ঢাকা রোববার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩ পৌষ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

সুসংবাদ প্রতিদিন

মাল্টা চাষে স্বপ্ন দেখছেন কৃষক

মাল্টা চাষে স্বপ্ন দেখছেন কৃষক

ফেনীর সোনাগাজীতে ছোট ফেনী নদীর তীরে কৃষক মোশারফ হোসেনের প্রায় ছয় একর জায়গা জুড়ে বৃহত্তর মাল্টা বাগান। শীতের শুরুতে বাগানে ফুল এসেছিল। প্রতিটি গাছে গড়ে প্রায় ১৫-২০টি ফল ধরেছে। জুলাইয়ের শুরু থেকে মাল্টা বাজারজাত শুরু হয়েছে। কেজি ১৫০ টাকা ধরে প্রায় ১২ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করেছেন বলে জানান কৃষক মোশারফ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরসহ সরকারি বেসরকারি সংস্থা থেকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা পেলে এই মাল্টা বাগানটি হতে পারে ফেনী জেলা তথা বৃহত্তর নোয়াখালীর বৃহৎ মাল্টা বাগান। এই বাগানটি সফল হলে তার দেখাদেখি আশপাশের অনেক মানুষ মাল্টা চাষে উদ্বুদ্ধ হবে। দেশে মাল্টার চাহিদা পূরণে এই বাগানটি অবদান রাখার পাশাপাশি পাল্টে যাবে দেশের অর্থনৈতিক চিত্র। উৎপাদন শুরু হলে আমদানি নির্ভরতা কিছুটা হলেও কমবে বলে মনে করেন স্থানীয়রা। ব্যক্তিগত উদ্যোগে সোনাগাজী উপজেলার চরদরবেশ ইউনিয়নের উত্তর চর সাহাভিকারী গ্রামে ছোট ফেনী নদীর তীরে এই বৃহত্তর মাল্টা চাষাবাদ শুরু করেছেন মোশারফ হোসেন নামের এক কৃষক।

মোশাররফ হোসেন জানান, ছোট ভাই ইমাম হোসেনসহ দীর্ঘ ২২ বছর সৌদি আরবে চাকুরী ও বিভিন্ন ব্যবসা বাণিজ্য করেছিলেন। সৌদি আরবে ব্যবসা মন্দা দেখা দেওয়ায় মোশাররফ হোসেন দেশে ফিরে আসেন। বেকারত্ব গোছাতে নিজস্ব ছয় একর জমিতে মাল্টা ফল চাষ করার উদ্যোগ নেন। তিনি জানান, ইউটিউব ও ফেসবুকে মাল্টা চাষের প্রতিবেদন দেখে তিনি উদ্বুদ্ধ হন। ছয় একর জমির মধ্যে প্রাথমিকভাবে চার একর জমিতে দুই হাজার বারি-১ জাতের মাল্টা গাছের চারা রোপণ করেন। অতি লবনাক্ততার কারণে রোপিত অনেকগুলো চারা নষ্ট হয়ে যায়। বর্তমানে তার মাল্টা বাগানে এক হাজার ৪০০ মাল্টা গাছের চারা রয়েছে। মাল্টা গাছের সুরক্ষার জন্য বাগানের চারপাশে তিনি আরও তিন শতাধিক লেবু গাছের চারা রোপণ করেছেন। চাষি মোশাররফ জানান, ২০১৯ সালের শুরুতে তিনি সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মাল্টার উন্নত (বারি-১) জাতের চারাগুলো সংগ্রহ করে বাগানে রোপণ করেন। পাশাপাশি বাগানে বেশ কিছু কমলা গাছও লাগিয়েছেন। শীতের মৌসমে মাল্টা বাগানে গাছের সারির মাঝে মধ্যে শীতকালীন শাকসবজি, ধনিয়া ও সরিষা চাষ করা হয়েছিল। খাল ও নদী বেষ্টিত আরও দুই একর জমিতে তিনি লাগিয়েছেন পাহাড়ি গাছ। ২০২২ সালে আরও এক একর জমিতে উন্নত জাতের আম গাছের বাগান করেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। মোশাররফ আরও জানান, মাল্টা বাগানের চারা সংগ্রহ, রোপণ ও পরিচর্যা বাবদ ২০২১ সাল পর্যন্ত তিনি প্রায় ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। ফল আসা পর্যন্ত আরও ২০ লাখ টাকা খরচ হয়। এখন বছরে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা খরচ হয়। বর্তমানে প্রতিটি গাছ ৮-১০ ফুট উচ্চতার, প্রতিটি গাছে গড়ে ১৫-২০টি মাল্টা ধরেছে। চার একর জমিতে প্রায় এক হাজার ৪০০ গাছে, এবার প্রায় ৮ হাজার কেজি মাল্টা উৎপাদন হয়েছে। যার বিক্রয়মূল্য প্রায় ১২ লাখ টাকা। নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস থেকে মাল্টা চাষে কিছু পরামর্শ, সার ও কীটনাশক, বৈদ্যুতিক মোটরসহ বেশ কিছু সহায়তা পেয়েছেন। আগামীতে আরও সহায়তা করবে এমন আশ্বস্ত করেছেন কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা। বাগানটি ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার উত্তর চর সাহাভিকারী গ্রামে অবস্থিত হলেও ফেনী বা সোনাগাজী কৃষি অফিসের কোন ধরনের পরামর্শ ও সহায়তা পাননি বলে জানিয়েছেন মোশাররফ হোসেন। আশপাশের লোকজন ও মাল্টা চাষে নিয়োজিত শ্রমিকরা জানায়, কৃষি অফিসের সহযোগিতা পেলে আরও অনেকেই মাল্টা চাষে উদ্বুদ্ধ হবে এবং দেশও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে।

চরদরবেশ ইউপির বাসিন্দা আবুল কালাম জানান, বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয় ও সহজলভ্য ফল এটি। প্রায় সারা বছরই বাজারে পাওয়া যায়, অনেকের প্রিয় এই ফল শিশুরাও খেতে বেশ পছন্দ করে। স্থানীয় চিকিৎসক গোলাম মাওলা বলেন, মাল্টাতে আছে প্রচুর ভিটামিন সি, ভিটামিন বি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং চর্বিমুক্ত ক্যালরি রয়েছে। প্রবীণ, গর্ভবতী ও প্রসূতি নারীর নিয়মিত মাল্টা খাওয়া উচিত। কারণ এতে দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ে। বেশ জনপ্রিয় ফল হলেও স্থানীয়ভাবে মাল্টার উৎপাদন খুবই কম। বাংলাদেশের চাহিদার অধিকাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। বারি-১ নামে একটি উন্নত মাল্টার জাত বাংলাদেশে উদ্ভাবিত হয়েছে যা অনেক রসালো, সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। জেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশের পাহাড়ি এলাকাগুলোতে কিছু পরিমাণ মাল্টা চাষ করা হচ্ছে, বর্তমানে সোনাগাজীর চর এলাকায় মাল্টা চাষাবাদ হচ্ছে। মোশারফ হোসেন ব্যক্তিগত উদ্যোগে নিজস্ব চার একর জমিতে মাল্টার চাষাবাদ শুরু করেছেন। মাল্টা চাষে উদ্বুদ্বকরণসহ চাষি যে ধরনের সহযোগিতা চাইবে কৃষি দপ্তরের পক্ষ থেকে তাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত