ঢাকা শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

আমনের বাম্পার ফলনের আশায় হাসছে রংপুরের কৃষক

আমনের বাম্পার ফলনের আশায় হাসছে রংপুরের কৃষক

কৃষি প্রনোদনার করণে চলতি আমন মৌসুমে রংপুর অঞ্চলে আমনের ধানের খেতে সবুজে ভরে গেছে। বিস্তীর্ণ মাঠ এখন সবুজের সমারোহে ভরে উঠেছে। বাতাসে ঢেউ খেলছে বোরো-আমন ধানের সবুজ পাতা। এই দৃশ্য দেখে কৃষকের মনে জেগেছে স্বপ্ন বাম্পার ফলনের। এবারের মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং কৃষকের নিবিড় পরিচর্যা, সময়মতো সার ও কীটনাশক প্রয়োগের কারণে ফলনের ব্যাপারে আশাবাদী কৃষক ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

কৃষককুল ক্ষেত পরিচর্যায় সময় পার করছেন। কেউ সার ছিটাচ্ছেন। কেইবা এ কিঠ নাশক পরিচর্যায় করে যাচ্ছেন। এবার আমন ঘুরেই বাম্পার ফলন ধানের সম্ভাবনার কথা বলছেন কৃষক। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় এবার ৬ লাখ ২০ হাজার ৪০০ হেইম জামিতে আমনের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে রংপুরে ১ লাখ ২৬ হেক্টর, গাইবান্ধা জেলায় ১ লাখ ২০ হাজার ১২০ হেক্টর, কুড়িগ্রামে ২ লাখ ২৬ হাজার ৫০০ হেক্টর, লালমনিরহাটে ৮৬ হাজার ৬৫০ হেক্টর ও নীলফামারীতে ১ লাখ ১৩ হাজার ২২০ হেক্টর।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শে এবারের চাষাবাদ আগের বছরের তুলনায় আরও ভালো হয়েছে। অগ্রহায়ণ মাসের মাঝামাঝি ধানকাটা শুরু হবে। তখন পূর্ণ হবে কৃষকের স্বপ্ন। আগস্ট মাসজুড়ে অনাবৃষ্টিতে মৌসুম পেরিয়ে গেলেও রংপুর অঞ্চলের চাষিরা ধান রোপণ করতে পারে নাই।

কৃষরা মনে করেছিল রোপা আমন ধান মূলত বৃষ্টিনির্ভর হলেও এবছর কৃষকদের সেচের ওপর নির্ভর করেই আবাদ করতে হচ্ছে, ফলে পড়ছে অতিরিক্ত খরচ। তবে কৃষি বিভাগের দাবি, ফলন ভালো হলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। সরেজমিন দেখা গেছে, রোপা আমনের ভরা মৌসুমেও একরের পর একর জমি খালি পড়ে আছে।

বর্ষাকালেও মাঠে জমেনি প্রয়োজনীয় পরিমাণ বৃষ্টির পানি। তাই সেচ পাম্প চালিয়ে জমি তৈরি করছেন কৃষকরা। এতে প্রতি হেক্টরে চারা রোপণের খরচই বেড়ে গেছে দুই হাজার টাকার বেশি। রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার জয়রামপুর আনোয়ার গ্রামের কৃষক কচি মুদ্দিন বলেন, ‘বৃষ্টি নেই, আছে শুধু রোদ, ঘাম আর বাড়তি খরচের বোঝা। জমি ফেটে যাচ্ছে, চারা শুকিয়ে যাচ্ছে। শ্যালো পাম্পে পানি তুলে আমন রোপণ ও ধানের চারা বাঁচাতে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি বাবা।’

এ অবস্থায়ও আশাবাদী কৃষি বিভাগ। রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, চলতি বছর রংপুর জেলায় ২৭ হাজার কুষককে কৃষি প্রনোদনা দেয়া হয়েছে । প্রতি কৃষককে ৫ কেজি বীজ ধান , সার ডিএপি ১০ কেজি এবং এম ওপি ১০ কেজি করে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন আরও ‘আমন ধান বৃষ্টিনির্ভর ফসল। কৃষকরা বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করেছিল। আগষ্টের শেষের দিকে বৃষ্টি হওযায় কৃষক আমন ধান রোপন করেছে। ফলন ভালো করতে সেচ দিয়ে যথাসময়ে রোপণের পরামর্শ দিচ্ছি।’

রংপুর কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা ও নীলফামারী এই পাঁচ জেলায় চলতি মৌসুমে আমন ধান রোপণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ লাখ ২০ হাজার ৩৪০ হেক্টর।

জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে চারা রোপণ শুরু হয়ে চলবে আগস্টের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত। তবে কৃষকদের ভাষ্য, ভরা বর্ষা আর আমনের মৌসুমে এবার বৃষ্টি নেই বললেই চলে। প্রতি হেক্টরে সেচ দিয়ে চারা রোপণে খরচ হচ্ছে গড়ে ২ হাজার টাকার বেশি। ইতোমধ্যে ২৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হয়েছে।

মৌসুম শেষে বৃষ্টি না হলে এই খরচ দাঁড়াতে পারে প্রায় ১২৪ কোটি ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকায়। সম্প্রতি অন্তত ১০টি মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, বৃষ্টিহীন অবস্থায়ও ডিজেলচালিত শ্যালো ও সেচ পাম্প দিয়ে আমন রোপণে ব্যস্ত কৃষকরা। কেউ জমিতে চারা রোপণ করছেন, কেউবা রোপণ করা চারায় পানি দিয়ে তা বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। রংপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ‘জুলাই ও আগস্ট মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৪৬৪ মিলিমিটার। প্রয়োজনীয় পরিমাণ বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষকদের জমিতে কৃত্রিমভাবে সেচ দিতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘বাতাসে জলীয় বাষ্প বেশি থাকায় ভ্যাপসা গরম থাকবে। গত বছর জুলাই ও আগস্ট বৃষ্টিপাত হয়েছিল ৪৫৫ মিলিমিটার, এবার তা কমে হয়েছে মাত্র ২০০ মিলিমিটার।’

বিনা রংপুর কেদ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কৃষিবিদ ডক্টর মো: রফিকুল ইসলাম জানান চলতি অর্থবছরে খরিপ-২ আমন মৌসুমে বিনা রংপুর হতে বিনা উদভাবিত উচ্চ ফলনশীলও স্বল্পজীবন কালীন ধানের বিভিন্ন জাতের প্রায় ১৭ টন বীজ কৃষক ও উদ্যোক্তা পর্যায়ে বিতরণ করেছে। এতে রংপু বিভাগের প্রায় ৬ হাজার কৃষক উপকারভোগী উপকৃত হয়েছে।

তিনি বলেন, স্বল্প জীবনকালের জাত চাষের ফলে আমন ফসল গড়ে তোলে রবি শস্য আবাদে ও ফলে শস্যেও নিবিড়তা চালাবে বলে বিনা রংপুরের বিশ্বাস। বিনা ১৭ একটি খুবই আগাম জাত, যার গড় ফলন সেক্টরে মেট্রিন ৬.৫ টন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত