ঢাকা সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

নারী জীবনের নির্দেশনা

তাবাসসুম মাহমুদ
নারী জীবনের নির্দেশনা

সন্তানের সামাজিকীকরণ ও প্রতিপালনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হলো পরিবার। পারিবারিক শিক্ষা ও আদর্শই শিশুর ভবিষ্যতের জীবন নির্ধারণ করে। আধুনিক জীবনব্যবস্থা পারিবারিক বন্ধন হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে। কথিত ব্যক্তি স্বাধীনতা, প্রযুক্তি নির্ভর ‘মিডনাইট কালচার’ পরিবারের সদস্যকে পরস্পর থেকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে। কন্যাসন্তানের প্রতিপালনে মুসলিম সমাজের যে রক্ষণশীলতা ছিল এবং সমাজে শালীন ও মার্জিত চলাফেরায় যে বাধ্যবাধকতা ছিল, তাও বিলুপ্ত হচ্ছে দিন দিন। ফলে, নারীরা সহজেই অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। নারীর এ বিপথগামিতা রোধ করতে পারিবারিক অনুশাসন রক্ষা করা আবশ্যক। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মোমিনরা! তোমরা নিজেদের এবং তোমাদের পরিবারকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করো।’ (সুরা তাহরিম : ৬)।

নৈতিক শিক্ষার প্রথম পাঠশালা : সন্তান ছেলে হোক বা মেয়ে, তার জন্য ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধ নিশ্চিত করা আবশ্যক। ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধ ছাড়া বেড়ে ওঠা মানুষের পক্ষে অপরাধে জড়িয়ে যাওয়া সহজ। আর তা শুরু করতে হবে পরিবার থেকেই। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘সন্তানকে শিষ্টাচার শিক্ষা দাও। কেননা, তুমি এ বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে- তুমি তাকে কতটা শিষ্টাচার শিখিয়েছ এবং তাকে কী শিক্ষা দিয়েছ? আর সে তোমার প্রতি তার আনুগত্য ও সহযোগিতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে।’ (সুনানে বায়হাকি : ৪৬৯১)।

নারীকে সংযত হওয়ার নির্দেশ : ইসলাম নারী-পুরুষ উভয়কে শালীন ও সংযত জীবনযাপনের নির্দেশ দিয়েছে। তবে নারীর অবক্ষয়ে যেহেতু সন্তান ও পরিবার বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং সামাজিক সংকট প্রকট হয়, তাই ইসলাম নারীকে জীবনযাপনে বেশি সংযত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। যেন তার অসতর্কতা অন্যের স্খলনের কারণ না হয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, তবে তোমরা পরপুরুষের সঙ্গে কোমলকণ্ঠে এমনভাবে কথা বোলো না, যাতে যার অন্তরে ব্যাধি আছে, সে প্রলুব্ধ হয়। তোমরা ন্যায়সঙ্গতভাবে কথা বলো। তোমরা নিজ ঘরে অবস্থান করো এবং জাহেলি যুগের নারীদের মতো নিজেদের প্রদর্শন করবে না।’ (সুরা আহজাব : ৩২-৩৩)।

ইসলামে নারীর চলাফেরা যেমন : মোমিন নারীর চলাফেরা কেমন হবে, তার একটি দৃষ্টান্ত তুলে ধরে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তাদের একজন এলো, যে সলজ্জ চলাফেরা করে।’ (সুরা কাসাস : ২৫)। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যেসব নারী কাপড় পরা সত্ত্বেও উলঙ্গ, যারা নিজেরা বিপথগামী এবং অন্যকে বিপথগামী করে, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং তাদের সুঘ্রাণও পাবে না। অথচ তার ঘ্রাণ পাঁচশত বছরের দূরত্ব থেকেও পাওয়া যায়।’ (মুয়াত্তায়ে মালেক : ১৬৬১)।

এক মহীয়সী নারীর যাপিত জীবন : বসরায় ইবাদতগোজার এক নারী ছিল। নাম তার মুনাইবা। তার একটি ছোট মেয়ে ছিল। যে তার চেয়েও বেশি ইবাদতগোজার ছিল। এত ছোট বয়সে তার এমন ইবাদত দেখে হাসান বসরি (রহ.) খুবই আশ্চর্য হলেন। একবার এক মজলিসে তিনি বসা ছিলেন। এমতাবস্থায় তার কাছে এক লোক এসে জানাল, ‘আপনি কি শুনেছেন, সেই মেয়েটি এখন মৃত্যুর অপেক্ষার প্রহর গুনছে?’ হাসান (রহ.) তৎক্ষণাৎ মেয়েটিকে দেখতে গেলেন। তার ঘরে পৌঁছানোর পর মেয়েটি তাকে দেখে কেঁদে ফেলল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘কাঁদছ কেন?’ মেয়েটি বলল, ও সাঈদের বাবা! মাটি আমার তারুণ্যকে ঢেকে দেবে; অথচ আমি এখনও আল্লাহর ইবাদত করে তৃপ্ত হইনি। আপনি আমার মাকে দেখেন, তিনি আমার বাবাকে বলছেন, ‘আমার মেয়ের জন্য প্রশস্ত কবর খুঁড়বেন এবং তাকে সুন্দর কাপড়ে কাফন দেবেন।’ আল্লাহর কসম! আমাকে যদি মক্কায় প্রেরণ করা হতো, তাহলেও আমি এত কান্না করতাম না। তাহলে আমি কেমন করে সেই কবরের ঘরে থাকব, যা অন্ধকার আর পোকাণ্ডমাকড়ের স্থান?’ (সিফাতুস সাফওয়া : ৪/২৭)।

মুসলিম নারীদের ইবাদতের কথা : ইসলামের ইতিহাস সাক্ষী, ইসলামের সূচনালগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত ইবাদত-বন্দেগির নির্দেশের ওপর পুরুষ যেমন আমল করেছে, নারীরাও তেমনই আমল করেছে। তারা কোনো অংশে পিছিয়ে ছিল না। মহান রবের সন্তুষ্টি লাভের আশায় পুরুষরা যেমন আঁধার রজনীগুলো ইবাদত-বন্দেগির বিভায় আলোকিত করেছে, তেমনই নারীরাও ইবাদত-বন্দেগির আলোর মাধ্যমে তাদের রজনীগুলো উজ্জ্বল করেছে। রবের সঙ্গে নির্জনে কথা বলার জন্য রাত্রিজাগরণ ও শেষ রাতের আহাজারিকে অভ্যাসে পরিণত করেছে। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া : ৮/১০২)।

রাসুল (সা.)-এর যুগের নারীদের কথা : রাসুল (সা.) যেভাবে আগ্রহ-উদ্দীপনা নিয়ে ইবাদতে নিমগ্ন হতেন, তেমনই তার সংশ্রবধন্য স্ত্রীগণও পূর্ণ আবেগ ও আগ্রহ-উদ্দীপনা নিয়ে ইবাদতে মগ্ন হতেন। পুরুষ সাহাবিরা যেমন রাসুল (সা.)-এর সুন্নাহ মোতাবেক ইবাদত-বন্দেগি করতেন, তেমনই নারী সাহাবিরাও রাসুল (সা.)-এর শিক্ষা মোতাবেক আমল করতেন। খাইরুল কুরুন তথা কল্যাণযুগ ও সালফে সালেহিনের নারীদের ইবাদতের প্রতি এতটা আগ্রহ ও উদ্দীপনা ছিল যে, দিন-রাতের বেশিরভাগ সময় তারা মওলার ইবাদতে কাটাতেন। নিজেদের এমন সব কাজেই ব্যস্ত রাখতেন, যাতে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.) খুশি হন। তারা ইবাদত-বন্দেগিতে আল্লাহর নৈকট্যের সে মর্যাদায় উন্নীত হয়েছিলেন, যেখানে বর্তমান সময়ের বড় বড় অলিদের পৌঁছাও কঠিন। (ইসলামের ইতিহাস : ২০৮)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত