ঢাকা রোববার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ভারী বৃষ্টিতে ঢাকা ভাসে

ভারী বৃষ্টিতে ঢাকা ভাসে

ভারী বৃষ্টি হলেই ডুবে যায় রাজধানী ঢাকার অলিগলি থেকে শুরু করে মূল সড়ক। যানবাহন চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে। বাড়ে জনভোগান্তি। অথচ ঢাকায় পাঁচটি সংস্থা ও বেসরকারি আবাসন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ হওয়ার কথা, কিন্তু সংস্থাগুলো ঠিকমতো কাজ করে না। এক প্রতিষ্ঠান আরেক প্রতিষ্ঠানের ওপর দায় চাপায়।

জানা গেছে, ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ঢাকা ওয়াসা, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এবং বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) । এর বাইরে বিভিন্ন বেসরকারি আবাসন প্রতিষ্ঠানও জলাবদ্ধতা নিরসনে ভূমিকা রাখে। তবে মূল দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসা ও দুই সিটি করপোরেশনের। সংস্থাগুলোর মধ্যে ন্যূনতম সমন্বয় নেই, এমনকি সমন্বয় করার মতো মানসিকতাও নেই। নগরবাসীর অভিযোগ, বর্ষা মৌসুমে একটু ভারী বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতায় নাকাল হতে হয়। সড়কে হাঁটু সমান পানি জমে। তখন ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি মাড়িয়ে চলতে গিয়ে অনেকে দুর্ঘটনার মুখেও পড়েন। বিদ্যুতায়িত হয়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। এবার শরতের বৃষ্টিতেও বিভিন্ন এলাকায় পানি জমছে। বিমানবন্দরের মতো জায়গাও তলিয়ে যাচ্ছে। বছরের পর বছর এভাবেই চলছে। নগর কর্তৃপক্ষের টনক নড়ছে না।

তবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সংশ্লিষ্টরা জানান, নগরে জলাবদ্ধতা নিরসনে তারা তিন মাস আগ থেকেই কাজ শুরু করেন। এখনো সম্ভাব্য জলাবদ্ধতাপ্রবণ এলাকাগুলোর ড্রেন, নালা, খাল পরিষ্কারে কাজ চলছে। যেসব এলাকায় জলাবদ্ধতা বেশি হয়, তা সমাধানে আলাদা প্রকল্প নিচ্ছে সংস্থা দুটি। কিন্তু নাগরিক অসচেতনতায় করপোরেশনের কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না। অর্থাৎ, মানুষ ড্রেন, নালায় প্লাস্টিকের বোতল, পলিথিনসহ ময়লা-আবর্জনা ফেলায় পানি যথাসময়ে অপসারণ হতে পারছে না বলে মনে করে দুই সিটি করপোরেশন।

ডিএনসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ সূত্র জানায়, গত ২২ সেপ্টেম্বর বৃষ্টিতে ডিএনসিসি এলাকার অর্ধশতাধিক সড়ক-গলিতে বৃষ্টির পানি জমে। এর মধ্যে ফার্মগেট, নাখালপাড়া, মিরপুর-১ এর দারুস সালাম রোড, মিরপুর-১০ থেকে ১৪ নম্বর, বেগম রোকেয়া সরণির কাজীপাড়া মেট্রো স্টেশন, মিরপুরের প্যারিস রোড, কালশী, উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টর, আশকোনা, আগারগাঁও, শাহজালাল বিমানবন্দর সড়কে হাঁটু সমান পানি জমে। এসব স্থানে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা পর্যন্ত পানি জমে ছিল। তবে ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে তেমন পানি জমেনি। ফার্মগেটের বাসিন্দারা জানান, ‘গত কয়েক বছর ফার্মগেটের তেমন কোথায়ও পানি জমেনি। কিন্তু এবার প্রধান সড়কসহ আশপাশের অলিগলিতে হাঁটুপানি জমছে। পানি নামতে ৫-৭ ঘণ্টার বেশি সময় লাগছে। অথচ প্রতি বছর বর্ষার আগে জলাবদ্ধতা নিসরণের কথা বলে ডিএনসিসি। কিন্তু এ সমস্যা স্থায়ীভাবে সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেই।’

ডিএনসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ সূত্র জানায়, জলাবদ্ধতা নিরসনে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ২২১ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার স্ট্রম ওয়াটার ড্রেন ও ১ দশমিক ৫৪৭ কিলোমিটার বক্স কালভার্ট পরিষ্কার করা হয়েছে। নর্দমা নির্মাণ করা হয়েছে ১০৫ দশমিক ৮৯ কিলোমিটার। এছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। কিছু এলাকায় এখনো ড্রেন নির্মাণকাজ চলছে। এর মধ্যে ধানমন্ডি-২৭ এর জলাবদ্ধতা নিরসনে এরই মধ্যে নতুনভাবে ক্যাচপিট নির্মাণ করা হয়েছে। আয়রন গ্রেটিংস স্থাপন করা হয়েছে এবং নিয়মিত কুইক রেন্সপন্স টিম দিয়ে ক্যাচপিট বা ড্রেনেজ লাইন পরিষ্কার করা হচ্ছে। ফলে ২২ সেপ্টেম্বরের বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা অনেকাংশে কমেছে।

ডিএনসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা জোবায়ের হোসেন বলেন, ‘২২ সেপ্টেম্বরের বৃষ্টিতে যেসব স্থানে পানি জমেছিল, সেগুলো দ্রুত অপসারণে সকাল থেকে কাজ করেছে ডিএনসিসি। ফলে কোনো সড়কে দীর্ঘ সময় পানি জমে থাকেনি। আর যেসব এলাকা বেশি জলাবদ্ধ হয়, সেখানে ড্রেন, নালা উন্নয়নে কাজ চলছে। এসব কাজ শেষ হলে নগরে জলাবদ্ধতা অনেকাংশে কমে যাবে।’

এদিকে রাজধানীতে গত বুধবার টানা বৃষ্টির পর সকাল থেকেই বহু এলাকা পানিতে ডুবে যায়। নিউ মার্কেট, মালিবাগ, শান্তিনগর, সায়েদাবাদ, শনির আখড়া, পুরান ঢাকা, বংশাল, নাজিমুদ্দিন রোড, ধানমন্ডি, মিরপুর ১৩, হাতিরঝিলের কিছু অংশ, আগারগাঁও-জাহাঙ্গীর গেট সড়ক, খামারবাড়ি থেকে ফার্মগেট, ফার্মগেট-তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড এলাকা, মোহাম্মদপুর, মেরুল বাড্ডা, ডিআইটি প্রজেক্ট এলাকা, ইসিবি, কালশি ও সাঁতারকুলসহ বিভিন্ন সড়ক ও অলিগলিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) জানিয়েছে, তাদের ওয়ার্ডভিত্তিক ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম কাজ করছে। তবে খাল-নদীর পানির স্তর বেশি হওয়ায় নিষ্কাশন ধীরগতির ছিল। ফলে কিছু এলাকায় পানি নামতে সময় লেগেছে। এদিকে বৃষ্টি হলেই বারবার এমন জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাসিন্দারা।

বকশিবাজার এলাকার বাসিন্দা মকিদুর রহমান বলেন, বৃষ্টি মানেই জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ। গতকাল আমাদের পুরো এলাকায় হাঁটু পানি জমে ছিল, আজও কিছু অলিগলিতে পানি রয়ে গেছে। নিয়মিত এই সমস্যা হলেও সিটি কর্পোরেশন স্থায়ী সমাধান করছে না। নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী সাদিকুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রতিবার বৃষ্টিতে আমাদের দোকানপাট ডুবে যায়। লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হয়। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয় না। আমরা বারবার জানিয়েছি, তবুও সমাধান নেই। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম বা ভারি বৃষ্টি হলেই আমাদের দোকান বারবার ডুবছে।

ডিএসসিসি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ড. মোহাম্মদ সফিউল্লাহ সিদ্দিক ভূঁইয়া বলেন, ‘প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমের শুরুতে নগরীর ড্রেন ও খাল নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়। এ কারণে ভারী বৃষ্টির পরও নগরের বিভিন্ন এলাকায় পানি কম সময়ের মধ্যে নেমে যায়। তবে নিউমার্কেটসহ বেশকিছু এলাকার পানি নামতে অনেকটা সময় লাগছে।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত