ইসলামের প্রথম যুগের প্রতিটি ঘটনা সাহাবিদের ঈমান, সাহস এবং আত্মত্যাগের উজ্জ্বল নিদর্শন। বদর যুদ্ধে কিশোর সাহাবি মুআজ ইবনে আমর (রা.) এবং মুআজ ইবনে আফরা (রা.)-এর বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা ইতিহাসের পাতায় চিরস্মরণীয়। ইসলামের চরম শত্রু আবু জাহেলকে হত্যার মাধ্যমে তারা প্রমাণ করেছিলেন যে, সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য বয়স নয়, বরং ঈমানের গভীরতা এবং দৃঢ় মনোবলই মূলশক্তি। আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, আমি বদরের দিন যুদ্ধ সারিতে অবস্থান করছিলাম। এমন সময় আমি আমার ডান ও বাম দিকে তাকিয়ে দেখি যে, আমি দুজন আনসারি তরুণের মাঝে আছি। আমি তখন আশা করেছিলাম, যদি আমি দুজন শক্তিশালী যুবকের মাঝে থাকতাম। এমন সময় তাদের একজন আমাকে ইঙ্গিতে বলল, হে চাচা! আপনি কি আবু জাহেলকে চিনেন? আমি বললাম, হ্যাঁ। তবে তাকে দিয়ে তোমার কী প্রয়োজন হে ভ্রাতুষ্পুত্র? সে বলল,আমি সংবাদ জেনেছি, সে রাসুলুল্লাহ (সা.) কে গালাগালি করে। সেই আল্লাহর শপথ! যার হাতে আমার জীবন, যদি আমি তাকে দেখতে পাই তবে অবশ্যই আমার দেহ তার দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হবে না- যতক্ষণ না আমাদের দুজনের মধ্যে যার মৃত্যু পূর্বে হওয়া অবধারিত তার মৃত্যু হয়। বর্ণনাকারী বলেন, কিশোরের এই কথা শুনে আমি আশ্চর্যান্বিত হলাম। তারপর অপর কিশোর আমার দিকে ইঙ্গিত করে অনুরূপ কথা বলল। পরে বেশি সময় অতিবাহিত হয়নি, হঠাৎ আমি দেখলাম আবু জাহেল লোকদের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে, আমি তখন কিশোর দুজনকে বললাম, এই সেই ব্যক্তি, যার সম্পর্কে তোমরা জিজ্ঞেস করেছ।
তারা উভয়ে দৌড়ে গিয়ে তাদের তলোয়ার দ্বারা তাকে আঘাত করলো এবং হত্যা করে ফেলল। অতঃপর উভয়েই ফিরে এসে রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে এ ঘটনার সংবাদ দিল। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমাদের মধ্য থেকে কে হত্যা করেছে ? তাদের প্রত্যেকেই বলল, আমি তাকে হত্যা করেছি। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমাদের তলোয়ার কি মুছে ফেলেছ? তারা তখন বললো, না। তখন তিনি (উভয়ের তলোয়ার (পরীক্ষা করে) দেখলেন। তারপর বললেন, তোমরা উভয়েই তাকে হত্যা করেছ। অতএব, তিনি মুআজ ইবনে আমর ইবনে জামুহকে সালাব প্রদানের নির্দেশ দেন। (আর সেই দুই ব্যক্তি হলেন- মুআজ ইবনে আমর ইবনে জামুহ এবং মুআজ ইবনে আফরা (রা.)। (মুসলিম : ৪৪১৭)।