মৌসুমে একই ধরনের ফসলের চাষাবাদ না করে ভিন্ন আবাদ করলে ভালো দাম পাওয়া যায়। এতে হাট-বাজারে সে ফসলের সরবরাহ কম থাকে। ফলে ভালো দাম পেয়ে লাভবান হোন কৃষক। পরিশ্রম ও খরচ কম, উৎপাদন বেশি এবং ভালো দাম পাওয়ায় নওগাঁয় গাজর চাষে আগ্রহ বেড়েছে কৃষকদের। নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলায় এ বছর বেশি পরিমাণ গাজরের আবাদ হয়েছে। প্রায় ৬০০ বিঘা জমিতে গাজর চাষ হয়েছে। উপজেলার কুশুম্বা ও বিলকরিল্যাসহ আশপাশের গ্রামের মাঠ এখন সবুজের সমারোহ। ইরিবোরো রোপণের প্রস্তুতি নিচ্ছে কৃষক। পরিপক্ব হওয়ায় জমি থেকে গাজর উঠানো হচ্ছে। এরপর সেসব গাজর মেশিনে দিয়ে পরিষ্কার করা হচ্ছে। তারপর পাইকারি ব্যবসায়িদের কাছে দরদার করে বিক্রি করা হচ্ছে। মৌসুমের শুরুতে এক হাজার মণ হলেও বর্তমানে ৫০০-৬৫০ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে। কুশুম্বা গ্রামের গাজর চাষি নিজাম উদ্দিন। গত বছর তিনি ৬ বিঘা জমিতে গাজর চাষ করে লাভবান হয়েছিলেন। সেই আশা থেকে এ বছর বাড়তি ৯ বিঘাসহ মোট ১৫ বিঘা জমিতে গাজর চাষ করেছেন। তিনি বলেন- হালচাষ, বীজ, সার, কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরি দিয়ে বিঘাতে খরচ পড়ে ১৪-১৬ হাজার টাকা। বিঘাতে ফলন হয় ৮০ মণ থেকে ১২০ মণ পর্যন্ত। মৌসুমের শুরুতে ৩০-৩৫ টাকা কেজি বিক্রি করা হয়। বর্তমানে সবাই উত্তোলন করায় বাজারে সরবরাহ বেড়েছে। এতে দাম কমেছে। বর্তমানে ১৪-১৬ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। খরচ বাদে বিঘাতে লাভ থাকে ৩০-৪০ হাজার টাকা। কুশুম্বা গ্রামের গাজর চাষি ইছাহাক আলী ও আরমান হোসেন বলেন, আশপাশের জমিতে অনেকে আলু ও সরিষার আবাদ করেছে। তবে গতানুগতিক সেসব ফসল চাষ না করে গাজরের আবাদ করা হয়। কারণ একই ফসল চাষ করলে বাজারে নেয়া হলে দাম কম পাওয়া যায়। এতে লাভের তুলনায় লোকসান হওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে। তাই আমরা গাজর চাষ করেছি। বাজারে দামও ভালো মিলছে। বিলকরিল্যা গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন- ২৫ কাঠা জমিতে গাজর চাষ করেছিলাম। যেখানে খরচ হয়েছিল ১৩ হাজার টাকা। আর বিক্রি করেছিলাম ৪৫ হাজার টাকা। পরিশ্রম ও খরচ কম হওয়ায় বেশ লাভবান মনে হচ্ছে।
গাজর মেশিনের পরিষ্কারক আব্দুর রশিদ বলেন- গতবছরও জমি থেকে গাজর তুলে কষ্ট করে হাতে পরিষ্কার করতে হতো। এতে সময় ও বেশ পরিশ্রম হতো। তবে এ বছর মেশিনের সাহায়ে পরিষ্কার করা হচ্ছে। ১০ মিনেটে প্রায় ৫-৬ মণ পরিষ্কার করা যায়। প্রতি মণে ২০ টাকা। দিনে প্রায় ৪-৫ হাজার টাকার মতো পরিষ্কার করা যায়। খরচ বাদে লাভ থাকে প্রায় ২ হাজার টাকা। ফড়িয়া ব্যবসায়ী বিদ্যুৎ হোসেন বলেন, সরাসরি জমি থেকে গাজর সংগ্রহ করা হয়। আবার কৃষকরা এসেও বিক্রি করেন। কৃষকদের কাছ থেকে কিনে পাইকারি ব্যবসায়িদের কাছে বিক্রি করা হয়। এসব গাজর স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হয়ে থাকে। প্রতিদিন এ এলাকা থেকে অন্তত ৫ লাখ টাকার গাজর বেচাকেনা হচ্ছে। নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন- জেলায় এ বছর ২৭০ হেক্টর জমিতে গাজরের আবাদ হয়েছে। হেক্টরপ্রতি ফলন ১৫ মেট্রিক টন। শীত মৌসুমে আবাদ হয়ে থাকে। এটি সবজি ও সালাদ হিসেবে খাওয়া যায়। এ কারণে ভোক্তাদের কাছে চাহিদা রয়েছে। বাজারমূল্য ভালো পাওয়ায় কৃষকরা চাষাবাদে বেশ আগ্রহী। সুষম সার ব্যবহারসহ গাজর চাষে কলাকৌশল চাষে কৃষকদের উদ্বৃদ্ধ করা হচ্ছে।