ঢাকা বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

কপ-৩০ চুক্তি ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা

কপ-৩০ চুক্তি ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা

ব্রাজিলে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনের শেষ দিনে পুরো সম্মেলন ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। চুক্তিতে জীবাশ্ম জ্বালানির উল্লেখ থাকবে কি না, এই নিয়ে তীব্র বিরোধ দেখা দিয়েছে। বেলেম, ব্রাজিল থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে। কপ-৩০ এর মূল লক্ষ্য হলো গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ দ্রুত কমানোর পথ তৈরি করা। ক্রমবর্ধমান চরম আবহাওয়ার মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এখনও কার্যকর, এটা প্রমাণ করাই ছিল এর মূল উদ্দেশ্য। প্রায় দুই সপ্তাহের আলোচনার পর আয়োজক ব্রাজিল নতুন খসড়া প্রকাশ করেছে। এতে ‘ফসিল ফুয়েল’ বা ‘রোডম্যাপ’ শব্দের কোনো উল্লেখ নেই। অথচ প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা নিজেই প্রকাশ্যে এই রোডম্যাপের পক্ষে ছিলেন।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের জলবায়ু কমিশনার ভপকে হোকস্ত্রা বলেছেন, এই প্রস্তাব ‘গ্রহণযোগ্য নয়।’ তার মতে, সম্মেলন কোনো চুক্তি ছাড়াই শেষ হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি ভারাক্রান্ত মনে বলছি, এখন টেবিলে যা আছে, তা স্পষ্টত কোনো চুক্তিই নয়।’ এক ইউরোপীয় প্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, চুক্তি প্রত্যাখ্যান করায় তাদের ‘খলনায়ক’ বানানো হচ্ছে। কেউ কেউ সম্মেলন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কথাও ভাবছেন। আবার অনেকে আশঙ্কা করছেন যে, আলোচনায় ভাঙন এলে এর দায় তাদের ওপরই পড়বে। সম্মেলন গত বৃহস্পতিবার কয়েক ঘণ্টা বন্ধ ছিল।

শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সময় পেরিয়ে গেছে। অনেক দেশ প্রতিনিধি দলকে হোটেলে পাঠিয়েছে। এ সম্মেলন সপ্তাহের শেষ দিন পর্যন্ত গড়াতে পারে। ধনী দেশ, উদীয়মান অর্থনীতি ও ছোট দ্বীপরাষ্ট্রসহ ৩৬টি দেশ ব্রাজিলকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে যে তেল, কয়লা ও গ্যাস থেকে সরে আসার পরিকল্পনা ছাড়া তারা কোনো চুক্তি মানবে না।

ফ্রান্সের পরিবেশ রূপান্তরমন্ত্রী মনিক বারবুত বলেন, তেলসমৃদ্ধ রাশিয়া ও সৌদি আরব, কয়লা উৎপাদক ভারত এবং আরও অনেক উদীয়মান দেশ এটা আটকে দিয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার বিশেষ দূত অরুণাভ ঘোষ বলেন, এক পক্ষকে পরিবেশবান্ধব আর অন্য পক্ষকে পরিবেশবিরোধী বলাটা আলোচনার চেতনাকে ক্ষতি করে। তিনি জানান, রোডম্যাপ বাদ দেওয়ার কারণ হলো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এবারের সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র নেই। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অনুষ্ঠান এড়িয়ে গেছেন। কপ-৩০ প্রধান ব্রাজিলীয় কূটনীতিক আন্দ্রে কোরেয়া দো লাগো হতাশ হয়ে বলেন, যারা মনে করে যে, সহযোগিতা জলবায়ু সমস্যার সমাধান নয়, তারা আনন্দিত হবে এই দেখে যে আমরা নিজেদের মধ্যে কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে পারছি না।

তেল, কয়লা ও গ্যাসই বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য প্রধানত দায়ী। কপ-২৮ দুবাই সম্মেলনের প্রতিশ্রুতি পূরণ না হওয়ায়, এসব ধাপে ধাপে বন্ধ করার দাবি এসেছে। এছাড়া বাণিজ্য ও অর্থায়ন নিয়েও বিভাজন রয়ে গেছে। দরিদ্র দেশগুলো বন্যা ও খরার মতো জলবায়ু বিপর্যয়ের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে এবং কম-কার্বন ভবিষ্যতের পথে যেতে অর্থ সহায়তা চাইছে। প্রত্যাখ্যাত খসড়ায় বলা হয়েছে, উন্নয়নশীল দেশগুলোকে আর্থিক সহায়তা ‘বহুগুণ বাড়াতে’ হবে। এতে ২০২৫ সালের তুলনায় ২০৩০ সালের মধ্যে অভিযোজন অর্থায়ন তিনগুণ করার আহ্বানও জানানো হয়েছে।

ন্যাচারাল রিসোর্সেস ডিফেন্স কাউন্সিলের জেক শ্মিট বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) অনেক আগেই অভিযোজন অর্থায়ন তিনগুণ করতে বলা হয়েছে। বিনিময়ে তারা কিছুই পায়নি। এটা কঠিন বাস্তবতা।’ প্রথমবারের মতো খসড়ায় বাণিজ্যকে একটি স্তম্ভ হিসেবে রাখা হয়েছে। উন্নয়নশীল দেশগুলো আশঙ্কা করছে, কার্বননির্ভর পণ্যে কর আরোপ, যেমন ইউরোপের নতুন কার্বন বর্ডার অ্যাডজাস্টমেন্ট মেকানিজম, তাদের রপ্তানি আয় কমিয়ে দিতে পারে। এটিও চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করতে ইইউ রাজী নয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত