ঢাকা রোববার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩ পৌষ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

মাঠে হার্ট অ্যাটাক, বাঁচানো গেল না ঢাকার কোচকে

মাঠে হার্ট অ্যাটাক, বাঁচানো গেল না ঢাকার কোচকে

মাত্র একদিন আগে মাঠে গড়িয়েছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) দ্বাদশ আসর। এ নিয়ে সিলেটে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। সে উৎসবের মাঝেই নেমে এল শোকের ছায়া। গতকাল শনিবার সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় মাঠে এসেছিলেন ঢাকা ক্যাপিটালসের সহকারী কোচ মাহবুব আলী জ্যাকি। নিয়ম মেনে নেমেছিলেন ওয়ার্মআপেও। কিন্তু ম্যাচ শুরুর ঠিক আগমুহূর্তে আকস্মিকভাবেই মাঠে লুটিয়ে পড়েন ৬৪ বছর বয়সী এই অভিজ্ঞ কোচ। তাৎক্ষণিকভাবে সিপিআর (প্রাথমিক চিকিৎসা) দিয়ে হাসপাতালে নেওয়া হলেও শেষ রক্ষা হয়নি। প্রিয় কোচের এমন আকস্মিক বিদায়ে স্তম্ভিত ক্রিকেট অঙ্গন; বিশেষ করে তার শিষ্য পেসার শরিফুল ইসলাম যেন বিশ্বাসই করতে পারছেন না এই দুঃসংবাদ।

শনিবার চলতি আসরের দ্বিতীয় দিনের প্রথম মাচে মুখোমুখি হয়েছে রাজশাহী ওয়ারিয়র্স ও ঢাকা ক্যাপিটালস। এবারের বিপিএলে ঢাকার সহকারী কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন জ্যাকি। ম্যাচ শুরুর আগে ঢাকার ওয়ার্মআপ চলাকালীন ঘটে এই হৃদয়বিদারক ঘটনা। মাঠে লুটিয়ে পড়লে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সন্দেহে তাকে সিপিআর দেওয়া হয়। দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৯ বছর। সহকারী কোচের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে ক্রিকেটারদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। এবার চট্টগ্রাম রয়্যালসের হয়ে খেলছেন শরিফুল ইসলাম। বয়সভিওিক পর্যায় থেকেই তিনি জ্যাকির সান্নিধ্য পেয়েছেন। উল্লেখ্য, ২০২০ সালে বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের কোচিং স্টাফের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন মাহবুব আলী জ্যাকি।

প্রিয় গুরুর এমন প্রয়াণ মেনে নিতে না পেরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক আবেগঘন পোস্টে শরিফুল লেখেন, ‘খবরটা শুনে এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না-আপনি আর আমাদের মাঝে নেই মাহবুব আলী জ্যাকি স্যার। অনূর্ধ্ব-১৯ সময় থেকে আপনার হাত ধরেই আমাদের শেখা শুরু, এরপর বিশ্বকাপ জয়—প্রতিটি মুহূর্তে আপনি পাশে ছিলেন অভিভাবকের মতো। গত পরশু দিনও প্র্যাকটিসে আমরা কত হাসি-আড্ডা করেছি, ভাবতেই বুকটা ভার হয়ে আসে। আল্লাহ তাআলা আপনাকে জান্নাতুল ফেরদৌসের সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করুন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারকে এই কঠিন সময়ে ধৈর্য ধারণের তৌফিক দিন। আমিন।’

জ্যাকির প্রয়ানে শোন জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। ঘরোয়া ক্রিকেটের ক্যারিয়ার শেষ করার পর ২০০৮ সালে বিসিবির হাই পারফরম্যান্স ইউনিটের কোচ হিসেবে যোগ দেন তিনি। কাজ করেছেন বিসিবির নানান স্তরে। বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল তার বক্তব্যে কোচ জাকির জন্য প্রাণ খুলে দোয়া করতে বলেছেন। অনেকের প্রিয় জাকি সশরীরে না থাকলেও থাকবেন শিষ্যদের মনের মাঝে। মাঠের মানুষ জাকি বিদায় নিলেন মাঠ থেকেই।

পেস বোলিং কোচ হিসেবে জাকি নিজের আলাদা পরিচিতি তিনি গড়েছেন। তাসকিন আহমেদের অ্যাকশনের সমস্যা শোধরানো থেকে শুরু করে দেশের অনেক পেসারের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি নিবিড়ভাবে। দেশের অনেক পেসারের ‘মেন্টর’ ছিলেন তিনি। ২০২০ যুব বিশ্বকাপজয়ী দলেও তিনি ছিলেন সহকারী কোচ। খেলোয়াড়ি জীবনে মাহবুব ছিলেন পেসার। জাতীয় দলে খেলতে না পারলেও জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে খেলেছেন কুমিল্লা জেলার হয়ে। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে খেলেছেন আবাহনী, ধানমন্ডির মতো ক্লাবে। খেলা ছাড়ার পর তিনি নাম লেখান কোচিংয়ে। বিসিবির সঙ্গে তার সম্পর্কের শুরু ২০০৮ সালে হাই পারফরম্যান্স কোচ হিসেবে। ক্রমে তিনি হয়ে ওঠেন দেশের প্রধান পেস বোলিং কোচদের একজন। মিরপুর একাডেমি মাঠে, ইনডোরে বা নেটে তাকে নিয়মিতই দেখা যেত সব পর্যায়ের পেসারদের নিয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করতে। মাঠের মানুষ বিদায় নিলেন মাঠ থেকেই। সিলেটের এই স্টেডিয়ামেই জাকির জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত