শরীয়তপুরের নড়িয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুরুজ উদ্দিন আহম্মেদ বিএনপির এক নেতার বাসায় গিয়ে ফুলের মালা পরিয়ে দিচ্ছেন, এমন ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়েছে।
পরিদর্শক সুরুজ উদ্দিন আহম্মেদ গত রোববার নড়িয়া উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মাসুদুর রহমানের বাড়িতে যান। তাকে ফুলের মালা পরিয়ে দেওয়ার ছবি গত সোমবার ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এ সম্পর্কে সুরুজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘একটি মামলাসংক্রান্ত কাজে ওই বিএনপি নেতার বাড়ি গিয়েছিলাম। সেখানে তার গলার মালাটা আমি ঠিক করে দিচ্ছিলাম। সেই অবস্থায় কেউ হয়তো ছবি তুলেছেন।’ সুরুজ উদ্দিন আহম্মেদ এর আগে ২০২৩ সালের ১৫ জুন শরীয়তপুরের পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় কর্মরত থাকা অবস্থায় সাময়িক বরখাস্ত হয়েছিলেন। তখন তার বিরুদ্ধে শরীয়তপুরের নাওডোবা বাজারের ব্যবসায়ী আবু জাফর ওরফে ঠান্ডু চোকদারকে তুলে নিয়ে পিটিয়ে ৭২ লাখ টাকার চেক নেওয়ার এবং একটি ছিনতাই মামলার চার আসামিকে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছিল। গত বছর আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তার বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার হয়। সুরুজ উদ্দিন আহম্মেদকে ২০২৫ সালের ২৫ মার্চ নড়িয়া থানায় বদলি করা হয়। সম্প্রতি তাকে আওয়ামী লীগের এক নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে একটি রেস্তোরাঁয় জন্মদিনের অনুষ্ঠান উদ্?যাপন করতে দেখা গেছে। নড়িয়া থানা ও স্থানীয় সূত্র জানায়, নড়িয়া পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের শুভগ্রাম এলাকার বাসিন্দা মাসুদুর রহমান ওরফে রিপন পেদা জার্মানপ্রবাসী। ৭ জুলাই মাসুদুর রহমান দেশে ফিরেছেন। এরপর তার বাড়ি গিয়ে তাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন বিভিন্ন পর্যায়ের দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। পরিদর্শক (তদন্ত) সুরুজ উদ্দিন আহম্মেদ গত রোববার রাতে উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মাসুদুর রহমানের বাসায় যান। তখন তার বসার ঘরে কর্মকর্তা সুরুজ উদ্দিন বিএনপি নেতা মাসুদুর রহমানের গলায় ফুলের মালা পরিয়ে দেন। গলায় ফুলের মালা পরিয়ে দেওয়ার ছবি গতকাল ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে অনেকে নানা ধরনের মন্তব্য করেন। ফারুক আলম নামের একজন ওই ছবি পোস্ট করে লেখেন, ‘মাসুদুর রহমানের একটা গুণ সে থানায় যায় না, থানার ওসি তদন্ত স্যার তার কাছে আসেন শুভেচ্ছা বিনিময় করতে। মনজুড়ানো একটা মুহূর্ত। শুভকামনা মামা আপনার জন্য।’ এ সম্পর্কে মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আমার এক আত্মীয়ের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা ছিল। পুলিশ সেটার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে। তারপরও সিআইডি থেকে তাকে ফোন করা হয়েছিল। ওই বিষয়টি আমি তার (পরিদর্শক সুরুজ উদ্দিন আহম্মেদ) কাছে জানতে চেয়েছিলাম। তাই তিনি আমার বাসায় এসেছিলেন। ওই সময় অনেকেই আমাকে ফুলের মালা দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তখন হয়তো তিনি সেখানে দাঁড়ানো ছিলেন। কেউ হয়তো সেই ছবি ফেসবুকে দিয়েছেন।’ নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম উদ্দিন মোল্যা বলেন, ‘কোনো কর্মকর্তা এভাবে ব্যক্তিগত সম্পর্ক স্থাপন করে জনসমক্ষে কাউকে ফুলের মালা পরিয়ে দিতে পারেন না। এটা চাকরিবিধির পরিপন্থি, নিরপেক্ষতা হারানোর শামিল। তিনি কোন পরিপ্রেক্ষিতে এমন করেছেন, তা আমি বলতে পারব না। ওই ঘটনা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি।’