প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব গতকাল সোমবার বিকালে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
ক্রয়প্রক্রিয়া নিয়ে তদন্তাধীন একটি প্রকল্প চালু রাখার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) চিঠি দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়া প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তারা দুদক চেয়ারম্যানের আন্তরিক সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছেন। এর বাইরে কোনো নির্দেশ দেননি। আর এটি না হলে ৬০০ কোটি টাকা গচ্চা যাবে। তিনি ও তার মন্ত্রণালয়ে বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত কেউ কোনো ধরনের দুর্নীতিতে জড়িত নন বলেও দাবি করেছেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। সোমবার বিকালে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব এসব কথা বলেন। এসময় আরও বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব সম্প্রতি দুদকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেনকে একটি চিঠি দেন। চিঠিতে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০২২ সালে নেওয়া ‘৫ জি’র উপযোগীকরণে বিটিসিএলের ‘অপটিক্যাল ফাইবার ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পে ক্রয়প্রক্রিয়া নিয়ে অভিযোগ থাকাসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়। তবে দেশের বৃহত্তর স্বার্থ বিবেচনা, ফাইভজির রেডিনেস পিছিয়েপড়া রোধ, প্রযুক্তিগতভাবে বিটিসিএল পিছিয়েপড়া রোধ, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের হার নিশ্চিত এবং এ প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিটিসিএলের অপর একটি প্রকল্পের মাধ্যমে এরইমধ্যে স্থাপিত যন্ত্রপাতি চালু করার লক্ষ্যে বিটিসিএলের ওই প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান রাখার প্রয়োজনীয়তার কথা চিঠিতে তুলে ধরে দুদক চেয়ারম্যানের সহযোগিতা চাওয়া হয়। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
আজকের সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ। তিনি বলেন, কিছু বিশেষ কোম্পানি বিটিসিএলকে এই মার্কেট থেকে বের করে দিতে চায়। তারা এই বক্তব্য যখন তুলে ধরেছেন, তখন বলা হয়েছে, বিস্তারিত জানানো হোক। সেই রেফারেন্সে দুদক চেয়ারম্যানকে একটি চিঠি লেখেন। এই চিঠিতে তিনি মূলত তার যুক্তিগুলো তুলে ধরেন। যেহেতু টাকাটা চলে গেছে, যেহেতু বিটিসিএলের সক্ষমতা (ক্যাপাসিটি) সম্প্রসারণ দরকার। বর্তমানে যে সক্ষমতা আছে, সেটি জেলা পর্যায়ে মাত্র এক জিবিপিএস, এটা দিয়ে ভালো মানের ইন্টারনেটসেবা দেওয়া প্রায় অসম্ভব। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, এ মুহূর্তে বিটিসিএল যদি এই নেটওয়ার্ক যুগোপযোগী না করে, তাহলে দ্রুতই সে বাজার থেকে বের হয়ে যেতে পারে। এখন যেহেতু তার প্রতিদ্বন্দ্বীগুলো নেটওয়ার্ক যুগোপযোগী করছে এবং বিটিসিএল বিভিন্ন ঝামেলার কারণে এই কাজ বন্ধ হয়ে আছে, সেজন্য বিটিসিএলের ফাইবার নেটওয়ার্ক বর্ধিত করা যাচ্ছে না। উপরন্তু তারা বলেছেন, বিটিসিএলের মূল প্রকল্পের মধ্যে দুটি বিষয় আছে, একটি আইপি নেটওয়ার্ক, আরেকটি হচ্ছে ফাইবার ডিডব্লিউভিএম নেটওয়ার্ক। আইপি নেটওয়ার্কের কাজ ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ এরইমধ্যে হয়ে গেছে। কিন্তু সেই ৩০০ কোটি টাকা আজ কোনো কাজে আসছে না। কারণ, সেই নেটওয়ার্কের যে সার্ভারগুলো বসানো হয়েছে, সেগুলো সংযোগ করার জন্য ডিডব্লিউভিএম নেটওয়ার্কটি দরকার। সেজন্য তারা যুক্তি উপস্থাপন করেছেন। যেহেতু টাকাগুলো চলে গেছে, কাজটা করতে দেওয়া হোক। যেহেতু ব্যবহৃত বহুল প্রচলিত যন্ত্রপাতি আনা দরকার, তারা একটি কমিটি করে দেবেন, সেই কমিটি নিশ্চিত করবে, প্রতিশ্রুত যন্ত্রপাতি আসবে। বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘এটিকে অপব্যাখ্যা করে আমাদের, আমাকে ব্যক্তিগতভাবে, আমার মন্ত্রণালয় ও আমাদের সরকারকে চরিত্রহননের একটা চেষ্টা আপনারা মিডিয়ায় দেখেছেন। আমি এর নিন্দা জানাই। আমি সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমি এবং আমার মন্ত্রণালয়ে বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত যারা আছি, তারা কোনো ধরনের কোনো দুর্নীতিতে জড়িত নই। এখানে যত ধরনের কাজ হয়েছে, প্রতিটি কাজ আগের সরকারের আমলে হয়েছে। আমরা শুধু কিছু চিঠি আদান-প্রদান করে আমাদের মতামত ব্যক্ত করেছি এবং মতামত ব্যক্ত করে চিঠির শেষ লাইনে দুদক চেয়ারম্যানের আন্তরিক সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছি। এর বাইরে আমরা কোনো নির্দেশ দিইনি।’ প্রধান উপদেষ্টার এই বিশেষ সহকারী আরও বলেন, এখানে এ প্রকল্পের বিপরীতে দুদকের পর্যবেক্ষণ ছাড়া কোনো ধরনের মামলা নেই। সুতরাং যে বিষয়টি করা হচ্ছে তারা বলছেন যদি এই কাজটি না করা হয় এবং এলসি না খোলা হয়, তাহলে দুটি ঘটনা ঘটবে। ৩০০ ও ৩০০ মিলিয়ে মোট ৬০০ কোটি টাকা গচ্চা যাবে। একই সঙ্গে বিটিসিএল দুর্বল হয়ে এই বাজার থেকে বের হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। সংবাদ সম্মেলনে টেলিকম নেটওয়ার্ক ও লাইসেন্সিং রিফর্ম পলিসি, ২০২৫ নিয়ে কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।