সারাদিন দুর্বল লাগার মতো বাজে বিষয় আর হয় না। বিশেষ করে যখন অনেক কাজ থাকে। অলস দুপুরে আসলেই যখন আলসেমি জেঁকে বসে তখন এক মগ কফি বা চা নিয়ে হয়তে দেহকে চাঙা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ‘তবে জেনে রাখুন এই পানীয়গুলো দেহে ‘এনার্জি’ ফিরিয়ে আনার একমাত্র অবলম্বন নয়’- রিয়েলসিম্পল ডটকময়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে মন্তব্য করেন মার্কিন পুষ্টিবিদ ও ‘নিউট্রিশন উইথ ম্যাডি’র প্রতিষ্ঠাতা ম্যাডি প্যাসকুয়েরিলো। সঠিক খাবার নির্বাচন করতে পারলে, দেহের জ্বালানি হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি ক্ষুধাও মিটবে।
শক্তির ওপর পুষ্টি উপাদান যেভাবে কাজ করে : প্যাসকুয়েরিলো বলেন, ‘যে কোনো খাবার বা পানীয়র ক্যালরি দেহে জ্বালানি হিসেবে কাজ করে। সেই জ্বালানি কার্যকরভাবে খরচের ক্ষেত্রে দেহ নির্ভর করে কী ধরনের খাবার খাওয়া হচ্ছে, পুষ্টিগুণ ও আঁশের পাশাপাশি ক্যালরির পরিমাণ কেমন।’ ‘ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্টস’ হল এমন পুষ্টিগুণ যা দেহকে শক্তি যোগায়। এগুলোর মধ্যে আছে- কার্বোহাইড্রেইটস, প্রোটিন এবং চর্বি। ‘আর এগুলো আমাদের বেশি পরিমাণে প্রয়োজন হয়’ বলেন প্যাসকুয়েরিলো। তিনি আরও বলেন, ‘কার্বা বা কার্বোহাইড্রেইটস হল দেহের জ্বালানির প্রধান উৎস। এগুলো বেশিরভাগই দ্রুত বিপাক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।’ আবার প্রোটিন এবং চর্বিতেও রয়েছে ক্যালরি। তাই এগুলোও কিছু শক্তি প্রদান করে। পাশাপাশি এই তিন ‘ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্টস’ তৃপ্তিবোধ বাড়িয়ে খিদার অনুভূতি কমায়। আর এই ধরনের খাবারেই মিলবে দুপুরের আলসেমি কাটানোর ওষুধ।
ওটস : ‘শক্তিবর্ধক এই খাবার সকালে, ব্যায়ামের আগে বা পরের খাবার হিসেবে আদর্শ’ বলেন প্যাসকুয়েরিলো। কারণ এতে রয়েছে জটিল কার্বোহাইড্রেইটস, যা ধীর হজম হয়। শক্তির স্থির উৎস হিসেবে কাজ করে। আরও রয়েছে দ্রবণীয় আঁশ। যা কোলেস্টেরল কম রাখতে সাহায্য করে। ‘পাশাপাশি মিলবে ভিটামিনস, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস’- একই প্রতিবেদনে বলেন, ‘দি ওহিও স্টেট ইউনিভার্সিটি ওয়েক্সনার মেডিকেল সেন্টারের পুষ্টিবিদ ডিনা চ্যাম্পিয়ন। অন্যান্য শক্তিবর্ধক খাবার যেমন- বাদাম, প্রোটিন পাউডার কিংবা ফল দিয়ে মিশিয়ে খেলে উপকার হবে বেশি।
কলা : সবচেয়ে বেশি কার্ব সমৃদ্ধ ফল, এবং সহজ শক্তির উৎস। আর দামও সস্তা। প্যাসকুয়েরিলো বলেন, ‘পুষ্টিগুণে ভরপুর এই ফলে মিলবে প্রয়োজনীয় খনিজ পটাসিয়াম।’ বাদামের মাখনের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যায়, যা আরেকটি শক্তিবর্ধক খাবার। একসঙ্গে প্রোটিন ও চর্বি গ্রহণের চমৎকার উৎস এই দুই খাবার।
পানি : যদিও সাধারণ পানিতে কোনো পুষ্টিগুণ নেই। তবে দেহের কাজ স্বাভাবিকভাবে পরিচালিত হওয়ার জন্য পানির প্রয়োজন রয়েছে। আর দেহ স্বাভাবিকভাবে কাজ করলে শক্তির মাত্রাও ঠিক থাকবে। ‘প্রস্রাব, ঘাম, নিঃশ্বাসের মাধ্যমে দেহ থেকে তরল বের হয়ে যায়। এই অবস্থায় পর্যাপ্ত পানি পান না করলে, দেহ ক্লান্ত লাগবেই’- ব্যাখ্যা করেন প্যাসকুয়েরিলো। তিনি আরও বলেন, ‘সাধারণ নিয়ম হল পাউন্ড হিসেবে দেহের ওজনের অর্ধেকের পরিমাণ আউন্স পানি পান করতে হবে। মানে একজনে ওজন যদি ১৫০ পাউন্ড হয় তবে তাকে দৈনিক ৭৫ আউন্স পানি পান করতে হবে।’ তবে এটা সাধারণ নিয়ম। কর্মকাণ্ড, আবহাওয়া, কোনো ওষুধ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, দেহগত বিষয়- ইত্যাদির ওপর পানি গ্রহণের পরিমাণ কমানো বা বাড়াতে হতে পারে।
বাদামের মাখন : ভালো মতো শক্তি বাড়াতে চাইলে, বাদামের মাখন বেছে নেওয়া হবে বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ এতে একই সঙ্গে মিলবে ক্যালরি, কার্বোহাইড্রেইটস, আঁশ, প্রোটিন এবং চর্বি।
এগুলো সবই শক্তি যোগায় আর তৃপ্তিবোধ বাড়িয়ে খিদার পরিমাণ কমায়। পিনাট বাটার বা চিনাবাদামের মাখনে রয়েছে ভিটামিন বি-সিক্স এবং ম্যাগনেসিয়াম। কাঠবাদামের মাখন থেকে মিলবে অল্প ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং লৌহ। আর এই মাখন পূর্ণশষ্য থেকে তৈরি রুটি ও বিভিন্ন ফল সহকারে খেলে আলসেমি কাটিয়ে দেহ হবে ঝরঝলে পরামর্শ দেন চ্যাম্পিয়ন।
ডিম : যদিও ডিমে কার্বয়ের পরিমাণ কম তারপরও শক্তির বৃদ্ধিতে এই খাবার দারুণ উপকারী। প্যাসকুয়েরিলো বলেন, ‘ডিমে রয়েছে উচ্চমাত্রায় প্রোটিন ও চর্বি। যা দেহে অনেকক্ষণ ধরে ভাঙে।