
বিদ্যমান পদ্ধতি এবং সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতির নির্বাচনব্যবস্থায় নানা দুর্বলতা তুলে ধরে নতুন নির্বাচন পদ্ধতির প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। দলটির উত্থাপন করা নতুন পদ্ধতির নাম মিক্সড মেম্বার পিআর (এমএমপি)। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে ‘জনমতের প্রতিফলনে কার্যকর নির্বাচন ব্যবস্থা মিক্সড মেম্বার পিআর (এমএমপি)’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে নতুন এ পদ্ধতি উপস্থাপন করা হয়। গোলটেবিলের আয়োজন করে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক। তিনি দাবি করেন, সুষ্ঠু নির্বাচন ও সংসদে প্রকৃত ভোটের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে নতুন এই পদ্ধতি বেশি কার্যকর। পাশাপাশি বিদ্যমান নির্বাচনপদ্ধতি এবং পিআর পদ্ধতি নিয়ে বর্তমানে যে সংকট চলছে, নতুন এই পদ্ধতিতে সেই সংকটও নিরসন সম্ভব। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সংস্কারের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তিতে বড় পার্থক্য আছে উল্লেখ করে মামুনুল হক বলেন, ‘সরকার নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণা করেছে। কিন্তু অনেকের মধ্যে শঙ্কা রয়েছে, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন করতে যে প্রস্তুতি দরকার, আদৌও সরকারের সেটা কতোটা রয়েছে। আমি বলতে চাই, পর্যাপ্ত সংস্কারের রূপরেখা সরকার ঘোষণা করুক এবং খুনিদের বিচার দৃশ্যমান করুক। এরপরই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে সরকার একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করবে।’ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা থাকলেও একসঙ্গে চলার মানসিকতা রয়েছে উল্লেখ করে মামুনুল হক বলেন, ‘দেশ ও জাতির কল্যাণে জুলাই আগস্টের ঐক্যকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। রাজনীতি ও নির্বাচনব্যবস্থা নিয়ে যে মতভেদ আছে, সেগুলো আমরা নিরসনের চেষ্টা করব। চলমান সংকটে আমাদের আজকের উত্থাপিত এমএমপি পন্থা সমস্যা সমাধান করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।’ গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নেন ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান। মিক্সড মেম্বার পিআর (এমএমপি) পদ্ধতির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এমএমপি পদ্ধতির বড় দুর্বলতা হলো, এর মাধ্যমে সংসদীয় আসন কত হবে? সেটা নির্দিষ্ট নয়। এটা নিয়ে আলোচনা দরকার। সর্বোপরি আমরা নির্বাচন ব্যবস্থার পরিবর্তন চাই। বিদ্যমান পদ্ধতিতে ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান হবে। দল হিসেবে আমরা অনেক আগে থেকেই বিদ্যমান নির্বাচনপদ্ধতির সমালোচনা করেছি। কিন্তু একটা দল নতুন বাংলাদেশ নির্বাচনের এই পন্থায় প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ জুলাই গণ-অভ্যুত্থান কোনো দলকে কেন্দ্র করে হয়নি উল্লেখ করে গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক বলেন, ‘পুরোনো নির্বাচনপদ্ধতি ফেল করেছে বলেই আমরা নতুন পদ্ধতি চাই। কোনো দলকে কেন্দ্র করে সংস্কারের আলোচনা হওয়া উচিত নয়। পরিবর্তন যদি এবার না হয়, পঞ্চাশ বছরে যেটা হয়নি, সেটা ভবিষ্যতেও হবে না।’ জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক আতিক মুজাহিদ বলেন, ‘১৯৪৭ সাল থেকে আজ পর্যন্ত আমাদের কোনো সনদ হয়নি। এটা দুঃখজনক। আমাদের ভাবতে হবে কোনো পদ্ধতিতে রাষ্ট্র ভালো চলবে। সেই আলোকে পিআর হতে পারে সবচেয়ে ভালো। আজকে যে পদ্ধতি উত্থাপন করা হয়েছে, মধ্যবর্তী পন্থা হিসেবে এটাও অসাধারণ। তবে আমরা এক দিনে সবটা অর্জন করতে পারব না। ধীরে ধীরে অগ্রসর হতে হবে। যারা পিআর গ্রহণ করতে চায় না, তারা ভাবে, ৪০ শতাংশ ভোট পেয়ে হয়তো ক্ষমতায় যাওয়া যাবে না। কাজেই রাষ্ট্রের রাজনৈতিক শুদ্ধি দরকার। সঙ্গে আমরা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কারের কথা বলছি, কারণ শুধু পিআর হলে আর সংস্কার অর্জন না হলে দেশের দখলবাজি বন্ধ হবে না।’ বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব আতাউল্লাহ আমিনের সঞ্চালনায় গোলটেবিল আলোচনায় বক্তব্য দেন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির আবদুর রব ইউসুফী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির ইউসুফ আশরাফী, নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মুসা বিন এজহার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমআইএস বিভাগের অধ্যাপক আরিফুল ইসলাম প্রমুখ।