অস্ট্রেলিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে ঘর ছেড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। টানা বর্ষণের কারণে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় বহু ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ডুবে গেছে। জানা গেছে, গত শুক্রবার থেকে কুইন্সল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলের বিশাল এলাকা পানির নিচে রয়েছে। বন্যায় ইনঘ্যাম শহর ও কাছাকাছি টাউনসভিল শহর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নিচু উপকূলীয় এলাকায় বসবাসকারী মানুষদের দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কুইন্সল্যান্ডের প্রধান ডেভিড ক্রিসাফুলি গত রোববার নিশ্চিত করেছেন, ইনঘ্যামে বন্যার কারণে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। সিএনএনের সহযোগী গণমাধ্যম নাইন নিউজ জানিয়েছে, গত রোববার সকালে উদ্ধারকারী নৌকায় করে যাওয়ার সময় একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে নৌকাটি উল্টে গেলে ওই নারী পানিতে ডুবে মারা যান। নৌকায় মোট ছয়জন আরোহী ছিলেন, তবে বাকি পাঁচজনকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ এই ঘটনাকে ‘হৃদয়বিদারক’ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ লিখেছেন, এই কঠিন সময়ে নিহত নারীর পরিবার ও পুরো সম্প্রদায়ের প্রতি আমার সমবেদনা রয়েছে। আলবানিজ আরো জানিয়েছেন, এই দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা দেবে কেন্দ্রীয় সরকার। গত রোববার টাউনসভিলের ব্লুওয়াটার এলাকায় জরুরি সতর্কতা জারি করা হয়েছে। স্থানীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ওই এলাকায় জীবনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। পানি দ্রুত বাড়ছে এবং পরিস্থিতি দ্রুত বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। টাউনসভিলের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা, যা ‘ব্ল্যাক জোন’ নামে পরিচিত, সেখানে দুপুরের মধ্যে বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। এরই মধ্যে শহরজুড়ে কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। কুইন্সল্যান্ডের পরিবেশ, বিজ্ঞান ও উদ্ভাবন বিভাগ সতর্ক করেছে, বন্যার পানিতে কুমিরের উপস্থিতি থাকতে পারে। এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, বন্যার সময় কুমির তুলনামূলক শান্ত পানির খোঁজে নতুন এলাকায় চলে আসতে পারে। তাই সতর্কতা না থাকলেও উত্তর ও দূরপ্রাচ্যের কুইন্সল্যান্ডের সব জলাশয়ে কুমির থাকার আশঙ্কা বিবেচনায় রাখতে হবে। প্রায় দুই লাখ বাসিন্দার শহর টাউনসভিল ২০১৯ সালে এক ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছিল, যা তখনকার রাজ্য সরকার এক ‘শতাব্দীর মধ্যে একবার ঘটে এমন দুর্যোগ’ হিসেবে অভিহিত করেছিল। ক্রিসাফুলি সতর্ক করে বলেছেন, এবারের বৃষ্টিপাতও ২০১৯ সালের মতো বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে। তিনি বলেন, সতর্কতা অবলম্বন করুন, সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকুন এবং নির্দেশনা মেনে চলুন। এটি একটি গুরুতর দুর্যোগ। অস্ট্রেলিয়ার আবহাওয়া ব্যুরো জানিয়েছে, দুটি ক্রান্তীয় নিম্নচাপের কারণে টানা ভারী বৃষ্টিপাত ও প্রবল বাতাসের সৃষ্টি হয়েছে। কিছু এলাকায় মাত্র ২৪ ঘণ্টায় ৬০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।