
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন দেওয়া প্রার্থীদের মধ্যে চূড়ান্ত মনোনয়নে ৮ জন প্রার্থীকে পরিবর্তন করেছে বিএনপি। সেই সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গীদের কয়েকটি আসন ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সমঝোতার মাধ্যমে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হককে ঢাকা-১২ আসন ছেড়ে দিয়েছে বিএনপি। এ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরবকে।
চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড ও আকবর শাহ-পাহাড়তলী আংশিক) আসনে বিএনপির ঘোষিত প্রার্থী কাজী সালাউদ্দিনের পরিবর্তে মোহাম্মদ আসলাম চৌধুরীর নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। আসলাম চৌধুরী চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়ে গতকাল শনিবার সকালে সীতাকুণ্ডের নিজ বাড়িতে স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। তিনি বলেন, দল আমার ওপর যে আস্থা রেখেছে, তা আপনাদের ত্যাগের ফসল। এদিকে চট্টগ্রাম-১০ আসনে মনোনয়ন পেয়েছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। বর্তমানে তাকে চট্টগ্রাম-১১ আসনে প্রার্থী করা হয়েছে। গত ৩ নভেম্বর প্রাথমিক মনোনয়ন ঘোষণা পর্বে এ আসনটি ফাঁকা রেখেছিল বিএনপি। অন্যদিকে চট্টগ্রাম-১০ আসনে এখন দলটির প্রার্থী করা হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী পাট শ্রমিক দলের সভাপতি সাইদ আল নোমানকে। তিনি বিএনপির প্রয়াত ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের ছেলে।
যশোরের ছয়টি আসনের মধ্যে চারটিতেই প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন দেওয়া প্রার্থী পরিবর্তন করেছে বিএনপি। যশোর-১ (শার্শা) আসনে বিএনপি প্রথমে মনোনয়ন দেয় দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তিকে। পরিবর্তন করে সেখানে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে শার্শা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান লিটনকে।
যশোর-৪ (বাঘারপাড়া, অভয়নগর উপজেলা ও বসুন্দিয়া ইউনিয়ন) আসনে প্রথমে মনোনয়ন পান দলের কেন্দ্রীয় নেতা ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ূব। নতুন করে পেয়েছেন দলের অভয়নগর উপজেলা কমিটির সভাপতি মতিয়ার রহমান ফারাজী।
যশোর-৫ (মণিরামপুর) আসনে প্রাথমিকভাবে দলীয় মনোনয়ন পান দলের উপজেলা কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট শহিদ ইকবাল হোসেন। পরে জোটের শরিক জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের (একাংশ) সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মুফতি রশীদ বিন ওয়াক্কাসকে মনোনয়নপত্র দেওয়া হয়।
যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে মনোনয়ন পেয়েছিলেন দলের কেন্দ্রীয় সদস্য, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ। কিন্তু তাকে পরিবর্তন করে দলের কেন্দ্রীয় সদস্য ও উপজেলা কমিটির সভাপতি আবুল হোসেন আজাদকে মনোনয়ন দেয় দলটি।
পিরোজপুর-১ (নাজিরপুর, পিরোজপুর সদর ও জিয়ানগর) আসনের চূড়ান্ত মনোনয়ন পেলেন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেন। গতকাল শনিবার বিকালে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত মনোনয়নপত্র দেওয়া হয়। এর আগে বিএনপি জোটভুক্ত জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান সাবকে মন্ত্রী মোস্তফা জামাল হায়দারকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। এ নিয়ে বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তা ছাড়া মোস্তফা জামাল হায়দার প্রবীণ ও তার শারীরিক অসুস্থতার কারণে মনোনয়ন পরিবর্তন করে বিএনপির দলীয় প্রার্থীকে দেওয়া হয়েছে।
ধানের শীষে ভোট করতে দল ছাড়লেন যারা : রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনি জোট গঠনে সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বা আরপিও বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে। বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা মিত্র এবং নির্বাচনি জোট করতে চাওয়া দলগুলোর ক্ষেত্রে এ প্রভাব এরইমধ্যে সামনে এসেছে। নতুন আরপিও অনুযায়ী জোট করলেও নিবন্ধিত দল হিসেবে প্রার্থীকে নিজেদের প্রতীকেই নির্বাচন করতে হবে। এতে বিএনপির সঙ্গে জোট করেও ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করার সুযোগ না থাকায় দুইটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা নিজ দল বিলুপ্ত করে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগ দিয়ে প্রার্থিতা নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) থেকে বেরিয়ে বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন দলটির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমদ। তিনি ধানের শীষ প্রতীকে কুমিল্লা-৭ আসন থেকে নির্বাচন করবেন। গত ১ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগ দেন সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এমএস কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া। এরপরই হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি। গতকাল শনিবার গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের পদ ছেড়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন রাশেদ খান। ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ ও সদরের আংশিক) আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে খান ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করবেন তিনি।
গত ৮ ডিসেম্বর ১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা ও বিএলডিপি চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম নিজের দল বিলুপ্ত ঘোষণা করে বিএনপিতে যোগ দেন। এরপর তাকে লক্ষ্মীপুর-১ আসন থেকে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করে বিএনপি।
২০১৮ সালের নির্বাচনেও তিনি এলডিপির হয়ে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেছিলেন। তবে দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে যোগদানের বিষয়টিকে মানতে পারেননি তার দলেরই কয়েক নেতাকর্মী। তারা পৃথক সংবাদ সম্মেলন করে শাহাদাত হোসেন সেলিমের ওই সিদ্ধান্তকে বেআইনি ঘোষণা করেছেন।
সমমনা ১২ দলীয় জোটের আরেক শীর্ষ নেতা জোটের মুখপাত্র ও জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা কিশোরগঞ্জ-৫ আসন থেকে নির্বাচন করবেন। বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের পরামর্শে ২২ ডিসেম্বর জাতীয় দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে যোগদান করেন সৈয়দ এহসানুল হুদা। গত বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বিএনপিতে যোগ দিয়ে ঢাকা-১৩ আসনে প্রার্থী হবেন। তিনি জানান, নড়াইল-২ আসনে প্রার্থী হবেন ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ। এনপিপি নিবন্ধিত না হওয়ায় তিনি বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করবেন। তবে এখন পর্যন্ত তারা আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগ দেননি। আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে বিএনপির মিত্র দল হিসেবে গণতন্ত্র মঞ্চ জোট, ১২ দলীয় জোট, ১১ দলীয় জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, বিজেপি, গণঅধিকার পরিষদ, এনডিএম, চারদলীয় বাম জোট, লেবার পার্টিসহ প্রায় ৫৭টি দল ও জোট ছিল। এ দলগুলো মিলে মোট ২২২টি আসনের দাবি করেছিল বিএনপির কাছে।