
সহকারী শিক্ষকদের বেতন ১১তম গ্রেডসহ তিন দফা দাবি আদায়ে তিন দিন ধরে বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মবিরতি পালন করছে সহকারী শিক্ষকদের একাংশ। সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের ব্যানারে ডাকা কর্মবিরতির এ কর্মসূচি গতকাল বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে।
এর মধ্যে ‘আপাতত’ ১১তম গ্রেডের প্রজ্ঞাপন জারিসহ অন্যান্য দাবি বাস্তবায়নে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে লাগাতার কর্মবিরতি শুরু করেছে শিক্ষকদের আরেকটি অংশ। ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের’ ব্যানারে এ কর্মবিরতি শুরু হয়েছে। এই সংগঠনের নেতারা বলছেন, দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত পূর্ণদিবস কর্মবিরতি চলবে। প্রথমে ৩০ নভেম্বর থেকে কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দিয়েছিল অংশটি।
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ একজন নেতা মোহাম্মদ শাসছুদ্দীন সারা দেশে কর্মবিরতি পালনের কথা জানিয়ে বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য অনুযায়ী সহকারী শিক্ষকদের বেতন আপাতত ১১তম গ্রেড করাসহ অন্যান্য দাবি মানলে তারা কর্মবিরতি স্থগিত করবেন। না হয় কর্মবিরতি চলবে। এমনকি আসন্ন বার্ষিক পরীক্ষাও এই কর্মসূচি আওতায় থাকবে।
ঢাকার বাইরে বিভিন্ন এলাকার বিদ্যালয়ে কর্মবিরতি পালনের খবর পাওয়া গেছে। অবশ্য সব বিদ্যালয়েই এই কর্মবিরতি হচ্ছে না। এ প্রতিবেদক আজ বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর মতিঝিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখতে পান শিক্ষার্থীরা মাঠে এদিক-ওদিন দৌড়াদৌড়ি করছে, খেলছে। প্রধান শিক্ষক নূরজাহান হামিদা বলেন, তাদের বিদ্যালয়ে এ শিক্ষাবর্ষের শেষ ক্লাসের দিন। এ জন্য ‘ক্লাস পার্টির’ আয়োজন করা হয়েছে। সেখান থেকে পরে রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকায় অবস্থিত আইডিয়াল মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে কয়েকজন সহকারী শিক্ষকের সঙ্গে কথা হয়। তারাও জানালেন, এ বিদ্যালয়েও আজ ‘ক্লাস পার্টি’। রোববার বার্ষিক পরীক্ষার কাজ (সহশিক্ষা কার্যক্রম) এবং ক্লাস চলবে।
জানা যায়, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মূল বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হবে ১ ডিসেম্বর থেকে। সারা দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ৬৫ হাজার ৫৬৯টি। এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ কোটির বেশি। শিক্ষক রয়েছেন পৌনে ৪ লাখের বেশি। সহকারী শিক্ষকের অনুমোদিত পদ ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২১৬টি, বর্তমানে কর্মরত ৩ লাখ ৫২ হাজার ২০৮ জন। শিক্ষাবর্ষের শেষ পর্যায়ে এসে শিক্ষকদের কর্মবিরতির এ কর্মসূচি বার্ষিক পরীক্ষার ওপর প্রভাব পড়তে পারে।
বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা জাতীয় বেতন স্কেলের ১৩তম গ্রেডে আছেন (শুরুর মূল বেতন ১১ হাজার টাকা)। সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ১০ম করাসহ তিন দফা দাবি জানিয়ে সহকারী শিক্ষকেরা এ মাসের শুরুতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান ও বিদ্যালয়ে কর্মবিরতি শুরু করেছিলেন।
আন্দোলন চলাকালেই অর্থ বিভাগের সচিব এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে বৈঠকের পর আন্দোলনকারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। ওই বৈঠকের পর সরকার থেকে বলা হয়েছিল, সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ১১তম করার বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবটি জাতীয় বেতন কমিশনে পাঠানো হয়েছে, যা বেতন কমিশনের বিবেচনাধীন।
কমিশনের সুপারিশ পাওয়ার পর অর্থ বিভাগ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করবে। আর শিক্ষকদের ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড পাওয়ার জটিলতার বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রস্তাব পাঠালে অর্থ বিভাগ বিষয়টি পর্যালোচনা করবে। এ ছাড়া শিক্ষকদের শতভাগ পদোন্নতির বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিদ্যমান বিধিমালার আলোকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় পদক্ষেপ নেবে। এরপর কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছিলেন শিক্ষকেরা। যদিও এর ভিত্তিতে কর্মসূচি প্রত্যাহার করা নিয়ে শিক্ষকেরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছিলেন। এখন আবার কর্মবিরতি শুরু করছেন শিক্ষকেরা।