ঢাকা রোববার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ছাত্র সংসদ নির্বাচন

নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা কাটল

নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা কাটল

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন নিয়ে যে শঙ্কা ছিল, তা দূর হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাকসু নির্বাচনের আগে তারা আর কোনো কর্মসূচিতে অংশ নেবেন না। ফলে আগামী ১৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া রাকসু নির্বাচন নিয়ে আর কোনো সংশয় নেই বলে মনে করছেন নির্বাচন কমিশন ও প্রার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল আলীম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রাকসুর আগে কোনো কর্মসূচি না দিতে আমাদের অনুরোধ করেছে। আমাদের দাবি ছিল-শিক্ষক ও ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় জড়িতদের বিচার করা। প্রশাসন এসব বিষয়ে আশ্বস্ত করেছে। তাই রাকসু নির্বাচনের স্বার্থে আপাতত কোনো কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে না।

বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স সমিতির সভাপতি মো. মোক্তার হোসেন জানান, ‘কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও রাকসু নির্বাচনের আগে কোনো কর্মসূচিতে যাবে না। এখন যদি কোনো কর্মসূচি দিয়ে নির্বাচন ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটানো হয়, তাহলে পরে আমাদেরই দোষারোপ করা হবে। আমরা রাকসুতে পূর্ণ সহযোগিতা করবো।’ রাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষক-কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন যে, তারা রাকসুর আগে আর কোনো কর্মসূচিতে যাবেন না। ফলে নির্বাচন নিয়ে এখন আর কোনো শঙ্কা নেই। আশা করছি, সবার সহযোগিতায় ১৬ অক্টোবর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’

এর আগে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা শাটডাউন কর্মসূচি পালন করেন। ফলে লোকবল সংকটে পড়ে নির্বাচন কমিশনকে ২৫ সেপ্টেম্বরের পরিবর্তে ১৬ অক্টোবর নির্বাচন আয়োজনের নতুন তারিখ ঘোষণা করতে হয়।

উৎসবমুখর পরিবেশে চলছে রাকসু নির্বাচনের প্রচারণা : উৎসবমুখর পরিবেশে গতকাল সকাল থেকেই চলছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের প্রচারণা। নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসায় প্রার্থীরা ছুটে চলেছেন আবাসিক হল, টুকিটাকি চত্বর, পরিবহন মার্কেট, অ্যাকাডেমিক ভবন সংলগ্ন সড়কগুলোতে। প্রচারণার ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে ভিন্নতা। কেউ ঢোল, দোতারা বাজিয়ে গান গেয়ে, কাঁঠাল পাতায় লিখে, বুক মার্ক দিয়ে আবার কেউবা বিড়াল, প্রজাপতি, বইয়ের আকৃতির প্রচারণাপত্র বিলি করছেন। ভিন্নতার মাঝেই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দিচ্ছেন পরিচয়, ব্যালট নম্বর ও নির্বাচনি অঙ্গীকার সম্পর্কিত প্রচারপত্র। নির্বাচনকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। আচরণ বিধি মেনেই প্রচারণা চালাচ্ছেন প্রার্থীরা। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটের মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি আদায় করে নেবেন। পাশাপাশি আবাসিক সংকট, খাদ্যের সমস্যা, স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়ন, লাইব্রেরির সুবিধা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতিও দেন প্রার্থীরা।

নির্বাচন ঘিরে এরইমধ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সুষ্ঠু পরিবেশে নির্বাচন সম্পন্ন করার আশ্বাস প্রধান নির্বাচন কমিশনারের। তফসিল অনুযায়ী ১৬ অক্টোবর রাকসু নির্বাচন হবে। সে অনুযায়ী শেষ সময়ে নিজেদের প্রচারণা চালাতে এভাবেই ব্যস্ত সময় পার করছেন কেন্দ্রীয় সংসদ, সিনেট ও হল সংসদের প্রার্থীরা।

রাবি প্রশাসনের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের অভিযোগ : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ, সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের কারণে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে। গত শুক্রবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর প্যানেল ?‘গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ’। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- প্যানেলের ভিপি প্রার্থী ফুয়াদ রাতুল, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী কাউছার আহম্মেদ এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) প্রার্থী নাসিম সরকার। সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, রাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হল প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত ফোন নম্বর জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল মনোনীত প্যানেল ও ইসলামি ছাত্রশিবির মনোনীত প্যানেলের কাছে সরবরাহ করেছে। এর পর থেকেই শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত ফোন ও হোয়াটসঅ্যাপে বিভিন্ন থার্ড পার্টি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রচারণামূলক বার্তা ও কল আসছে। যা শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও সাইবার নিরাপত্তার এক গুরুতর লঙ্ঘন।

এ সময় গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে কয়েকটি দাবি করেন। তাদের দাবিগুলো হলো- শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত তথ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাটাবেজ থেকে অননুমদিত সরবরাহের দায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসাসনকে শিকার করতে হবে, সংশ্লিষ্ট সবার বিরুদ্ধে অবিলম্বে প্রসাসনিক ব্যবস্থা নিতে হবে, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও সাইবার স্পেস সুরক্ষার জন্য এবং কার্যকরি সাইবার সেল গঠন করতে হবে।

প্রসঙ্গত, এবার রাকসুতে মোট ভোটার ২৮ হাজার ৯০১ জন। নারী ভোটার ১১ হাজার ৩০৫, পুরুষ ভোটার ১৭ হাজার ৫৯৬। সর্বমোট ৩০৬ জন প্রার্থী হয়েছে রাকসু, সিনেট নির্বাচনে। এদিকে হল সংসদ নির্বাচনে ৬০৩ জন প্রার্থী হয়েছেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত