ঢাকা বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

দিল্লির ক্ষমতায় বিজেপি

দিল্লির ক্ষমতায় বিজেপি

দীর্ঘ ২৭ বছর পর দিল্লি দখল করতে চলেছে বিজেপি। গতকাল শনিবার রাত ৯টা পর্যন্ত ভোট গণনার গতি প্রকৃতি সেই ইঙ্গিত দেয়। ওই সময় পর্যন্ত মোট ৭০ আসনের মধ্যে বিজেপি এগিয়ে আছে ৪৮ আসনে এবং আম আদমি পার্টি (আপ) ২২ আসনে। কংগ্রেস একটি আসনে বেশ কিছু সময় এগিয়ে থাকলেও পরে পিছিয়ে পড়েছে।

ভোটের পরপরই প্রায় সব সংস্থার বুথফেরত সমীক্ষায় বিজেপিকে জয়ী হিসেবে দেখানো হয়েছিল। গণনার শুরু থেকেও দেখা যাচ্ছে, সমীক্ষার ফল হেরফের হওয়ার সম্ভাবনা কম। প্রথম রাউন্ডের গণনার পরে দেখা যায়, আপ নেতা ও সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও মুখ্যমন্ত্রী আতিশি বেশ কিছু ভোটে পিছিয়ে আছেন। পরবর্তী রাউন্ডে দুজন এগিয়ে যায়। এবারের ভোট ছিল ত্রিমুখী। বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র দুই শরিক কংগ্রেস ও আপ লোকসভা ভোটে জোটবদ্ধ হয়ে লড়লেও বিধানসভার ভোটে তারা পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী। কংগ্রেস ও আপের সমর্থন ক্ষেত্রও এক। দলিত, অনগ্রসর ও মুসলমান। লড়াই ত্রিমুখী হওয়ায় বিজেপি শুরু থেকেই যথেষ্ট উৎফুল্ল ছিল। কারণ, ছোট ব্যবসায়ী, পাঞ্জাবি উদ্বাস্তু, সরকারি কর্মী ও মধ্যবিত্তের মধ্যে বিজেপির সমর্থন অটুট।

আবার মধ্যবিত্তের মন জিততে বাজেটে এবার বিজেপি সরকার আয়করে বিপুল ছাড় দিয়েছে। ভোটের ঠিক আগে বাজেট পেশ রাজনৈতিকভাবে বিজেপির পক্ষে যে সুবিধাজনক হয়েছে, তা গণনার গতি থেকে বোঝা যাচ্ছে।

দিল্লির ভোটারদের মধ্যে রয়েছেন বিপুল পূর্বাঞ্চলীয় জনগোষ্ঠী। উত্তর প্রদেশের পূর্বাঞ্চল ও বিহার থেকে আসা মানুষের সমর্থন পেতে বিজেপি এবার চেষ্টার ত্রুটি রাখেনি। ২০২৪ সালে লোকসভায় দিল্লির ৭টি আসনের মধ্যে ৬টির প্রার্থী পরিবর্তন করলেও ভোজপুরি সিনেমার জনপ্রিয় নায়ক ও সংসদ সদস্য মনোজ তিওয়ারিকে বিজেপি বদলায়নি। পূর্বাঞ্চলীয় ভোটারদের সমর্থনে মনোজের পাশাপাশি বিজেপি প্রচারে নেমে এসেছিলেন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথও। গণনার প্রাথমিক গতি প্রকৃতি দেখাচ্ছে, পূর্বাঞ্চলীয় ভোটারদের সমর্থন বিজেপি ভালোই পেয়েছে।

দিল্লিতে মুসলিম অধ্যুষিত আসন আছে ৭টি। ২০১৫ ও ২০২০ সালের বিধানসভা ভোটে ৭টিই জিতেছিল আপ। এবার কংগ্রেস সেই আসনগুলোয় জোরালো প্রচার চালিয়েছিল। প্রাথমিকভাবে দেখা যাচ্ছে, ওই ৭টি আসনের মধ্যে বিজেপি ৪টিতে এগিয়ে রয়েছে। গতবার কংগ্রেস পেয়েছিল ৪ দশমিক ৬২ শতাংশ ভোট। এবার যত বাড়তি ভোট তারা পাবে, ততই ক্ষতি আপের।

আপের বিরুদ্ধে এবারের প্রচারে বিজেপি তিনটি বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছিল। প্রথমত, আপ নেতাদের ‘দুর্নীতি’। আবগারি (মদ) কেলেংকারি এবং ৪২ কোটি টাকা খরচ করে মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি আবাসের ভোলবদলের বিরুদ্ধে তারা লাগাতার আন্দোলন করে গেছে। এতে আপ নেতাদের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি অবশ্যই কিছুটা নষ্ট হয়েছে।

বিজেপির প্রচারে দ্বিতীয় বৈশিষ্ট ছিল স্থানীয় নেতাদের জোটবদ্ধতা। অতীতে যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কুফল বিজেপিকে ভোগ করতে হয়েছে, এবার তা দেখা যায়নি। তৃতীয় বৈশিষ্ট রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের (আরএসএস) সক্রিয়তা, যা গত বছর লোকসভা ভোটে দেখা যায়নি। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কাউকে না বেছে বিজেপি এবার প্রচার চালিয়েছে। দলের মুখ ছিলেন একজনই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গণনার গতি-প্রকৃতি দেখে বোঝা যাচ্ছে, হারের হ্যাটট্রিকের লজ্জা প্রধানমন্ত্রীকে পেতে হচ্ছে না।

এদিকে দিল্লির নির্বাচনের ফল স্পষ্ট হতেই সমাজমাধ্যমে একটি ভিডিওবার্তা দিয়েছেন কেজরীওয়াল। জানিয়েছেন, দিল্লির মানুষ যে রায় দিয়েছে, তা তিনি মাথা পেতে নিচ্ছেন। মানুষের জন্য কাজ চালিয়ে যাবেন।

দিল্লিতে আপের কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করে কেজরী আরো বলেন, গত ১০ বছরে আমরা অনেক কাজ করেছি। দিল্লিতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য সব ক্ষেত্রে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার চেষ্টা করেছি। দেশের রাজধানীর পরিকাঠামোগত উন্নয়নের চেষ্টা করেছি। এখন দিল্লির মানুষের রায় অনুযায়ী আমরা এখানে গঠনমূলক বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করব। মানুষের জন্য কাজ চালিয়ে যাবেন, বার্তা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর। তিনি বলেন, ‘সমাজসেবা এবং মানুষের হিতার্থে আমরা কাজ চালিয়ে যাব। মানুষের সুখেদুঃখে পাশে থাকব। রাজনীতিতে আমরা কোনো লাভের আশা নিয়ে আসিনি। রাজনীতি হলো মানুষের জন্য কাজ করার মাধ্যম। সেই কাজ আমরা করে যাব। আপের সব কর্মীকে অভিনন্দন এবং ধন্যবাদ। ওরা এই নির্বাচনের জন্য অনেক পরিশ্রম করেছেন।’

নিজে জিতলেও দলের হার স্বীকার করে নিয়ে মন্তব্য করেছেন বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী আতিশী। কালকাজি কেন্দ্রে জয়ের পর তিনি বলেন, মানুষের রায় আমরা মেনে নিচ্ছি। আমি জিতেছি, কিন্তু এটা জয় উদ্?যাপনের সময় নয়। বিজেপির বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চলবে। ২০১৩ সালে দিল্লিতে প্রথম ক্ষমতায় এসেছিল কেজরীর দল। পর পর তিনবার তিনি রাজধানীর মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন (প্রথমবার ৪৮ দিনের জন্য)। আবগারী দুর্নীতি মামলায় কেজরীকে গ্রেপ্তার করেছিল ইডি। দীর্ঘদিন তিনি জেলে ছিলেন। তখনও মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেননি। পরে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কেজরী কুর্সি ছাড়েন। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হন আতিশী মার্লেনা। ২০২৫ সালে ক্ষমতায় ফিরলে কেজরীই আবার মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসতেন। কিন্তু তা হলো না। বিজেপির বিপরীতে কার্যত ভরাডুবি হয়েছে আপের।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত