ঢাকা বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ব্রাজিলে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনস্থলে অগ্নিকাণ্ড আলোচনা স্থগিত

কপ-৩০ খসড়ায় জীবাশ্ম জ্বালানি বাদ, আপত্তি ৩০টির বেশি দেশের
ব্রাজিলে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনস্থলে অগ্নিকাণ্ড আলোচনা স্থগিত

ব্রাজিলে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনের (কপ-৩০) ভেন্যুর ভেতরে গত বৃহস্পতিবার আগুন লাগে। এতে কাপড় দিয়ে তৈরি ভেন্যুর ছাদের একটি অংশ পুড়ে যায়। আগুন লাগার পর সম্মেলনস্থলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। লোকজন ছুটোছুটি শুরু করেন। ফলে সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা স্থগিত হয়ে যায়। স্থানীয় সময় বেলা দুইটার দিকে ব্রাজিলের বেলেমের সম্মেলনস্থলের কয়েকটি প্যাভিলিয়নে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। চারপাশে ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়লে আতঙ্কিত লোকজন ‘আগুন, আগুন’ বলে চিৎকার করতে করতে দৌড়ে বাইরের দিকে বের হয়ে আসতে থাকেন।

গত সপ্তাহে কপ-৩০ সম্মেলনের নীতি-প্রতিশ্রুতি-চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরুর এটা ছিল তৃতীয় বড় কোনো ঘটনা। এর আগে আদিবাসী বিক্ষোভকারীরা ভেন্যুতে ঢুকে প্রবেশদ্বার অবরোধ করে শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিয়েছিলেন।

সম্মেলনের আয়োজক দেশ ব্রাজিল ও জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন দপ্তর এক যৌথ বিবৃতিতে জানায়, আগুন লাগার পর নিরাপত্তাকর্মীরা ‘দ্রুত’ সাড়া দেন। প্রায় ছয় মিনিটের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ব্রাজিলের কপ-৩০ আয়োজক কর্তৃপক্ষ জানায়, আগুনের ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়া ১৯ জন ও আতঙ্কিত দুইজনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। দেশটির অগ্নিনির্বাপণ বিভাগ ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর রাত ৮টা ৪০ মিনিটে স্থানটি আবার উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদক জানিয়েছেন, রাতে কিছু প্রতিনিধিকে আবার ভেতরে ঢুকতে দেখা যায়। খাবারের স্টলগুলো আবার চালু হয়। তবে পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন বন্ধ থাকে। গতকাল শুক্রবার তা শুরু হওয়ার কথা। ব্রাজিলের পর্যটনমন্ত্রী সেলসো সাবিনো বলেন, শর্টসার্কিট বা অন্য কোনো বৈদ্যুতিক ত্রুটির কারণে এ আগুন লাগতে পারে। তবে আগুন লাগার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করতে তদন্ত চলছে। এ ধরনের ঘটনা পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় ঘটতে পারত বলেও মন্তব্য করেন ব্রাজিলের পর্যটনমন্ত্রী। সম্মেলনের শুরুতেই জাতিসংঘের জলবায়ুপ্রধান সাইমন স্টিয়েল ব্রাজিলের কর্তৃপক্ষের কাছে নিরাপত্তাসহ নানা বিষয়ে অভিযোগ জানিয়েছিলেন।

কপ-৩০ খসড়ায় জীবাশ্ম জ্বালানি বাদ; আপত্তি ৩০টির বেশি দেশের : জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে ব্রাজিল প্রস্তাবিত খসড়া নথিতে পর্যায়ক্রমে জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধের বিষয়ে কোনো রোডম্যাপ অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এ কারণে খসড়াটির বিরোধিতা করে ৩০টির বেশি দেশ একটি চিঠিতে স্বাক্ষর করেছে। গত বৃহস্পতিবার এএফপিকে এ তথ্য জানিয়েছে কলম্বিয়ার প্রতিনিধি দল। গত বৃহস্পতিবার বেলেমের সম্মেলনস্থলে অগ্নিকাণ্ডের কারণে কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যাওয়ায় শুক্রবার সন্ধ্যায় কোপ৩০ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। বেলেম থেকে বার্তাসংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।

সম্মেলনের সভাপতি ব্রাজিলের কূটনীতিক আন্দ্রে করেয়া দু লাগো আমাজনের শহরটিতে গত সপ্তাহ থেকে জড়ো হওয়া প্রায় ২০০ দেশের প্রতিনিধির চাপের মুখে রয়েছেন। সম্মেলনের নিয়ম অনুযায়ী চূড়ান্ত নথিতে সবার সম্মতি লাগবে। আর এটাই এখন তার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁিড়য়েছে। গত বৃহস্পতিবার এএফপির পাওয়া সর্বশেষ খসড়াতেও জীবাশ্ম জ্বালানি বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। যদিও সম্মেলনের শুরু থেকেই প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দ্য সিলভা এটিকে বিশেষ অগ্রাধিকার উদ্যোগ হিসেবে প্রচার করেছেন।

ইউরোপ, লাতিন আমেরিকা, এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর স্বাক্ষর করা চিঠিতে বলা হয়, ‘ন্যায়সঙ্গত, সুশৃঙ্খল ও সমতাভিত্তিকভাবে জীবাশ্ম জ্বালানি ত্যাগের রোডম্যাপ ছাড়া আমরা কোন সিদ্ধান্তকে সমর্থন করতে পারি না।’ ফ্রান্স ও বেলজিয়ামও ওই চিঠিতে স্বাক্ষরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ‘সত্যি বলতে, বর্তমান খসড়াটি গ্রহণযোগ্য কপ ঘোষণার ন্যূনতম শর্তও পূরণ করে না।’

বৈশ্বিক উষ্ণায়নের অন্যতম প্রধান কারণ তেল, কয়লা, ও গ্যাসের মতো জীবাশ্ম জ্বালানি। এগুলোর ব্যবহার পর্যায়ক্রমে কমিয়ে আনার বিষয়টি বেলেমে সম্মেলনে আবারও জোরালোভাবে উঠে এসেছে। যদিও সম্পতি বিষয়টি একরকম চাপা পড়েই গেছিল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আলোচক জানান, চীন, ভারত, সৌদি আরব, নাইজেরিয়া ও রাশিয়াও এই প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত