
সুস্থ থাকার জন্য সব সময় বড় ধরনের জীবনযাপনের পরিবর্তন প্রয়োজন হয় না। অনেক ক্ষেত্রে ছোট ছোট অভ্যাসই দীর্ঘমেয়াদে বড় উপকার এনে দিতে পারে। এমনই একটি সহজ কিন্তু কার্যকর খাদ্যাভ্যাসের কথা বলেছেন হার্ভার্ড ও স্ট্যানফোর্ডে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট ডা. সৌরভ শেঠি। তার মতে, প্রতিদিন মাত্র ৩০ গ্রাম লবণবিহীন বাদাম খাওয়ার অভ্যাস মস্তিষ্ক ও অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য বিশেষভাবে উপকারী হতে পারে।
সম্প্রতি তিনি জানান, বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে- যারা নিয়মিত প্রতিদিন ৩০ গ্রাম বাদাম খান, তাদের ক্ষেত্রে সব ধরনের ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি প্রায় ১৭ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। যারা একেবারেই বাদাম খান না, তাদের তুলনায় এই পার্থক্য বেশ স্পষ্ট।
বাদাম কেন এত উপকারী : ডা. শেঠির ব্যাখ্যায়, বাদাম পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি খাবার। এতে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, স্বাস্থ্যকর অসম্পৃক্ত চর্বি ও পর্যাপ্ত ফাইবার। এসব উপাদান মস্তিষ্কের কোষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে এবং অন্ত্রের কার্যকারিতা ভালো রাখতে সাহায্য করে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্মৃতিভ্রংশ বা ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি যে বাড়ে, তা কমাতে নিয়মিত বাদাম খাওয়ার অভ্যাস সহায়ক হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি হজমশক্তি উন্নত করা ও অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়া সক্রিয় রাখতেও বাদামের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
৩০ গ্রাম বলতে কতোটা : অনেকের কাছেই ৩০ গ্রাম বাদামের পরিমাণ বোঝা কঠিন হতে পারে। বিষয়টি সহজভাবে বোঝাতে ডা. শেঠি বলেন, ৩০ গ্রাম মানে মূলত একমুঠো বাদাম। যেমন- প্রায় ২০টি কাঠবাদাম। ১৫টি কাজুবাদাম। ১৪টি আখরোটের অর্ধেক টুকরো। ২০টি হ্যাজেলনাট অথবা ৩০টি পেস্তা। এই পরিমাণ বাদামে সাধারণত ১৭০-২০০ কিলোক্যালরি থাকে, যা দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় যুক্ত করার জন্য খুব বেশি নয়।
এই অভ্যাস সহজে বজায় রাখতে ডা. শেঠি নিজে দুপুরের খাবারের সময় বা লাঞ্চের সঙ্গে একমুঠো মিশ্র বাদাম খান। এতে দীর্ঘ সময় পেট ভরা থাকে এবং অস্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস খাওয়ার প্রবণতাও কমে।
সব মিলিয়ে, সুস্থ মস্তিষ্ক ও ভালো হজমশক্তির জন্য জটিল ডায়েটের প্রয়োজন নেই। প্রতিদিন একমুঠো লবণবিহীন বাদামই হতে পারে একটি সহজ ও কার্যকর সমাধান। যদিও প্রত্যেকের শারীরিক অবস্থা আলাদা, তবুও সাধারণভাবে খাদ্যাভ্যাসে লবণবিহীন বাদাম যুক্ত করা বেশিরভাগ মানুষের জন্য নিরাপদ ও উপকারী বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে কোনো সমস্যা থাকলে অবশ্যই চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া উচিত। মনে রাখতে হবে, ভাজা বা অতিরিক্ত লবণযুক্ত বাদাম এই স্বাস্থ্যগুণ অনেকটাই নষ্ট করে দিতে পারে।