ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ৮ পৌষ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

৯০ দিনের মধ্যে হাদি হত্যার বিচার

* হাদির হত্যাকারী কোথায় আছে জানলে তো ধরেই ফেলতাম : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা * বিচারে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি * জড়িতদের গ্রেপ্তার দাবিতে ইনকিলাব মঞ্চের বিক্ষোভ * হাদির কবরে মানুষের ভিড়, চোখে অশ্রু
৯০ দিনের মধ্যে হাদি হত্যার বিচার

শহিদ শরিফ ওসমান হাদি হত্যার বিচার হবে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হবে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। গতকাল সোমবার নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে এই তথ্য জানান তিনি। আসিফ নজরুল তার পোস্টে লেখেন, ‘শহিদ শরিফ ওসমান হাদি হত্যার বিচার হবে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আইন, ২০০২ এর ১০ ধারা অনুযায়ী পুলিশ রিপোর্ট আসার পর সর্বোচ্চ ৯০ দিনের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করা হবে।’ এর আগে, শরিফ ওসমান হাদি হত্যার বিচার প্রক্রিয়া শেষ করতে দ্রুত বিচারিক ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি জানায় ইনকিলাব মঞ্চ। গতকাল সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান সংগঠনের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের। তিনি বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের জন্য একটি দ্রুত বিচারিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক পেশাদার তদন্ত সংস্থার সহায়তা নিতে হবে। কোনো তথাকথিত ‘বন্দুকযুদ্ধ’ নয়- আমরা চাই প্রকাশ্য বিচার।

হাদির হত্যাকারী কোথায় আছে জানলে তো ধরেই ফেলতাম- স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা : ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কাউকে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। হাদির ওপর হামলাকারীর বিষয়ে তিনি বলেন, সে কোথায় আছে, প্রকৃত অবস্থান যদি জানতে পারতাম, তবে তো ধরেই ফেলতাম। তিনি আরও জানান, হাদি হত্যাকাণ্ডের তদন্তে বেশ অগ্রগতি হয়েছে। এ ঘটনার মূলহোতা বৈধ পথে দেশ ছাড়েনি। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে বৈঠক শেষে উপদেষ্টা এসব কথা জানান। উপদেষ্টা বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখসারির যোদ্ধা শরিফ ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে এবং এ ঘটনায় ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণে বদ্ধপরিকর। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত কাউকে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না।

হাদি হত্যার বিচারে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি : শরীফ ওসমান হাদির খুনিদের বিচারে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিচারিক ট্রাইব্যুনাল গঠন এবং আগামী একমাসের মধ্যে বিচার নিশ্চিতসহ তিনদফা দাবি জানিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ। দাবি আদায়ে আজ মঙ্গলবার বিকেল ৩টার দিকে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শহীদি শপথ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন তারা। গতকাল সোমবার তিনদফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল শেষে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের এ কর্মসূচি ঘোষণা দেন। ইনকিলাব মঞ্চের তিনদফা দাবি হলো- ১. দ্রুত বিচারিক ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে বিচারকার্য সম্পন্ন করা। তদন্তের জন্য এফবিআই অথবা স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের মতো পেশাদারী এবং নির্ভরযোগ্য গোয়েন্দা সংস্থাকে যুক্ত করা। ২. সিভিল-মিলিটারি ইন্টেলিজেন্সের মধ্যে ঘাপটি মেরে বসে থাকা আওয়ামী সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার ও বিচারের মুখোমুখি করা। ৩. স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, বিশেষ সহকারী এবং আইন উপদেষ্টাকে জনগণের কাছে তাদের অপারগতার কারণ প্রকাশ করে এই খুনের সব দায় নিয়ে পদত্যাগ করা।

জড়িতদের গ্রেপ্তার দাবিতে ইনকিলাব মঞ্চের বিক্ষোভ মিছিল : ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ইনকিলাব মঞ্চ। গতকাল সোমবার বেলা ৩টা ২০ মিনিটে রাজধানীর শাহবাগ মোড় থেকে এ কর্মসূচি শুরু হয়। মিছিলের আগে পৌনে ৩টা থেকে শাহবাগ মোড়ে এসে বিক্ষোভকারীরা জড়ো হতে শুরু করে। মিছিলে ‘ইনকিলাবের পতাকায়, হাদি তোমায় দেখা যায়’, ‘গোলামী না আজাদী, আজাদী আজাদী’, ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা-ঢাকা’, তুমি কে, আমি কে, হাদি হাদি’ স্লোগান দেন তারা। শাহবাগ থেকে মিছিলটি টিএসসি ঘুরে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। এর আগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে হাদি হত্যার বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের। তিনি বলেছেন, ‘ওসমান হাদির হত্যাকারী কারা, সেটা না জানিয়ে তড়িঘড়ি করে নির্বাচন দিয়ে চলে যাবেন- এটা হবে না। নির্বাচনের আগে বিচার নিশ্চিত করতে হবে, এর আগে কোনো নির্বাচন হবে না’।

দাফনের তৃতীয় দিনেও হাদির কবরে মানুষের ভিড়, চোখে অশ্রু : দাফনের তৃতীয় দিনেও থামেনি শহীদ শরিফ ওসমান হাদির কবর জিয়ারত। গতকাল সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কবরস্থানে ভিড় করছেন সাধারণ মানুষ, সহযোদ্ধা, ছাত্র-জনতা ও শুভানুধ্যায়ীরা। সহযোদ্ধাকে হারানোর শোক এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি তার সহকর্মী ও স্বজনরা। কবরের পাশে দাঁড়িয়ে অনেকে চোখের পানি ফেলছেন, অনেকে মোনাজাত করছেন। গতকাল সোমবার দুপুর ২টায় সরেজমিন দেখা যায়, কেউ মোনাজাত করে, কেউ নীরবে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন হাদিকে। অনেকে মোনাজাতে কাঁদতে কাঁদতে বিলাপ করছেন। অনেকেই বলছেন, হাদি একজন রাজনৈতিক কর্মীর বাইরেও বাংলাদেশপন্থি মানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছিলেন। তার মৃত্যু জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। যশোর থেকে হাদির কবর জিয়ারত করতে এসেছেন আরিফুজ্জামান। সঙ্গে তার ছেলেও। তিনি বলেন, জীবদ্দশায় অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে আপসহীন অবস্থানের কারণেই তিনি মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন। সেই ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ আজও কবরস্থানে মানুষের ঢলে স্পষ্ট।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত