কখনও বিএনপি, কখনও জাতীয় পার্টি, আবার কখনও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে হেরেছেন এসএম শফিকুর রহমান (মুশফিক)। সর্বশেষ ২০২৩ সালে খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে পরাজিত হন। নির্বাচনে তার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়।
আলোচিত নেতা শফিকুর রহমান ওই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে নিজেকে খুলনা সিটির বৈধ মেয়র হিসেবে ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছেন। গতকাল শনিবার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনে শফিকুর রহমান বলেন, ‘২০২৩ সালে কেসিসি নির্বাচনে মেয়র পদে আমি প্রার্থী হই, কিন্তু আমার মনোনয়ন বাতিল করা হলে উচ্চ আদালতের রায়ে প্রার্থিতা ফিরে পেয়ে নির্বাচন করি। নির্বাচনে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক কারচুপি হয়। নির্বাচনের ইভিএম মেশিনের সার্ভার স্টেশন ছিল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে। সেখান থেকেই সব ডিভাইস অচল-সচল করা হতো। এভাবেই ডিসির কার্যালয়ে থাকা ডিভাইস কারচুপি করে আমাকে পরাজিত করা হয়।’
এসএম শফিকুর রহমান বলেন, ‘নির্বাচনের আগে আমার কর্মদক্ষতা ও ভিশনকে তরুণ সমাজ লুফে নেয় এবং আমি বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাই। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে ফ্যাসিস্ট সরকার ডিজিটাল কারচুপির মাধ্যমে আমাকে হারিয়ে দেয়।’
তিনি বলেন, ২০২৩ সালের নির্বাচনে তিনি জয়ী হয়েছেন। জালিয়াতির নির্বাচনের বিরুদ্ধে গত ২০ এপ্রিল তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনের সচিব ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে আবেদন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হন। ৬ মে উচ্চ আদালত এক আদেশে ২০২৩ সালের ১২ জুনের খুলনা সিটি কর্পোরেশনের অনুষ্ঠিত ‘নির্বাচনের ফলাফল বাতিল’ এবং আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনের সচিব ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন।
তবে সংবাদ সম্মেলনে এসএম শফিকুর রহমান উচ্চ আদালতে রিট ও আদেশের কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘জনতার মেয়র হিসেবে ভবিষ্যতে নাগরিক সেবায় অংশ নেব। নগর ভবনেই আপনাদের (সাংবাদিক) সঙ্গে দেখা হবে।’ সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে শফিকুর রহমান বলেন, ২০০৮ সালের উপনির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে বাগেরহাট-১ আসনে পরাজিত হন। এছাড়া ২০১৮ সালে জাতীয় পাটির মনোনয়নে এবং ২০২৩ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কেসিসির মেয়র পদে নির্বাচন করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২৩ সালের কেসিসি নির্বাচনে মেয়র পদে ২ লাখ ৫৬ হাজার ২৭৭টি ভোট পড়ে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক ১ লাখ ৫৪ হাজার ৮২৫ পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের প্রার্থী আবদুল আউয়াল। তিনি পেয়েছিলেন ৬০ হাজার ৬৪ ভোট। এরপর জাপার শফিকুল ইসলাম ১৮ হাজার ৭৮ ভোট এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী এসএম শফিকুর রহমান পান ১৭ হাজার ২১৮ ভোট। ওই নির্বাচনে চতুর্থ স্থানে থাকা মুশফিক জামানত হারান। এর আগে ২০১৮ সালের সিটি নির্বাচনেও জাপার প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করে জামানত হারান তিনি।