ঢাকা সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

বেদানা খাওয়ার উপকারিতা

বেদানা খাওয়ার উপকারিতা

দেখতে যেন ছোট্ট রত্নভরা বাক্স! বেদানার লালচে দানাগুলো শুধু চোখ জুড়ানোই নয়, পুষ্টিগুণেও ভরপুর। প্রাচীনকাল থেকেই এই ফলকে শক্তিবর্ধক ও রোগ প্রতিরোধের জন্য বিশেষভাবে ব্যবহার করা হয়ে আসছে। তবে যদি টানা এক মাস প্রতিদিন বেদানা খান- তাহলে শরীরে কী ধরনের পরিবর্তন আসে? গবেষণা বলছে, পরিবর্তনগুলো কিন্তু বেশ উল্লেখযোগ্য। হৃদযন্ত্র পায় অতিরিক্ত সুরক্ষা : এনআইএইচণ্ডএ প্রকাশিত এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, আট সপ্তাহ প্রতিদিন বেদানার রস খেলে রক্তচাপ ও ট্রাইগ্লিসারাইড কমে। একই সঙ্গে বাড়ে ভালো কোলেস্টেরল (এইচডিএল), কমে দেহের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ও প্রদাহ।

ত্বকে ফিরে আসে স্বাভাবিক দীপ্তি : ২০২২ সালের এক প্লেসবো-কন্ট্রোলড গবেষণা জানায়, দৈনিক বেদানা-এক্সট্র্যাক্ট খেলে ত্বকের তেল নিঃসরণ কমে, মাইক্রোবায়োমের ভারসাম্য ভালো হয় এবং গভীর বলিরেখা চোখে পড়ার মতোই কমে। প্রদাহ কমে শরীর থাকে হালকা : দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহই অনেক রোগের মূল কারণ। হেলথলাইন জানাচ্ছে, বেদানায় থাকা ‘পিউনিকালাজিন’ নামের যৌগ শরীরের অভ্যন্তরীণ প্রদাহ কমাতে অত্যন্ত কার্যকর।

স্মৃতি ও মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে : ২০২৩ সালের একটি সিস্টেমেটিক রিভিউ অনুসারে, প্রতিদিন বেদানা খেলে জ্ঞানীয় ক্ষমতা বাড়ে ও স্মৃতিশক্তির অবনতি কমে। আবার এনআইএইচণ্ডএর এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ২৩০ মিলি বেদানার রস এক বছর পান করলে ভিজ্যুয়াল লার্নিং ও স্মৃতি ধরে রাখার ক্ষমতা বজায় থাকে। গাট হেলথ হয় আরও শক্তিশালী : বেদানা প্রিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে, অর্থাৎ অন্ত্রে ভালো ব্যাকটেরিয়া বাড়তে সাহায্য করে। এর ফাইবার হজম ভালো করে, পুষ্টি শোষণ বাড়ায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সহায়ক।

রক্তে শর্করা থাকে নিয়ন্ত্রণে : বেদানা সরাসরি ওষুধের বিকল্প নয়, তবে নিয়মিত খেলে রক্তে শর্করার ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করে। বিশেষ করে সুষম খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে খেলে উপকার আরও বেশি।

ব্যায়ামের পর পেশির পুনরুদ্ধার দ্রুত হয় : এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২১ দিন বেদানা-এক্সট্র্যাক্ট গ্রহণ করা অ্যাথলিটদের ব্যায়ামজনিত অক্সিডেটিভ ক্ষতি কমেছে। আরেক গবেষণায় সাইক্লিস্টদের সহনশীলতা ও স্ট্যামিনা দুটোই বেড়েছে। ফলে এক মাস পর ব্যথা কম, পুনরুদ্ধার দ্রুত, এমন উপকার মিলতে পারে।

রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে : একটি বড় বেদানায় রয়েছে দৈনিক ভিটামিন-ঈ এর প্রায় ৩২ শতাংশ। সঙ্গে আছে ফোলেট, পটাশিয়াম ও নানা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এগুলো শরীরকে সংক্রমণ প্রতিরোধে শক্তিশালী করে। বেদানার অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল গুণও রোগজীবাণুর বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়।

কিডনি থাকে পরিষ্কার ও সুস্থ : গবেষণা বলছে, বেদানা কিডনিতে পাথর তৈরির ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এটি অক্সালেট, ক্যালসিয়াম ও ফসফেটের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, ফলে মূত্রনালীতে স্ফটিক জমার প্রবণতা কমে। নিয়মিত খেলে দেহের ডিটক্স প্রক্রিয়াও শক্তিশালী হয়।

ওজন কমাতেও ভূমিকা রাখে : এনআইএইচণ্ডএ উদ্ধৃত ৩০ দিনের এক স্টাডিতে দেখা গেছে, বেদানা-এক্সট্র্যাক্ট ওজন, রক্তে গ্লুকোজ, ইনসুলিন, ট্রাইগ্লিসারাইড ও কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করেছে। এটি অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হওয়ায় বিপাকক্রিয়াও উন্নত করে।

সুতরাং, প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় একটি বেদানা যুক্ত করলেই মিলতে পারে অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতা। রঙ, স্বাদ আর পুষ্টি সব দিকেই অনন্য এই ফল।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত