন্দিতে মাহমুদুর রহমান বলেন, শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চে আন্দোলনের ফলে আপিল বিভাগ আব্দুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন সাজাকে রেট্রোস্পেকটিভ ইফেক্ট দিয়ে ফাঁসির রায়ে উন্নীত করে। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে চরম অবিচারের উদাহরণ হয়ে থাকবে বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, গণজাগরণ মঞ্চের নির্দেশে সচিবালয় থেকে কর্মকর্তারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার আসামিদের ফাঁসির দাবিতে সমর্থন জানাতে বাধ্য হন। স্বয়ং হাসিনা পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দেন, এরা সবাই দ্বিতীয় মুক্তিযোদ্ধা। আমি মানসিকভাবে সারাক্ষণ শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চেই থাকি। ঢাকায় সফররত ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি বলেন, প্রটোকলে বাধা না হলে আমিও শাহবাগে গিয়ে সংহতি জানাতাম। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয় এই তথাকথিত আন্দোলনে পার্শ্ববর্তী হেজিমনিক ভারতের পূর্ণ সমর্থন ছিল। শাহবাগের এই আন্দোলনের ফলে আপিল বিভাগ আবদুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন সাজাকে রেট্রোস্পেকটিভ ইফেক্ট দিয়ে ফাঁসির রায়ে উন্নীত করে। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে চরম অবিচারের উদাহরণ হয়ে থাকবে।

হাসিনার মামলায় আরো দু-একজনের সাক্ষ্য নেওয়া হবে বললেন চিফ প্রসিকিউটর: গতকাল ৪৬তম সাক্ষী হিসেবে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের সাক্ষ্য নেওয়ার বিরতিতে সাংবাদিকদের সামনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেছেন, ‘শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে চলা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আরো দু-একজন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়া হবে। এর মধ্য দিয়ে এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হবে।’ তিনি বলেন, ‘আরো দু-একজন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের পর আমরা ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য শেষের আবেদন করব। এরপর এই মামলার যুক্তিতর্ক শুরু হবে বলে আশা করি।’

এ মামলায় পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। আর এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে পরে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

উল্লেখ্য, গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনাসহ আসামিদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু হয়। এ মামলায় তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। গত ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত