ঢাকা শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

গাজায় যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের কথা স্বীকার নেতানিয়াহুর

* গাজায় ১৫৩ টন বোমাবর্ষণ করেছে ইসরায়েলি সেনা * যুদ্ধবিরতিতে ‘প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’ হামাস; ফেরত দিল ১৫ জিম্মির লাশ, বাকি ১৩ * হামাসকে সোজাপথে আনতে গাজায় সেনা পাঠাতে চায় মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ: ট্রাম্প * ইসরায়েল সফরে গাজা যুদ্ধবিরতি বহাল থাকার ‘গভীর আশাবাদ’ ব্যক্ত করেছেন জেডি ভ্যান্স * নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে বরখাস্ত করলেন নেতানিয়াহু
গাজায় যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের কথা স্বীকার নেতানিয়াহুর

অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাস ও ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সই করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা ফর্মুলায় তৈরি ওই চুক্তি শুরুতে ইস্পাত-কঠিন মনে হলেও সাম্প্রতিক ঘটনায় মনে হচ্ছে আগের চুক্তিগুলোর মতো এটাও ঠুনকো বলে মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক। আন্তর্জাতিক মহলের ওই আশঙ্কায় ইন্ধন যুগিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু স্বয়ং। ইসরায়েলি পার্লামেন্ট নেসেটে বড়াই করে বলেছেন, যুদ্ধবিরতির মাঝেও গাজায় ১৫৩ টন বোমাবর্ষণ করেছে ইসরায়েলি সেনা। গত সোমবার নেসেটের শীতকালীন অধিবেশনের উদ্বোধনী বক্তব্য দেওয়ার সময় বোমা হামলার বিষয়টি স্বীকার করেন আন্তর্জাতিক আদালতে গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত নেতানিয়াহু। নেতানিয়াহুর বক্তব্যের সময় বিরোধীদলের আইনপ্রণেতারা বারবার তাকে বাধা দেন। তারা নেতানিয়াহু সরকারের নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান ও জেনেবুঝে গাজার যুদ্ধ দীর্ঘায়ত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কড়া সমালোচনা করেন। প্রতিবেদন অনুসারে, তার এই বক্তব্য গাজার যুদ্ধবিরতি চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন স্বীকার করে নেওয়ার সামিল। গর্বিত কণ্ঠে নেতানিয়াহু বলেন, ‘যুদ্ধবিরতির মধ্যে দুই ইসরায়েলি সেনা মারা পড়ে জবাবে আমরা ১৫৩ টন বোমা ফেলেছি এবং গাজা উপত্যকার বেশ কয়েকটি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছি। গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম কার্যালয় জানিয়েছে, গত ১০ অক্টোবর থেকে যুদ্ধবিরতি চালুর পর এক সপ্তাহের ব্যবধানে অন্তত ৮০ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে ইসরায়েল। এসব ঘটনায় ৯৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। শুধু রোববারেই (যেদিন ১৫৩ টন বোমা হামলা হয়) নিহত হন ৪৪ জন। এ ছাড়া, আরও ২৩০ জন আহত হয়েছেন। তেল আবিবের অভিযোগ, হামাস রাফায় ইসরায়েলি বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়েছে। ওই হামলায় দুই সেনা নিহতেরও কথা জানায় ইসরায়েল। তবে হামাস ওই হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার দায় অস্বীকার করে বলেছে, তারা যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাস হামলা চালায়। ওই হামলার প্রতিশোধ নিতে দুই বছর ধরে গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরায়েল। এতে অন্তত ৬৮ হাজার ২০০ ফিলিস্তিনি নিহত ও ১ লাখ ৭০ হাজার ২০০ জন আহত হয়েছেন।

যুদ্ধবিরতিতে ‘প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’ হামাস ফেরত দিল ১৫ জিম্মির লাশ, বাকি ১৩

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস গত মঙ্গলবার রাতে রেডক্রসের মাধ্যমে দুটি কফিন ইসরায়েলের কাছে হস্তান্তর করেছে। এই দুটি কফিনে কিব্বুৎজ নীর ওজের বাসিন্দা আড়ি জালমান জালমানোভিচ (৮৫) এবং তামির আদারের (৩৮) লাশ ছিল। এই লাশ দুটি ফেরত দেওয়ার পর হামাস জানিয়েছে, তারা যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে চলতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে চরম প্রতিকূলতার মধ্যেও। এ নিয়ে মোট ১৫টি লাশ ফেরত দেওয়া হলো। এখনও বাকি আরও ১৩ জনের লাশ। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েলের খবরে বলা হয়েছে, এই দুই লাশ রেডক্রস দক্ষিণ গাজা অঞ্চলে হামাসের কাছ থেকে গ্রহণ করে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করে। সেনারা কফিনগুলো পরিদর্শন করার পর তা ইসরায়েলের পতাকায় ঢেকে সংক্ষিপ্ত একটি অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা হয়, যার নেতৃত্ব দেন ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর প্রধান ধর্মযাজক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এয়াল ক্রিম।

এরপর কফিনগুলো গাজা থেকে তেল আবিবের আবু কাবির ফরেনসিক ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয় শনাক্তকরণ এবং মৃত্যুর কারণ নির্ধারণের জন্য। কয়েক ঘণ্টা পরে দেহের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর সেনা প্রতিনিধি পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

গত মঙ্গলবার হামাসের সামরিক শাখা ঘোষণা করেছিল যে তারা আরও দুই বন্দির দেহ ফিরিয়ে দেবে। তারা জানিয়েছিল, লাশগুলো ‘আজ উপত্যকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে’ এবং তাদের পরিচয় প্রকাশ করেনি। এদিকে তুর্কি ও কাতারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে হামাস জানিয়েছে, ইসরায়েল শান্তিচুক্তি মেনে চলছে না এবং রাফাহ সীমান্ত পোর্ট খোলার বিষয়ে এড়িয়ে চলছে। গত মঙ্গলবার হামাসের দেওয়া এক বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়েছে। হামাস জানিয়েছে, ‘রাফাহ সীমান্ত বন্ধ রাখা হচ্ছে, সেখান দিয়ে অসুস্থ ও আহতদের যাতায়াতের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না এবং গাজার মধ্যে মানবিক সহায়তা প্রবেশের বাধা দেওয়া হচ্ছে। এটি শান্তিচুক্তির লঙ্ঘন।’ একই সঙ্গে হামাস আরও জানিয়েছে, এখনো তারা ‘শান্তিচুক্তি মেনে চলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’। এর আগেও হামাস কারিগরি অক্ষমতা দেখিয়ে লাশ যথাসময়ে ফেরত দেওয়ার বিষয়ে অপারগতা প্রকাশ করে জানায়, তারা লাশ ফেরত দিতে ‘প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’। কিন্তু বিষয়টিকে অজুহাত হিসেবে নিয়ে ইসরায়েল ক্রমাগত যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেই যাচ্ছে।

হামাসকে সোজা পথে আনতে গাজায় সেনা পাঠাতে চায় মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ : ট্রাম্প

মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গাজায় সেনা পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গাজায় চলমান নাজুক যুদ্ধবিরতির মধ্যেই তিনি ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠনটির বিরুদ্ধে নতুন করে হুমকি দিলেন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে। স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার ট্রাম্প তার নিজ মালিকানাধীন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে লেখেন, ‘মধ্যপ্রাচ্য এবং এর আশপাশের বহু দেশ, আমাদের এখনকার মহান মিত্ররা, আমাকে স্পষ্টভাবে ও উৎসাহের সঙ্গে জানিয়েছেন, আমার অনুরোধে তাঁরা গাজায় প্রবেশ করে বড় ধরনের বাহিনী নিয়ে হামাসকে সোজা পথে আনতে প্রস্তুত, যদি হামাস আমাদের সঙ্গে করা চুক্তি লঙ্ঘন করে খারাপ আচরণ চালিয়ে যায়।’

ট্রাম্প নির্দিষ্ট করে বলেননি কোন কোন দেশ গাজায় সেনা পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছে। তবে তিনি ইন্দোনেশিয়ার ভূমিকার প্রশংসা করেছেন। ট্রাম্প বলেন, ‘আমি মহান ও শক্তিশালী দেশ ইন্দোনেশিয়া এবং তার অসাধারণ নেতাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, মধ্যপ্রাচ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য তারা যে সহায়তা দেখিয়েছে এবং দিয়েছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়।’ জাকার্তা ও আরও কিছু দেশ গাজায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো দেশ সরাসরি হামাসের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করেনি।

ট্রাম্প আরও বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের জন্য এমন ভালোবাসা ও ঐক্যের স্পিরিট গত এক হাজার বছরেও দেখা যায়নি! এটি সত্যিই দেখার মতো এক সুন্দর দৃশ্য! আমি এসব দেশ ও ইসরায়েলকে বলেছি, এখনও নয়! এখনও আশা আছে, হামাস সঠিক কাজটি করবে।’ ট্রাম্প সতর্ক করে দেন, ‘যদি তারা তা না করে, হামাসের শেষ হবে দ্রুত, কঠোর ও নির্মমভাবে!’

এদিকে ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল প্রায় ১০০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। ট্রাম্প প্রায়ই হামাসকে এ ধরনের হুমকি দিয়ে থাকেন। তবে যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোনো দেশ আসলে হামাসের বিরুদ্ধে এমন কিছু করতে পারবে কি না, যা ইসরায়েল এত দিনেও করতে পারেনি, তা এখনও স্পষ্ট নয়। গত দুই বছরে ইসরায়েল হামাসের রাজনৈতিক ও সামরিক শীর্ষ নেতাদের বেশির ভাগকেই হত্যা করেছে। পাশাপাশি তারা গাজা উপত্যকার প্রায় পুরো অংশ ধ্বংস করে দিয়েছে, ৬৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে এবং সেখানে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করেছে, যা জাতিসংঘের তদন্তকারীদের মতে এবং শীর্ষ মানবাধিকার সংস্থাগুলোর ভাষায় একপ্রকার গণহত্যা।

ইসরায়েল সফরে গাজা যুদ্ধবিরতি বহাল থাকার ‘গভীর আশাবাদ’ ব্যক্ত করেছেন জেডি ভ্যান্স

যুদ্ধবিরতি ও যুদ্ধোত্তর পুনর্গঠন পরিকল্পনার প্রতি সমর্থন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইসরায়েল সফরকালে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স গত মঙ্গলবার গাজা যুদ্ধবিরতি বহাল থাকবে বলে ‘গভীর আশাবাদ’ ব্যক্ত করেছেন। ইসরায়েলের কিরিয়াত গ্যাট থেকে বার্তাসংস্থা এএফপি এ খবর জানায়। হামাস গাজায় নিজেদের পুনরুজ্জীবিত করার জন্য বিরতি নিয়েছে বলে ইসরাইলের উদ্বেগ সত্ত্বেও, ভ্যান্স বলেছেন, মার্কিন-মধ্যস্থতা চুক্তির অধীনে ওয়াশিংটন গোষ্ঠীটিকে নিরস্ত্র করার জন্য কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করবে না। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সতর্ক করে দেন যে যুদ্ধবিরতি মেনে চলতে ব্যর্থ হলে এই অঞ্চলের মিত্র দেশগুলো হামাসকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য গাজায় হামলা করবে। ইসরায়েলের দক্ষিণ শহর করিয়াত গাটে এক সংবাদ সম্মেলনে ভ্যান্স বলেন, মার্কিন নেতৃত্বাধীন একটি মিশন গাজা যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ করছে।

‘গত সপ্তাহে আমরা যা দেখেছি তা আমাকে যুদ্ধবিরতি বজায় রাখার ব্যাপারে দারুণ আশাবাদী করে তুলেছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি মনে করি, আজকের অবস্থান নিয়ে সকলের গর্বিত হওয়া উচিত। এর জন্য নিরন্তর প্রচেষ্টা প্রয়োজন। এর জন্য নিরন্তর পর্যবেক্ষণ ও তত্ত্বাবধান প্রয়োজন।’ ভ্যান্স বুধবার জেরুজালেমে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুসহ ইসরায়েলি নেতাদের সঙ্গে দেখা করবেন। এদিকে যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন নিয়ে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে, হামাস জানিয়েছে, গাজা উপত্যকার ধ্বংসস্তূপের নিচে অবশিষ্ট মৃত ইসরায়েলি জিম্মিদের খুঁজে বের করার জন্য তাদের সময় ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রয়োজন। রোববার, যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর থেকে সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। দুই ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়, যার ফলে প্রতিশোধমূলক বিমান হামলার সূত্রপাত হয়। ভ্যান্সের আগমনের আগে, ট্রাম্প হামাসকে কঠোর হুঁশিয়ারি দেন। ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে ও মধ্যপ্রাচ্যের আশেপাশের অঞ্চলগুলোয় আমাদের এখনকার অনেক মহান মিত্র আমাকে জানিয়েছে যে, যদি হামাস খারাপ আচরণ করতে থাকে তাহলে আমার অনুরোধে, তারা ভারী বাহিনী নিয়ে গাজায় প্রবেশ করার এবং ‘আমাদের (এসআইসি) হামাসকে সোজা করার’ সুযোগকে স্বাগত জানাবে।

ইসরায়েলের দক্ষিণ-পশ্চিমে একটি যৌথ মার্কিন-ইসরাইলি বেসামরিক-সামরিক সমন্বয় কেন্দ্র খোলার সময়, ভ্যান্স এটিকে সমর্থন করেছেন, কিন্তু একটি দৃঢ় সময়সীমার জন্য ইসরায়েলি চাপকে উপেক্ষা করেন। তিনি বলেন, ‘আমি এমন কিছু করতে যাচ্ছি না যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এখনও পর্যন্ত করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন, যার জন্য একটি স্পষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে, কারণ এই জিনিসগুলোর অনেক কিছুই কঠিন।’ ভ্যান্স আরো বলেন, গাজায় মার্কিন সেনা মোতায়েন করা হবে না, তবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সমন্বয়ে অংশ নেবে। বিতর্কের একটি মূল বিষয় হচ্ছে হামাসের ভবিষ্যত। যুদ্ধবিরতি চুক্তি গাজায় এই গোষ্ঠীর ভূমিকা বাতিল করে দিয়েছে।

ইসরায়েল হামাসকে যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত করেছে, যদিও গোষ্ঠীটি বারবার বলেছে যে তারা চুক্তির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু তারা নিরস্ত্রীকরণের ধারণাকে প্রতিহত করেছে এবং যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর থেকে গাজার রাস্তায় তার নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে, সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সংঘর্ষ করছে।

গত রোববার গাজার দক্ষিণ শহর রাফায় ভয়াবহ সহিংসতায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে দলটি। হামাস-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে ইসরায়েল তার সৈন্যদের মৃত্যুর প্রতিক্রিয়ায় তীব্র বোমা হামলা চালিয়েছে, যার মধ্যে ৪৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংকট গ্রুপের একজন সিনিয়র বিশ্লেষক মাইরাভ জোনসেইন বলেন, ‘গাজাকে আরও ধ্বংস করা থেকে ইসরায়েলকে থামাতে পারেন একমাত্র ট্রাম্প।’ তিনি এএফপিকে বলেন, ‘ট্রাম্পকে খুশি করার জন্য নেতানিয়াহু কিছু কথা বলছেন, কিন্তু তিনি কার্যত তা করছেন না এবং যুদ্ধবিরতি খুবই ভঙ্গুর।’ জোনসেইন আরও বলেন, হামাসের ভবিষ্যৎ নিয়ে ইসরায়েলিরা এখানও উদ্বিগ্ন। সংঘর্ষ সত্ত্বেও, হামাস তাদের কাছে থাকা অল্প সংখ্যক জিম্মির দেহাবশেষ হস্তান্তর করা অব্যাহত রেখেছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী মঙ্গলবার জানায়, যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে রেড ক্রস গাজায় আটক জিম্মিদের দেহাবশেষ সম্বলিত দুটি কফিন তাদের নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করেছে। এর আগে, হামাস চুক্তির অধীনে ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া ২৮ জন জিম্মি লাশের মধ্যে ১৩ জনকে মুক্তি দিয়েছে, কিন্তু হামাস বলেছে যে অঞ্চলে ধ্বংসের মাত্রা বেশি হওয়ার কারণে অনুসন্ধান ব্যাহত হচ্ছে। রেডক্রস জানিয়েছে যে চুক্তির অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার তারা ১৫ জন ফিলিস্তিনির লাশ ইসরায়েল থেকে গাজায় স্থানান্তরের ব্যবস্থা করেছে, যার ফলে মোট লাশের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬৫।

গাজা যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণে ইসরাইলে ব্রিটিশ সেনা মোতায়েন

গাজা যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন মিশনে ইসরায়েলে ‘স্বল্পসংখ্যক’ ব্রিটিশ সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। খবর বার্তা সংস্থা এএফপি’র। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সিভিল মিলিটারি কো-অর্ডিনেশন সেন্টার (সিএমসিসি)-এ যুক্তরাজ্যের কয়েকজন পরিকল্পনা কর্মকর্তা যুক্ত হয়েছেন।’ তাদের মধ্যে একজন এই অভিযানের ডেপুুটি কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা সচিব জন হিলি জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে ব্রিটেন এই প্রচেষ্টায় ‘নোঙরের ভূমিকা’ পালন করবে। গত সোমবার লন্ডনের এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণে ভূমিকা রাখতে পারি। তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধের প্রেক্ষিতে আমরা একজন প্রথম সারির, টু-স্টার কর্মকর্তাকে বেসামরিক ও সামরিক কমান্ডের ডেপুটি কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত করেছি। সুতরাং, বৃটেন একটি নোঙরের ভূমিকা পালন করবে।’

যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ইসরাইলের দক্ষিণ-পশ্চিমে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সমন্বয় একটি কেন্দ্র উদ্বোধনের পরপরই এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়। যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নে বেশ কিছু উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। হামাস জানিয়েছে, গাজা উপত্যকার ধ্বংসস্তূপের নিচে থাকা বাকি ইসরায়েলি জিম্মিদের লাশ খুঁজে বের করতে তাদের সময় ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রয়োজন।

নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে বরখাস্ত করলেন নেতানিয়াহু

কাতারে হামলা ও গাজা সিটি দখলে অভিযানসহ নীতিগত কয়েকটি ইস্যুতে মতবিরোধের জেরে ইসরাইলের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা তজাচি হানেগবিকে বরখাস্ত করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। গত মঙ্গলবার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জেরুজালেম পোস্ট-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের নতুন প্রধান নিয়োগ দেওয়া হবে বলে তজাচি হানেগবিকে জানিয়ে দিয়েছেন নেতানিয়াহু। ফলে হানেগবির দায়িত্বকাল শেষ হচ্ছে।

এছাড়া হানেগবি নিজেও এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ইসরায়েলের সাম্প্রতিক ব্যর্থতাগুলো নিয়ে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। হানেগবি বলেছেন, ৭ অক্টোবর হামাসের হামলাকে ঘিরে ইসরায়েলের ব্যর্থতা নিয়ে ‘বিস্তারিত তদন্ত’ হওয়া উচিত এবং তিনি সেই ব্যর্থতার দায় নিজেও স্বীকার করছেন। ইসরায়েলের চ্যানেল ১২সহ স্থানীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, গত মাসে কাতারের রাজধানী দোহায় হামাস নেতাদের ওপর চালানো বিমান হামলা এবং গাজা সিটি দখলের সামরিক অভিযানের বিষয়টি নিয়ে হানেগবির সঙ্গে নেতানিয়াহুর তীব্র বিরোধ দেখা দেয়। অভিযান শুরু হওয়ার আগে মন্ত্রিসভায় হানেগবি নেতানিয়াহুর গাজা দখলের প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন।

তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘গাজা সিটি দখল করলে ইসরায়েলি বন্দিদের জীবনের ঝুঁকি বাড়বে। আমি সেনাপ্রধান ইয়াল জামিরের সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। এ কারণেই আমি প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবের বিরোধিতা করছি।’ গত ৯ সেপ্টেম্বর দোহায় চালানো ইসরায়েলি হামলায় পাঁচ হামাস সদস্য ও এক কাতারি নিরাপত্তা কর্মকর্তা নিহত হন। বিশ্বজুড়ে বহু দেশ ওই হামলার নিন্দা জানিয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত