ঢাকা মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ধর্মীয় শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা

মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ
ধর্মীয় শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা

মহান আল্লাহতায়ালা মানবজাতিকে জ্ঞানার্জনের যোগ্যতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। এর মাধ্যমে মানুষ যেমন তার পার্থিব প্রয়োজন পূরণের উত্তম পন্থা আবিষ্কার করতে পারে, তেমনি আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টি, ন্যায়-অন্যায়বোধ এবং পরকালের সফলতাণ্ডব্যর্থতার জ্ঞানও অর্জন করতে পারে। মানুষ ছাড়া অন্যান্য প্রাণির এ যোগ্যতা নেই। শিক্ষার মাধ্যমে অজানাকে জানার এবং জানা বিষয়কে কাজে লাগিয়ে অজানার সন্ধান করার যোগ্যতা একমাত্র মানুষেরই আছে। তাই ইসলামে শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। রাসুল (সা.)-এর ওপর হেরা গুহায় সর্বপ্রথম অহি অবতীর্ণ হয়, ‘পড়ো, তোমার পালনকর্তার নামে; যিনি সৃষ্টি করেছেন।’ (সুরা আলাক : ১)।

ধর্মীয় শিক্ষার শ্রেষ্ঠত্ব : আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টিগতভাবে জাগতিক বিষয়ের প্রতি মোহ ও কামনা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। ফলে দুনিয়ার কোনো কাজ করার কথা বলে দিতে হয় না। জাগতিক চাহিদাই তাকে দুনিয়ার কাজ করতে ও শিখতে আগ্রহী করে। তাই দুনিয়ার নগদ চাকচিক্যের প্রতি মানুষ লালায়িত। চোখের সামনে দেখা লাভের প্রতি ঝুঁকে পড়ে। বিপরীতে পরকাল, দ্বীনি ইলম ও পরকালের পুরস্কার ইত্যাদি বাকি হওয়ায় অল্প মানুষই এগুলোর প্রতি খেয়াল করে। আল্লাহতায়ালা ও তাঁর রাসুল (সা.) এসবের গুরুত্ব বোঝানোর জন্য কোরআন ও হাদিসে বারবার এগুলোর আলোচনা করেছেন। তাই তো দুনিয়ার এত চাকচিক্য পেছনে ফেলে যারা ধর্মীয় শিক্ষার ধারক-বাহক হন, আল্লাহর কাছে তারা সম্মানিত। আল্লাহ তাদের মর্যাদা দিয়েছেন। আল্লাহর রাসুল (সা.) তাদের আম্বিয়ায়ে কেরাম (আ.)-এর উত্তরাধিকার বলেছেন। ফেরেশতারা তাদের চলার পথে ডানা বিছিয়ে রাখেন। গর্তে বসে পিঁপিলিকা তাদের জন্য দোয়া করে। সাগরের মাছ তাদের কল্যাণ কামনা করে। এমন মর্যাদা ও সৌভাগ্যের ভাগিদার তো সব মুসলমানেরই হওয়া উচিত। এ শ্রেণির মানুষগুলোকে হৃদয় থেকে শ্রদ্ধা করা উচিত। ভুলে গেলে চলবে না, এ দুনিয়ায় যারা আলিশান অট্টালিকায় বিলাসবহুল জীবনযাপন করছে, তাদের সেই মজবুত ও শক্ত খুঁটিগুলোর ভিত ধরে রেখেছেন তালিযুক্ত জামা পরা ইলমের ধারক-বাহক ওই মানুষগুলো। কারণ, হাদিসের ঘোষণানুযায়ী, যদি এ মানুষগুলো আল্লাহকে ডেকে ডেকে দিনযাপন না করতেন, মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বান না করতেন, তাহলে দুনিয়া কবে ধ্বংস হয়ে যেত! তাই দুনিয়ায় চলার জন্য প্রয়োজনমাফিক জাগতিক শিক্ষার প্রয়োজন থাকলেও ধর্মীয় শিক্ষার প্রয়োজন চিরদিন। কেননা, রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মাঝে সেই ব্যক্তি সর্বোত্তম, যে নিজে কোরআন শিক্ষা করে এবং অপরকে শিক্ষা দেয়।’ (বোখারি : ৫০২৭)।

ধর্মীয় শিক্ষার গুরুত্ব : ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করে অসংখ্য আয়াত ও হাদিস বর্ণিত হয়েছে। এরশাদ হচ্ছে, ‘তোমাদের মাঝে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদের ইলম দান করা হয়েছে, আল্লাহ তাদের মর্যাদা বহুগুণ বাড়িয়ে দেবেন।’ (সুরা মুজাদালা : ১১)। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জ্ঞানার্জনের জন্য কোনো পথ অবলম্বন করে, আল্লাহ তার জান্নাতের পথ সহজ করে দেন।’ (মুসলিম : ২৬৯৯)। রাসুল (সা.) আরও বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা যাকে প্রভূত কল্যাণ দিতে চান, তাকে দ্বীনের প্রজ্ঞা দান করেন।’ (বোখারি : ৭১)। আরেক হাদিসে এসেছে, ‘যে ইলম অনুসন্ধানে বের হয়, সে ফিরে আসা পর্যন্ত জান্নাতের রাস্তায় থাকে।’ (সুনানে আবি দাউদ : ৩৬৪৩)। তবে দ্বীনি ইলমের এ ফজিলত লাভের জন্য শর্ত হলো, ইখলাস তথা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইলম অর্জন করা। পার্থিব কোনো উদ্দেশে দ্বীনি ইলম অর্জন করা হলে তার পরিণাম হবে ভয়াবহ। জীবনের সব কাজ ইসলামের বিধান মোতাবেক করার জন্য দ্বীনি শিক্ষার বিকল্প নেই। কারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে সমাজ যতই উন্নতি লাভ করুক, ঈমান ও আল্লাহভীতি না থাকলে নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানবিক সমাজ গঠন করা সম্ভব নয়।

ধর্মীয় শিক্ষা ও আগামীর ভবিষ্যত : সন্দেহাতীতভাবে নৈতিক মানদ-ের সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ কোরআনে কারিম। মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সব বিষয়ের সবিস্তার ভারসাম্যপূর্ণ বিধান প্রণীত হয়েছে এতে। তাই সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের জন্য কোরআনের শিক্ষার বিকল্প নেই। এ কোরআনের সুশিক্ষাই মানুষের ভবিষ্যত প্রজন্ম শিশু-কিশোরকে সঠিক জীবন ও সুন্দর সমাজ বিনির্মাণের কারিগর হিসেবে তৈরি করতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে প্রিয় মাতৃভূমিতে এক ভয়াবহ নাজুক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। যারা এ অবস্থার সৃষ্টিকারী, তাদের অধিকাংশই অল্প বয়সী তরুণ-যুবক। যাদের পেছনে রয়েছে অদৃশ্য ভ্রান্ত আকিদা-বিশ্বাসী একদল রাঘববোয়াল। যারা ধর্মের নামে পথহারা তরুণ-যুবকদের দিয়ে তাদের নিজেদের জীবনের পাশাপাশি অসংখ্য নিরাপরাধ মানুষের প্রাণহানি করেই চলেছে। এদের বেশিরভাগই ইংরেজি মাধ্যমে পড়া দেশি-বিদেশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী। আধুনিক জীবনের স্বপ্ন দেখা মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান-সন্তুতিদের অংশগ্রহণও এ দলে পরিলক্ষিত হচ্ছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের চলমান জীবনও আজ হুমকির মুখে। এ বিপজ্জনক সমস্যা থেকে মুক্তি লাভের উপায় হলো, সমাজের সর্বস্তরে ধর্মীয় শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরার পাশাপাশি নৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা। যেহেতু আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ, তাই সন্তান-সন্তুতিকে শারীরিক, মানসিক ও নৈতিক সুশিক্ষায় সঠিকভাবে গড়ে তুলতে ধর্মীয় শিক্ষা ও পরিবারের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত