ঢাকা শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

গাজায় বৃদ্ধরা যেন জীবন্ত কঙ্কাল

গাজায় বৃদ্ধরা যেন জীবন্ত কঙ্কাল

রিয়াদ আল-গাজালি। যুদ্ধের আগে তার ওজন ছিল ৭৮ কেজি। খাবারের অভাবে সেই ওজন কমে মাত্র ৪২ কেজিতে দাঁড়িয়েছে। পর্যাপ্ত খাবার নেই। কোনো কিছু কেনার মতো সামর্থ্যও নেই। রিয়াদ আল-জাজিরাকে বলেছেন, ‘আমি প্রতিদিন অর্ধেক রুটি খাই। কারণ এর বেশি আমাদের কাছে নেই। কখনো কখনও শুধু লবণ খেয়ে থাকি।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘আগে আমার হাত মাংসে ভরপুর ও শক্তিশালী ছিল। এখন সেগুলো কেবল চামড়া আর হাড়।’ শুধু রিয়াদই নন, ক্ষুধার কারণে চরম দুর্দশার মুখে পড়েছেন গাজার বৃদ্ধরা। শুকিয়ে দিন দিন কঙ্কালসার হচ্ছেন তারা। ‘জীবন্ত কঙ্কাল’ হয়েই কোনোরকমে নিঃশ্বাস নিচ্ছেন যুদ্ধবিধ্বস্ত উপত্যকাটিতে। আলজাজিরা, এএফপি। রিয়াদের স্ত্রী নাদিয়া আবু শাবান বলেছেন, ‘কখনও কখনও রাতের খাবার ছাড়াই আমরা ঘুমাই। আমাদের কাছে সত্যিই খাবার নেই।’

এদিকে গাজার বৃদ্ধাশ্রমগুলোতেও বয়স্কদের সেবা করার সুযোগ কমে গেছে। একটি বৃদ্ধাশ্রমের পরিচালক আশরাফ হামাদা আলজাজিরাকে বলেছেন, ‘গত কয়েক মাসে আমরা ক্ষুধা ও অনাহারের কারণে পাঁচজন বৃদ্ধকে হারিয়েছি। আমাদের কাছে কোনো মৌলিক জিনিসপত্র নেই। বাজারে বা দাতব্য রান্নাঘরেও কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না।’ ক্ষুধায় ভুগছে গাজার শিশুরাও। বুধবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এক বিশেষ বৈঠকে সেভ দ্য চিলড্রেনের প্রধান ইঙ্গার অ্যাশিং গাজায় দুর্ভিক্ষের হৃদয়বিদারক বর্ণনা দিয়ে বলেছেন, ‘এই দুর্ভিক্ষ কেবল একটি প্রযুক্তিগত শব্দ নয়। এটি শিশুদের ধীরে ধীরে যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যুর দিকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে। তারা এতটাই দুর্বল যে কান্নাও করতে পারে না।’

ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে বুধবার পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ২ জন শিশু। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে মোট মৃত্যু হয়েছে ৩১৭ জনের। এদের মধ্যে ১২১ জনই শিশু। গত ২২ আগস্ট গাজার গাজা সিটি ও আশপাশের অঞ্চলে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করেছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘ সমর্থিত সংস্থা ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন ইনিশিয়েটিভ জানিয়েছে, গাজা গভর্নরেটে বর্তমানে অন্তত ৫ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষে ভুগছেন। যা গাজার প্রায় এক-পঞ্চমাংশ এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে আছে। সংস্থাটি পূর্বাভাস দিয়েছে, যদি পরিস্থিতির উন্নতি না হয়, তবে সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ গাজার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ এলাকায় দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়বে।

গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থার প্রধান সিন্ডি ম্যাককেইন সতর্ক করে বলেছেন, ক্ষুধার কারণে গাজা মানুষের জীবন ভয়াবহ সংকটে। জরুরি ভিত্তিতে উপত্যকাটিতে ২০০টি খাদ্য বিতরণকেন্দ্র আবার চালু করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। আশ্রয় সংকটেও ভুগছেন গাজার বাসিন্দারা। জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতদের জন্য নতুন তাঁবু স্থাপনের জন্য শহরে একটিও ‘জায়গা’ অবশিষ্ট নেই বলে জানিয়েছেন মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহর মেয়র নিজার আইয়াশ। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি অব্যাহত থাকলে দেইর আল-বালাহে মানবিক পরিস্থিতি আরও বিপর্যয়কর হতে পারে। এদিকে সংঘাত কমাতে ইসরায়েল ও হামাসের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) আহ্বান জানিয়েছে সুইডেন এবং নেদারল্যান্ডস। উল্লেখ্য, ২০২৩ সাল থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৬২ হাজার ৯৬৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ১ লাখ ৫৯ হাজার ২৬৬ জন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত