
উপদেষ্টা হিসেবে সেফ এক্সিটের প্রয়োজন নেই। তবে জাতি হিসেবে আমাদের সেফ এক্সিটের প্রয়োজন রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
তিনি বলেন, এখন সেফ এক্সিট নিয়ে কথা হচ্ছে। আমরা উপদেষ্টারা নিশ্চিতভাবে জানি, আমাদের কারও কোনো সেফ এক্সিটের প্রয়োজন নেই। জাতি হিসেবে সেফ এক্সিটের প্রয়োজন রয়েছে। বিগত ১৬ বছর দুঃশাসন, গুম-খুন ও লুটপাট দেখলাম। অসুস্থ, ভয়াবহ, আত্মধ্বংসী কাঠামো থেকে আমাদের অবশ্যই সেফ এক্সিটের দরকার রয়েছে।
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে গতকাল শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ‘খসড়া জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ ২০২৫’ শীর্ষক জাতীয় পরামর্শ সভায় উপদেষ্টা এমন কথা বলেন।
আসিফ নজরুল বলেন, বাংলাদেশের জাতি হিসেবে সেফ এক্সিটের প্রয়োজন আছে। গত ৫৫ বছর দুঃশাসন, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ছিল। এই ভয়াবহ রাষ্ট্রকাঠামো থেকে সেফ এক্সিট প্রয়োজন। আইন করা প্রসঙ্গে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, আমরা হয়তো খুব ভালো কিছু আইন করে যাচ্ছি। কিন্তু ভালো আইন মানেই দেশটা ভালো হয়ে যাবে না। এটা আশা করার মতো বয়স আমার নেই। প্রতিষ্ঠান করার ক্ষেত্রে ব্যর্থতা রয়েছে বলে মন্তব্য করেন এই উপদেষ্টা। তিনি বলেন, বাহাত্তরের সংবিধানের সমালোচনা আছে, ভালো কিছু বিধানও ছিল। তাতে ছিল- রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে রাষ্ট্রপতি স্বাধীনভাবে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেবেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতি তা কখনোই করতে পারেননি। প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছাতেই তা হয়েছে। এমন প্রধান বিচারপতি ছিলেন, যারা বাংলাদেশে গণতন্ত্র ধ্বংসে নেতৃত্ব দিয়েছেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ ধরনের বিচারপতিদের কেউ কেউ এখনও রয়ে গেছেন, সরকার সংস্কারের কাজ করছেন।
ফাউন্ডেশনে ভালো আইন, কিন্তু তার ওপর খারাপ ভবন বানিয়ে লাভ নেই মন্তব্য করে আসিফ নজরুল বলেন, প্রতিষ্ঠানকে ভালো হতে হবে। সরকারে এসে মনে হয়েছে, সব ব্যক্তিকেন্দ্রিক, প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক। সভায় বক্তব্য দেন অন্তর্বর্তী সরকারের শিল্প, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান প্রমুখ। সম্প্রতি একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, উপদেষ্টাদের অনেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে ফেলেছে, তারা নিজেদের সেফ এক্সিটের (নিরাপদ প্রস্থান) কথা ভাবতেছে। তার এ বক্তব্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলে। এ নিয়ে কথা বলেন উপদেষ্টারাও। ৯ অক্টোবর ফেসবুক পোস্টে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, বাহাত্তরোর্ধ্ব বছর বয়সে যদি সেফ এক্সিটের কথা ভাবতে হয়, তা তার জন্য গভীর দুঃখের বিষয় হবে। এর আগের দিন ৮ অক্টোবর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, উপদেষ্টাদের মধ্যে কারা সেফ এক্সিট (নিরাপদ প্রস্থান) নিতে চান, এ বিষয়গুলো নাহিদ ইসলামকেই পরিষ্কার করতে হবে। উনি যদি কখনও পরিষ্কার করেন, তখন সেটি নিয়ে সরকারের বক্তব্যের কথা আসে। আজ আইন উপদেষ্টা এ নিয়ে কথা বললেন।