ঢাকা রোববার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

সুসংবাদ প্রতিদিন

সবজি চাষ করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন চান্দিনার চাষিরা

সবজি চাষ করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন চান্দিনার চাষিরা

কুমিল্লার চান্দিনার কৃষকরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন সবজি চাষে। মৌসুমি ফসল তোলার পর থেকেই উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মাঠজুড়ে দেখা যাচ্ছে সবুজ সবজিখেত। বীজ বপন, চারা রোপণ, পরিচর্যা, আগাছা দমন থেকে শুরু করে সেচ ও সার প্রয়োগ সবকিছু নিয়েই এখন মাঠে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন চাষিরা। মৌসুমের শুরুতেই অনুকূল আবহাওয়া ও বাজারে সবজির ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকদের মুখে ফিরেছে হাসি।

উপজেলার মহিচাইল, মাইজখার, বরকইট, গল্লাই, হারং, মেহার, চিলোড়া, এতবারপুরসহ প্রায় সব ইউনিয়নেই চলছে ব্যাপক সবজি চাষ। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে দেখা যায় নারী-পুরুষ কৃষকের সমান অংশগ্রহণ। কেউ চারা রোপণ করছেন, কেউ সেচ দিচ্ছেন, আবার কেউ বাজারে পাঠানোর জন্য সবজি বাছাই ও প্যাকেটজাত করছেন। সবজি বিক্রির আয় দিয়ে অনেক পরিবার এখন নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করছে, সন্তানের পড়াশোনা ও পারিবারিক খরচ বহন করছে।

চান্দিনার কৃষি অফিস ওয়েবসাইট সূত্রে জানা যায়, এ বছর উপজেলার প্রায় ১৪৯৫ হেক্টর জমিতে শীতকালীন বিভিন্ন মৌসুমি সবজির আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে লাউ, মিষ্টি কুমড়া, ঝিঙা, করলা, বেগুন, মরিচ, শসা, বরবটি, টমেটো ও ফুলকপি অন্যতম। কৃষি বিভাগ বলছে, চলতি মৌসুমে সবজির উৎপাদন বাড়াতে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। আধুনিক বীজ, কীটনাশক ব্যবস্থাপনা ও সেচের বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে নিয়মিত।

মাইজখার ইউনিয়নের মেহার গ্রামের কৃষক হাবিব বলেন, এখন সবজির ভালো সময় চলছে। গতবার আবহাওয়া খারাপ থাকায় কিছু ক্ষতি হয়েছিল, কিন্তু এবার মাঠভরা সবুজে মন ভরে গেছে। দামও ভালো, ফলে আগ্রহ বেড়েছে। একই এলাকার নারী চাষি রাবেয়া খাতুন জানান, তিনি প্রতি বছর নিজের বাড়ির পাশে আধা বিঘা জমিতে বেগুন ও শশা চাষ করেন। এতে খরচ বাদে প্রতি মৌসুমে ৩০-৪০ হাজার টাকা লাভ হয়। অন্যদিকে মেহার গ্রামের কৃষক আলমগীর হোসেন বলেন, সবজি চাষ এখন লাভজনক পেশা। ধান বা অন্য ফসলের তুলনায় সবজি থেকে দ্রুত আয় পাওয়া যায়। বাজারে চাহিদাও বেশি।’ তিনি আরও জানান, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে টমেটো চাষ করছেন, যা আগাম ফসল হিসেবে বাজারে ভালো দাম পেতে সাহায্য করবে।

সবজির আবাদ বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় বাজারগুলোতেও জমে উঠেছে কেনাবেচা। চান্দিনা পৌর বাজার, বদরপুর বাজার , গল্লাই ও মহিচাইল হাটে প্রতিদিন সকালেই ভিড় দেখা যায় পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের। স্থানীয় ব্যবসায়ী শহীদুল ইসলাম জানান, চান্দিনার সবজি শুধু স্থানীয় বাজারেই নয়, কুমিল্লা শহর ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। এতে স্থানীয় কৃষকদের আয় বেড়েছে, কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোরশেদ আলম বলেন, ‘চান্দিনার মাটি সবজি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এখানে মৌসুমভেদে নানা জাতের সবজি উৎপাদন হয়। আমরা কৃষকদের প্রশিক্ষণ, সার-বীজ সহায়তা এবং কীটনাশক ব্যবস্থাপনায় সবসময় পাশে আছি। আমাদের লক্ষ্য, কৃষকদের সবজি চাষে আরও আগ্রহী করে তোলা।

তবে কৃষকদের কিছু সমস্যা এখনও রয়েছে। বৃষ্টিপাতের অনিয়ম, সেচের উচ্চ ব্যয়, সার ও কীটনাশকের দাম বৃদ্ধি, এবং বাজারে ন্যায্য মূল্য না পাওয়া, এসব কারণে অনেকেই মাঝে মাঝে হতাশ হয়ে পড়েন। এছাড়া ফসল তোলার পরপরই সংরক্ষণের উপযুক্ত ব্যবস্থা না থাকায় অনেক সময় সবজির ক্ষতি হয়। স্থানীয় চাষিরা সরকারের কাছে একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সংরক্ষণাগার (কোল্ড স্টোরেজ) স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন।

চান্দিনার কৃষক সমাজের আশা, যদি সরকারি সহায়তা এবং বাজার ব্যবস্থাপনা আরও শক্তিশালী হয়, তাহলে এখানকার সবজি উৎপাদন শুধু স্থানীয় চাহিদাই পূরণ করবে না, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেও রপ্তানি করা সম্ভব হবে। গ্রামের মাঠজুড়ে সবুজের সমারোহ ও কৃষকদের মুখের হাসি বলে দিচ্ছে, পরিশ্রমের ফল তারা এরইমধ্যে পেতে শুরু করেছেন। সবজি চাষ এখন শুধু জীবিকার উৎস নয়, গ্রামীণ অর্থনীতির প্রাণশক্তি হয়ে উঠছে চান্দিনায়। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে কৃষকদের পরিশ্রমে গড়ে উঠছে এই সবুজ গ্রামগুলো, যেখানে প্রতিদিন সূর্যের আলোয় ঝলমল করে ওঠে নতুন আশার অঙ্কুর।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত