উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি পশ্চিমণ্ডউত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে প্রথমে সুস্পষ্ট লঘুচাপ ও পরে নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। যার প্রভাবে সাগর উত্তাল এবং জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। জোয়ারের ঢেউয়ের আঘাতে আবারও মেরিন ড্রাইভের কক্সবাজারের টেকনাফের আড়াই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। শুক্রবার সকালে টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের বাহারছড়া ঘাট থেকে জিরো পয়েন্ট এলাকার মেরিন ড্রাইভে এমন ভাঙনের দেখা মিলেছে। এর আগেও একই এলাকায় দুই দফায় ভাঙনের কারণে জিও ব্যাগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই জিও ব্যাগ ডিঙিয়ে জোয়ারের ঢেউর ধাক্কায় আড়াই কিলোমিটার এলাকার অন্তত ১০টি স্থানে সড়কের অংশ বিশেষ ভেঙে যাচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর কক্সবাজার আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুল হান্নান বলেন, সর্বশেষ আবহাওয়া বার্তা মতে, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি পশ্চিমণ্ডউত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে প্রথমে সুস্পষ্ট লঘুচাপ ও পরে নিম্নচাপে পরিণত হয়ে উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার ২১.৩ ডিগ্রী উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯.৬ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থান করছে। এটি শুক্রবার সকাল ৬ টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ২৬৫ কিলোিমিটার পশ্চিমণ্ডদক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ২৬৫ কিলোমিটার পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ১৩০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১১০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি পশ্চিমণ্ডউত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে শুক্রবার বিকাল নাগাদ পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে বায়ু চাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর দিয়ে দমকাণ্ডঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটার এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, অমাবস্যা ও নিম্নচাপের কারণে উপকূলীয় কক্সবাজারসহ উপকূলীয় এলাকায় ১-৩ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে এলাকা সমুদ্র জোয়ারের পানি ১-৩ ফুট পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। উত্তাল হয়েছে সাগর, ঢেউর আকারও বেড়ে শক্তিশালী হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার রাত থেকে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের আড়াই কিলোমিটার এলাকার অন্তত ১০টি স্থানে ভাঙনের তথ্য জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এর আগে ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাবে মেরিন ড্রাইভ এই অংশটিতে ভাঙন দেখা দিয়েছিল। ওই স্থানটি সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের একটি বিশেষ ইউনিট লম্বা জিও ব্যাগের মাটি ফেলার মাধ্যমে এটি রক্ষার উদ্যোগ নিয়েছিল। দুই বছর পরে এসে গত মে মাসের শেষে জোয়ারের ঢেউয়ের ধাক্কায় আবারও ভাঙনের দেখা দিয়েছিল। এখন আবারও ভাঙনের কবলে পড়েছে। ফলে সেখানকার প্রায় দুই হাজার পরিবার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দা হেলাল উদ্দিন আহমদ বলেন, মেরিন ড্রাইভের কয়েকটি অংশে ভাঙনের ফলে স্থানীয় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ওই এলাকায় এক-দেড় হাজার একরের চেয়ে বেশি জমিতে চাষাবাদ করা হচ্ছে। পানি ঢুকে পড়লে ওইসব জমি বা চাষাবাদ নিয়ে আতঙ্কর মধ্যে রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শতে একজন জনপ্রতিনিধি বলেন, এক নম্বর ও দুই নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় ১০টির বেশি জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এর আগেও ফতেয়াআলী পাড়া থেকে বিজিবি ক্যাম্প এলাকা পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটারের বেশি স্থানে বৃহস্পতিবার রাতের পর থেকে আবারও ভাঙন দেখা দিয়েছে। এর আগে একই স্থানে ভাঙন দেখা দিলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার কোরের একটি দল বিভিন্ন স্থানে বালির বস্তা ও ইট দিয়ে মেরামতের চেষ্টা চালায়। তবে শুক্রবার সকাল থেকে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ও উত্তাল ঢেউয়ের কবলে পড়ে সড়ক পেরিয়ে পূর্ব পাশে ফসলি জমিতে লবণাক্ত পানি ঢুকেছে। কিন্তু এতে করে কোন জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়নি। সড়ক ভেঙে গেলে ওই এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকার ও অনুরোধ জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোহাম্মদ সেলিম ও ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোহাম্মদ ছিদ্দিক বলেন, সকালের পর থেকে স্থানীয় লোকজন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তার এলাকার কয়েকটি স্থানে জোয়ারে ঢেউয়ের কবলে মেরিন ড্রাইভ ভাঙনের বিষয়টি অবহিত করেছেন। তারা সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা নিবাহী কমকর্তা ইউএনও মহোদয়কে জানানো হয়েছে। টেকনাফ উপজেলা নিবাহী কমকর্তা ইউএনও শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।