ঢাকা শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

সেই শিক্ষক এখন বেরোবিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন

সেই শিক্ষক এখন বেরোবিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন ‘নীল দল’-এর সদস্য এবং ২০২৩ সালের ২ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রংপুরের সমাবেশে অংশ নেওয়া সহযোগী অধ্যাপক মাসুদ রানা এখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে প্রভাবশালী শিক্ষক হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছেন।

ওই সমাবেশের ছবিতে মাসুদ রানার পাশে থাকা আরও দেখা যায়, গণিত বিভাগের শিক্ষক এবং আবু সাঈদ হত্যা মামলার আসামি মশিউর রহমান, নীল দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ড. আপেল মাহমুদসহ আওয়ামীপন্থী পাঁচজন শিক্ষককে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন উপাচার্য নিয়োগ পাওয়ার পর মাসুদ রানা পরিবহন পুলের পরিচালকের দায়িত্ব পান। এরপর থেকে ভর্তি পরীক্ষা, জাতীয় দিবসসহ গুরুত্বপূর্ণ কমিটিতে তাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।

ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের এই শিক্ষক নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই আওয়ামীপন্থী হিসেবে পরিচিত হলেও চলতি বছরের জুলাই মাসে ‘গণঅভ্যুত্থানের’ পর থেকে তিনি আচরণে পরিবর্তন এনে বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন। এর সুবাদে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বেও আসেন তিনি।

২০১৭ সালের শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে ‘নীল দল’-এর প্যানেল থেকে কোষাধ্যক্ষ পদে নির্বাচিত হন মাসুদ রানা। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার সময় শিক্ষকদের উপস্থিতি পত্রে ‘মুজিব বর্ষের লোগো’ থাকা নিয়ে তোলপাড় হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই ডিউটি রোস্টার কমিটির প্রধান ছিলেন মাসুদ রানা।

সম্প্রতি কয়েকজন শিক্ষার্থী প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টার কক্ষে শাড়ি ও চুড়ি রেখে যাওয়ার ঘটনায় তুমুল আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। এর পর থেকেই ওই দুই প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বলে গুঞ্জন ছড়ায়। তখন থেকেই মাসুদ রানা প্রক্টর বা ছাত্র উপদেষ্টার পদে আসতে পারেন—এমন কথাও শোনা যাচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, উপাচার্যের কক্ষে মাসুদ রানাকে প্রায় নিয়মিতই দেখা যায়। এমনকি, উপাচার্যের ঘনিষ্ঠ হিসেবে তার পরিচিতি এখন অনেকের কাছেই স্পষ্ট।

এছাড়া গত ৫ আগস্টের পর তার বিভাগের কিছু শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাসুদের বিরুদ্ধে নাম্বার টেম্পারিং ও যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেন। পরে তিনি নিজের পক্ষে কিছু শিক্ষার্থীকে দিয়ে মানববন্ধন করিয়ে সেই অভিযোগ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন বলেও জানা গেছে।

বেরোবি ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সাংগঠনিক সম্পাদক ও গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী মুরসালিন মুন্না বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কেউ কেউ অতীতে আওয়ামীপন্থী থাকলেও বর্তমানে নিজেদের নিয়োগের বৈধতা, মামলা থেকে মুক্তি কিংবা প্রশাসনিক সুবিধার জন্য বিএনপিপন্থী অবস্থান নিচ্ছেন। এর অন্যতম উদাহরণ মাসুদ রানা স্যার। এক সময় নীল দলের সদস্য ও আওয়ামী লীগের সমাবেশে অংশ নিলেও এখন নিজেকে বিএনপিপন্থী বলে পরিচয় দেন।

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের রাজনৈতিক সুবিধাবাদী আচরণ নিন্দনীয়। এতে শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট হয় এবং শিক্ষক সমাজে বিভাজন তৈরি হয়। প্রশাসনের উচিত স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে নিরপেক্ষ শিক্ষকদের প্রশাসনিক দায়িত্বে রাখা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সহযোগী অধ্যাপক মাসুদ রানা বলেন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব শিক্ষকই কোনো না কোনো রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মে ছিলেন। আমি ২০১৮ সালের পর থেকে নীল দলের কোনো তালিকায় নেই। আর শেখ হাসিনার সভায় যাওয়া বা সেখানে ছবি তোলা কোনো অপরাধ নয়। প্রোগ্রামে মানুষ যেতেই পারে।

দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন,বেরোবি,সেই শিক্ষক
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত