
একসময় ঋতু অনুযায়ী সবজি ও খাবারের ধরন আলাদা ছিল। বছরের কোন সময় ভাতের সঙ্গে টক খাবেন, কোন সময় তিতা খেলে রোগবালাই ধরে না- পরিবারের ছোটরা ঋতু বৈচিত্র্যসহ এসব তথ্য বিষয়ে হেসে-খেলেই জেনে যেত। কখন কী পাওয়া যায়, অন্য সময় পাওয়া কেন যায় সেইসব পরিবার থেকেই শিখে যেত অনায়াসে। এখন প্রযুক্তির কল্যাণে বেশিরভাগ জিনিস বারো মাস পাওয়া যায়। কিন্তু জানেন কি যে সময়ে যে সবজি হওয়ার কথা সেটা অন্য ঋতুতে না খাওয়া ভালো? বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার আবহাওয়ায় শীতকাল (নভেম্বর শেষ থেক ফেব্রুয়ারি) এমন সময় যখন অনেক পুষ্টিকর ও স্বাদে ভরপুর সবজি পাওয়া যায়। এই সময় আবহাওয়া ঠান্ডা ও শুষ্ক থাকে, যা এসব ফসলের জন্য উপযুক্ত। শীতের সাধারণ সবজির মধ্যে পড়ে পাতাওয়ালা সবজি (পালং শাক, লাল শাক, মেথি শাক, সরিষা শাক), মূল ও কন্দজাত সবজি (মূলা, গাজর, বিট, নানা পদের নতুন আলু, শালগম), ফুলওয়ালা সবজি (ফুলকপি, বাঁধাকপি), ডালজাত ও ফলওয়ালা সবজি (বরবটি, মটরশুঁটি, টমেটো), শিম, ধনে পাতা আরও কত কী!
অন্য সময় খাবেন না কেন: বছরের অন্য সময় এই সবজিগুলো না খাওয়া ভালো। প্রতি ঋতুর আলাদা সবজি আছে। সেগুলো খান। কেন এ সবজিগুলো খাবেন? এর সঙ্গে আবহাওয়ার যোগাযোগ আছে। শীতকালীন তাপমাত্রা (১৫-২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস) এসব সবজির জন্য আদর্শ। গরম বা আর্দ্র আবহাওয়ায় ফুলকপি, বাঁধাকপি বা মটরশুঁটি ঠিকভাবে বাড়ে না। কৃষিবিদেরা বলেন, উষ্ণ ও আর্দ্র পরিবেশে পোকামাকড় ও ছত্রাকের সংক্রমণ বেড়ে যায়, ফলে গাছ নষ্ট হয় বা সবজি বিষাক্ত হতে পারে। মৌসুমের বাইরে চাষ করলে স্বাভাবিক স্বাদ, ঘ্রাণ ও পুষ্টিগুণ কমে যায়। যেমন- শীতের গাজর গ্রীষ্মে চাষ করলে মিষ্টতা অনেক কম হয়। আবার, সিজনের বাইরে চাষ করতে হলে গ্রিনহাউস, রাসায়নিক হরমোন বা সংরক্ষণকারী পদার্থ ব্যবহার করতে হয়, যা অনেক সময় স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ফলে মৌসুমী সবজি মৌসুমে খাওয়াই ভালো এতে স্বাদ বেশি থাকে, পুষ্টি সর্বোচ্চ থাকে, রাসায়নিক ব্যবহার কম হয় এবং স্থানীয় কৃষকও উপকৃত হন।