
ভূমিকম্প নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫ দিনের ছুটি ঘোষণা করার পর হল ছাড়ছেন অধিকাংশ শিক্ষার্থী। গতকাল রোববার সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে দেখা যায়। তবে কিছু শিক্ষার্থী হলে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। হল ছাড়ার নির্দেশের পরও কেন হলে থাকছেন জানতে চাইলে হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা বলেন, আমার আগামী মাসে বেশ কয়েকটি চাকরির পরীক্ষা আছে। এখন হল ছাড়লে আমি কীভাবে প্রস্তুতি নেব? আমার তো ঢাকায় কেউ নেই। তারা বলেন, ছুটিটা প্রাসঙ্গিক। তবে এখন হল ছাড়া তো সম্ভব না। আমার পরীক্ষা আছে। বাসায় গেলে পড়া হবে না। তাই, হলে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আবার যারা হল ছাড়ছেন, তাদের কয়েকজনের সঙ্গেওে কথা হয়। তাদের ভাষ্য, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা ‘যৌক্তিক’। সবাই যেহেতু ‘ট্রমায়’ আছে, সে কারণে এ মূহুর্তে হল বন্ধ করা ‘দরকার ছিল’।
স্যার এ এফ রহমান হলের একজন আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, কাল থেকে বারবার ভূমিকম্প হচ্ছে। এ অবস্থায় প্রশাসনের কী করা উচিত? তারা তো আর আজকে বা কালকে মধ্যে হল বানাতে পারবে না। হলগুলো যদি কিছুটা মেরামত করে তাও শিক্ষার্থীদের জন্য কিছুটা হলেও নিরাপদ হবে।
যে শিক্ষার্থীরা হলে থাকতে চাইছেন, তাদের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে জানতে চাইলে প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমদ বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেটাতো শিক্ষার্থীদের বোঝা উচিত। আনন্দে তো আর বন্ধ দিইনি।আমরা আশা করি শিক্ষার্থীরা এটা বুঝবেন। আমরা তাদেরকে বোঝাব।
গত শুক্রবার ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পের সময় ঢাকা বিশ্বাবদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীদের লাফিয়ে পড়ে আহত হওয়ার খবর আসে। এর মধ্যে গত শনিবার আরো তিন দফা ভূমিকম্পের পর আতঙ্ক আরো বাড়ে।
এ অবস্থায় গত শনিবার প্রথমে একদিনের জন্য ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত হয়। পরে এক সিন্ডিকেট সভায় আতঙ্কে থাকা শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫ দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়। এদিকে, কয়েক দফা ভূমিকম্পের কারণে সৃষ্ট আতঙ্ক ও নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি বিবেচনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গতকাল রোববার বিকেল ৫টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের সব হল ত্যাগের নির্দেশ দেন। শিক্ষার্থীদের কক্ষের তালার চাবি হল প্রশাসনের কাছে জমা দিতে বলা হয়। একই সঙ্গে হলের ডাইনিং ও ক্যানটিন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গতকাল রোববার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির জরুরি ভার্চ্যুয়াল সভায় এসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান। সভায় দুই সহ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, প্রক্টরসহ বিভিন্ন হলের প্রাধ্যক্ষরা অংশ নেন। সভা শেষে প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক আবদুল্লাহ-আল-মামুন ও সদস্যসচিব বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ভূমিকম্পের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া ২২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আজ রোববার বিকেল ৫টার মধ্যে প্রভোস্টদের দায়িত্বে হলগুলো খালি করা হবে। শিক্ষার্থীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যে হলত্যাগের সময় নিজের মূল্যবান জিনিসপত্র সঙ্গে নিয়ে বের হওয়ার পাশাপাশি কক্ষের চাবি সংশ্লিষ্ট হল প্রশাসনের কাছে জমা দিতে হবে।
সর্বশেষ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে প্রতিটি হলের ডাইনিং ও ক্যানটিন পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ, ছাত্রীদের হল ছাড়তে হবে আজ সকালে : রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে কয়েকবার ভূমিকম্পের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে চার দিন ক্লাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। একই কারণে ৪ ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত পরীক্ষা বন্ধ থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী হলের শিক্ষার্থীদের আজ সোমবার সকাল ১০টার মধ্যে হল ত্যাগ করতে হবে। গতকাল রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সভার পরে এ সংক্রান্ত জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধের কথা বলা হয়।
এদিকে ভূমিকম্প-পরবর্তী উদ্ভূত জরুরি পরিস্থিতিতে ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আজ বিকেল পাঁচটার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ভূমিকম্প-পরবর্তী উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল জরুরি সভা করে। সভায় শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তার দিক বিবেচনা করে আজ থেকে (২৪ নভেম্বর ২০২৫ থেকে ২৭ নভেম্বর ২০২৫ তারিখ পর্যন্ত) বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ থাকবে। ৩০ নভেম্বর ২০২৫ থেকে ৪ ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত শুধু অনলাইনে ক্লাস চলবে ও পরীক্ষা বন্ধ থাকবে। তবে যেসব বিভাগে মৌখিক পরীক্ষা চলছে, সেসব বিভাগ-সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের লিখিত সম্মতি সাপেক্ষে মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করতে পারবে। এ সময়ে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার এবং উন্মুক্ত পাঠাগার বন্ধ থাকবে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী হল আজ সোমবার ২৪ নভেম্বর ২০২৫ তারিখ থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। শিক্ষার্থীদের ২৪ নভেম্বর ২০২৫ সকাল ১০টার মধ্যে হল ত্যাগ করতে হবে। ইতিমধ্যে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি’র মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ভবন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ঝুঁকি মূল্যায়ন করা হবে। কমিটি’র রিপোর্টসহ ৪ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে পুনরায় সভা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে। এ সময়ে অফিস কার্যক্রম যথারীতি চালু থাকবে।
সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাবিনা শরমীন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অনুষদের ডীন, সকল ইনস্টিটিউটের পরিচালক, বিভাগের চেয়ারম্যান, রেজিস্ট্রার, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক, জকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং প্রক্টর উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গতকাল সব ক্লাস পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছিল ভূমিকম্পের উদ্বেগ ও আতঙ্কের কারণে। গতকাল শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, ‘আজকের সব ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিশিয়াল কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলবে। শিক্ষার্থীদের পরিবহন বন্ধ থাকবে। শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাস চালু থাকবে। জকসু নির্বাচনের কার্যক্রম পূর্বনির্ধারিতভাবেই চলবে। স্থগিতকৃত পরীক্ষাগুলোর নতুন সময়সূচি সংশ্লিষ্ট বিভাগ যথাসময়ে ঘোষণা করবে।’