
পাঁচ বছর আগে ঢাকার বায়ু দূষণ বন্ধে হাইকোর্ট যে নয় দফা নির্দেশনা দিয়েছিল, তা তিন সপ্তাহের মধ্যে বাস্তবায়ন করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত। বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান ও বিচারপতি উর্মি রহমানের বেঞ্চ গতকাল বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেয়। রিটকারীর আইনজীবী মনজিল মোরসেদ এ তথ্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, ঢাকার বায়ু দূষণ বন্ধে কা?্যকর ব্যবস্থা নিতে জনস্বার্থে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) জারি করা রিট আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারি হাই কোর্ট রুল জারি করে। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি বিবাদীদের নয় দফা নির্দেশনা দেয়।
এগুলো হল: ১) ঢাকা শহরে মাটি/বালি/বর্জ্য পরিবহনকারী ট্রাক ও অন্যান্য গাড়িতে মালামাল ঢেকে রাখা। ২) নির্মাণাধীন এলাকায় মাটি/বালি/সিমেন্ট/পাথর/নির্মাণ সামগ্রী ঢেকে রাখা। ৩) সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক রাস্তায় পানি ছিটানো। ৪) রাস্তা/কালভার্ট/কার্পেটিং/খোঁড়াখুঁড়ি কাজে টেন্ডারের শর্ত পালন নিশ্চিত করা; ৫) কালো ধোঁয়া নিঃসরণকারী গাড়ি জব্দ করা। ৬) সড়ক পরিবহন আইন অনুসারে গাড়ির চলাচল সময়সীমা নির্ধারণ ও উত্তীর্ণ হওয়া সময়সীমার পরে সেই গাড়ি চলাচল বন্ধ করা। ৭) অবৈধ ইটভাটাগুলি বন্ধ করা। ৮) পরিবেশ লাইসেন্স ব্যতিত চলমান সকল টায়ার ফ্যাক্টরি বন্ধ করা এবং ৯) মার্কেট/দোকানগুলিতে প্রতিদিনের বর্জ্য ব্যাগ ভরে রাখা এবং অপসারণ নিশ্চিত করতে সিটি করপোরেশনকে পদক্ষেপ নেওয়া।
মনজিল মোরসেদ বলেন, সাম্প্রতিকালে ঢাকার রায়ু দূষণের কারণে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির বর্ণনা দিয়ে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে এইচআরপিবির পক্ষে একটি সম্পূরক আবেদন বুধবার হাই কোর্টের এই বেঞ্চে জমা দেওয়া হয়।
‘গতকাল শুনানি শেষে আদেশ দিয়ে নয় দফা নির্দেশনা আগামী ৩ সপ্তাহের মধ্যে প্রতিপালন করে বিবাদীদের হাই কোর্টের দেওয়া নির্দেশনা প্রতিপালনের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী ৩০ নভ্ম্বের পরবর্তী আদেশের জন্য দিন নির্ধারণ করেছেন।’
শুনানিতে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ইতিপূর্বে আদালতের নির্দেশনা অনুসারে কতিপয় পদক্ষেপ গ্রহণ করায় গত বছর ঢাকায় বায়ুর মান উন্নত হয়েছিল।
‘কিন্তু বতর্মান সময়ে বিবাদীপক্ষ থেকে হাই কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় ঢাকার বায়ু এমনভাবে দূষিত হয়েছে যার কারণে বায়ুর মধ্যে থাকা বিভিন্ন ক্ষতিকর উপাদান মানুষের ফুসফুসে প্রবেশ করে বিভিন্নভাবে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।’ এ ব্যাপারে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনের তথ্য সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তুলে ধরে তিনি আদালতে বলেন, ঢাকার লাখ লাখ মানুষের জীবন রক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে বিবাদীদের উপর আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী নয় দফা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া প্রয়োজন। শুনানির জন্য এইচআরপিবির পক্ষে সম্পূরক আবেদন করেন আইনজীবী মো. ছারওয়ার আহাদ চৌধুরী। শুনানিতে মনজিল মোরসেদকে সহায়তা করেন আইনজীবী সঞ্জয় মণ্ডল। পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষে আইনজীবী মুনতাসির উদ্দিন, উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষে মো. শাহজাহান, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষে খসরুজ্জামান এবং ফায়ার সার্ভিসের পক্ষে মুরশিদ আক্তার শুনানি করেন।