বাণিজ্যিকভাবে কোয়েল পাখি পালন করে সাফল্যের মুখ দেখছেন বগুড়ার গাবতলী উপজেলার দুর্গাহাটা গ্রামের শাহিদুল ইসলাম শহিদ। শহিদের খামারে বর্তমানে ৭০ হাজার কোয়েল পাখি রয়েছে। বছরে প্রায় ৪ কোটি টাকার কোয়েল পাখি ও ডিম বিক্রি করেন তিনি।
জানা যায়, প্রাথমিকভাবে ১০০ কোয়েল পাখি দিয়ে শুরু করলেও বর্তমানে তার থামারে রয়েছে ৭০ হাজার পাখি। তার এই ফার্ম দেখে এলাকার অনেক বেকার যুবক কোয়েল পালনে আগ্রহী হচ্ছেন। স্থানীয় বাজের সৃষ্টি হয়েছে কোয়েল পাখির মাংস ও ডিমের বাজার।
বগুড়ার গাবতলী উপজেলার দুর্গাহাটা গ্রামের কৃষক দিরাজ প্রামাণিকের ছেলে শাহিদুল ইসলাম শহিদ। এসএসসি পাসের পর বগুড়ার ছাত্রাবাসে থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে অধ্যয়ন করতে থাকেন। ২০১০ সালের দিকে শহরের সাতমাথায় কোয়েল পাখির ডিম খাওয়া দেখে খামার গড়ার চিন্তা করেন তিনি। মাত্র সাড়ে ৩ হাজার টাকা দিয়ে ১০০ কোয়েল পাখি দিয়ে শুরু করেন খামার।
২০১৬ সালে তিনি ত্রাণ ও দুর্যোগ অধিদফতরের কার্য সহকারী পদে চাকরি পান। চাকরির চেয়ে খামারে বেশি লাভবান হবেন তাই তিন বছর চাকরি করে ফিরে আসেন খামারে। পাশাপাশি ইতিহাস বিভাগ থেকে তিনি মাস্টার্স পাস করেন। ১৫ বছরে তিনি ছোট-বড় ৩০টি খামার গড়েছেন। যেখানে এখন পাখির সংখ্যা ৭০ হাজারেরও বেশি। তিনি নিজে স্বনির্ভর হয়েছেন। অন্যদিকে ৪০ জন মানুষের কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি করেছেন। উদ্যোক্তা শাহিদুল ইসলাম শহিদ জানান, জাপানি জাতের কোয়েল পাখি থেকে তিনি ডিম উৎপাদন করেন। প্রতিদনিই এ কোয়েল ফার্ম দেখতে স্থানীয়সহ অনেকেই আসেন। অনেকে নাহিদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে বাচ্চা সংগ্রহ করে কোয়েল পালনে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।
বর্তমানে খাওয়ার উপযোগী কোয়েল পাখি ৬০ টাকা পিস এবং প্রতি হালি ডিম ১২ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। নিজস্ব ইনকিউবেটরে প্রতি মাসে দেড় লাখ বাচ্চা উৎপাদন, খাবার উপযোগী পাখি বিক্রি করেন প্রতি মাসে ৪৫ হাজার পিস। ২৫ থেকে ৩০ দিনে ২৪ টাকার খাবার খেয়ে একটি পাখি ২২০ থেকে ২৫০ গ্রাম ওজন হয়। খাবার উপযোগী এসব পাখি ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হয়। ৪৫ থেকে ৬০ দিনের একটি পাখি বছরে ৩ শতাধিক ডিম দেয়। ইনকিউবেটরে ১৮ দিনে বাচ্চা ফুটিয়ে তা ৭ টাকা পিস হিসেবে বিক্রি করেন তিনি। সব মিলিয়ে বছরে প্রায় ৪ কোটি টাকার বেচাকেনা হয়। তিনি জানান, এখন ২ বিঘার ওপর জায়গাতে গড়ে তুলেছেন মা কোয়েল অ্যান্ড হ্যাচারি।
চাকরির পেছনে না ঘুরে বেকার যুবকদের উদ্যোক্তা হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমার গড়ে তোলা ‘মা কোয়েল অ্যান্ড হ্যাচারিতে’ কমপক্ষে ৪০ জন বেকারের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি আরও অনেকেই চুক্তিভিত্তিক কাজ করছেন। অনেকে আবার এখান থেকে কাজ শিখে নিজেই খামার গড়ে তুলেছেন। বগুড়া জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. আনিছুর রহমান জানান, আমিষের চাহিদা মেটাতে কোয়েল পাখির মাংস বেশ ভূমিকা রাখতে পারে। পাশাপাশি কোয়েল পাখির খাবার খরচ কম হওয়ায় এটি একটি লাভজনক ব্যবসা। এ বিষয় জেলা প্রাণিসম্পদ সবাইকে সহযোগিতা করছে।