ইসরায়েলিরা গত শুক্রবার থেকে দিন রাতের বেশির ভাগ সময় ভূগর্ভস্থ আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় (বাংকার) অবস্থান করছেন। ইরানের বিরুদ্ধে তেল আবিব প্রশাসন আগ্রাসী হামলা শুরু করার পর তেহরানও ইসরায়েলে প্রতিশোধমূলক পাল্টা হামলা চালাচ্ছে। এমন পাল্টাপাল্টি হামলায় ইসরায়েলে স্বাভাবিক জনজীবন কার্যত থমকে গেছে।
ইরানের হামলার আশঙ্কায় ইসরায়েলজুড়ে নিয়মিত সাইরেন বাজছে মানুষ আতঙ্কে ছুটছেন ভূগর্ভের আশ্রয়কেন্দ্রে। আকাশপথে সম্ভাব্য হামলার বিষয়ে সতর্ক করতেই এসব সাইরেন বাজানো হচ্ছে। ইরান পাঁচ দিন ধরে হামলা অব্যাহত রাখায় ইসরায়েলিদের বারবার আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে হচ্ছে। অনেকে বারবার এ ছুটোছুটির ভোগান্তি এড়াতে রাতেও বাংকারেই অবস্থান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ইরানের সশস্ত্র বাহিনী আগেই বেসামরিক ইসরায়েলিদের সতর্ক করে বলেছিল, তাঁরা যেন দখলীকৃত ভূখণ্ড (ইসরায়েল) পুরোপুরি ত্যাগ করেন, ইরানের বিরুদ্ধে আগ্রাসী হামলা চলাকালে বাংকারগুলো তাঁদের রক্ষা করতে পারবে—এমন আশা যেন না করেন তাঁরা কিন্তু ইরানের শক্তিশালী ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের বিরুদ্ধে বাংকারগুলো ইসরায়েলিদের সম্পূর্ণ সুরক্ষা দিতে পারছে কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। ফলে ভূগর্ভস্থ আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নেওয়ার পরও আতঙ্কে দিন পার করছেন ইসরায়েলিরা।
মুঠোফোনে ইসরায়েলিদের ধারণ করা ভিডিওতে ইরানের হামলার পর বাংকারের ভেতর আতঙ্ক ও বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হওয়ার চিত্র উঠে এসেছে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, শক্তপোক্ত দেয়াল ও ছাদ ইসরায়েলিদের মাথার ওপর ধসে পড়েছে। আতঙ্কিত ও অবিশ্বাসে হতবাক লোকজন সাহায্যের জন্য দিগ্?বিদিক ছুটছেন। ইরানের সশস্ত্র বাহিনী আগেই বেসামরিক ইসরায়েলিদের সতর্ক করে বলেছিল, তাঁরা যেন দখলীকৃত ভূখণ্ড (ইসরায়েল) পুরোপুরি ত্যাগ করে, ইরানের বিরুদ্ধে আগ্রাসী হামলা চলাকালে বাংকারগুলো তাঁদের রক্ষা করতে পারবে—এমন আশা যেন না করেন তাঁরা।
গত রোববার ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র কর্নেল রেজা সাইয়াদ বলেছেন, ‘দখলীকৃত অঞ্চল ত্যাগ করুন এবং অপরাধী প্রশাসনকে (ইসরায়েলের নেতানিয়াহু সরকার) আপনাদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে দেবেন না।’ তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, বাংকার সেখানে আশ্রয় নেওয়া ইসরায়েলিদের পূর্ণ সুরক্ষা দিতে পারবে না। কোনো উসকানি ছাড়াই ইসরায়েলি প্রশাসন গত শুক্রবার রাতের আঁধারে ইরানে হামলা চালায়।
এ হামলার লক্ষ্য ছিল আবাসিক ভবনসহ সামরিক বিভিন্ন স্থাপনা। হামলায় ইরানের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। আর বাড়িঘর লক্ষ্য করে হামলার ফলে বেসামরিক নাগরিকদেরও প্রাণহানি হয়েছে। আক্রান্ত হওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই ইরান প্রতিশোধমূলক পাল্টা হামলা শুরু করেছে। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র তেল আবিব, হাইফাসহ ইসরায়েলের একেবারে ভেতরে বিভিন্ন স্থানে আঘাত হেনেছে। এদিকে বিবিসির খবরে বলা হয়, ইরান ইসরায়েলের দিকে আরও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এ হামলার কথা জানিয়েছে। ইরান পাঁচ দিন ধরে হামলা অব্যাহত রাখায় ইসরায়েলিদের বারবার আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে হচ্ছে। অনেকে বারবার এ ছুটোছুটির ভোগান্তি এড়াতে রাতেও বাংকারেই অবস্থান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আইডিএফ বলছে, ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে জরুরি সতর্কসংকেত হিসেবে সাইরেনের শব্দ শোনা যাচ্ছে। সেখানকার বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বলা হয়েছে। আল-জাজিরার খবর বলছে, বন্দর নগরী হাইফাতেও সাইরেন বাজতে শোনা গেছে। সেখানে চার দিনে বেশ কয়েকবার হামলা চালিয়েছে ইরান। এতে তিনজন নিহত হয়েছেন। হাইফার তেল পরিশোধনাগার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে তেল আবিব শহরের বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি)। দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ‘নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে তেল আবিবের নাগরিকদের অবিলম্বে এলাকা ছাড়তে হবে।’ ইরান এ পর্যন্ত প্রায় ৩৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েল। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় এখন পর্যন্ত ২৪ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর হোম ফ্রন্ট কমান্ড। তারা বলেছে, নিহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলেন না। আল-জাজিরার খবরে বলা হয়, ইসরায়েল দাবি করেছে, গত কয়েক দিনে ইরান প্রায় ৩৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে।
ইরানের একেকবারের হামলায় ছিল ৩০ থেকে ৬০টি ক্ষেপণাস্ত্র। তবে ইরান বলেছে, এখন পর্যন্ত প্রায় ১০০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে তারা। ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় চালানো ইসরায়েলি হামলার জবাবে আরও প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছে তেহরান।