
চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত শহীদুল ইসলাম শহিদ হত্যা মামলায় পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক তিন মন্ত্রীসহ ২৩১ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তার দেওয়া অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছেন আদালত। এটি চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলার প্রথম কোনো অভিযোগপত্র গ্রহণ। গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট চতুর্থ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ মোস্তফা শুনানি শেষে পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্র গ্রহণ করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মো. রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘মামলার বাদী শফিকুল ইসলাম তদন্ত কর্মকর্তার দাখিল করা অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে নারাজি আবেদন করলে আদালত তা খারিজ করে দেন এবং চার্জশিট সরাসরি গ্রহণের আদেশ দেন।’ এর আগে, গত ২৪ জুলাই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চান্দগাঁও থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. ফয়সাল তদন্ত শেষে এই অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেন। অভিযোগপত্রে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সাবেক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, আ জ ম নাছির উদ্দীন, সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, এমএ লতিফ, আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দীন নদভী, মহিউদ্দিন বাচ্চু, আবদুচ ছালাম, দিদারুল আলম দিদার, এসএম আল মামুন, নোমান আল মাহমুদ, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাবেক কাউন্সিলর এসরারুল হক, নুর মোস্তফা টিনু, সলিমুল্লাহ বাচ্চু, জিয়াউল হক সুমন ও নুরুল আজিম রনিসহ ২৩১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। আসামিরা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী বলে জানা গেছে।
আদালত সূত্র জানিয়েছে, মামলাটি পুলিশ তদন্ত করে আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি আইনের ৩০২ ধারায় অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করে। পুলিশ জানায়, ২০২৪ সালের ৩ আগস্ট সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাটে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে পিস্তল, শটগানসহ ভারী অস্ত্র দিয়ে গুলি ছোড়া হয়। এতে আহত হন শহীদুল ইসলাম শহীদ। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নিহত শহিদের ভাই শফিকুল ইসলাম চান্দগাঁও থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় আটজনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত শেষে ২৩১ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এ পর্যন্ত এই মামলায় মোট ৮৪ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। মামলার অভিযোগপত্রে মোট ১২৮ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ২৮ জন সাধারণ নাগরিক, ৯৯ জন পুলিশ সদস্য এবং একজন চিকিৎসক রয়েছেন।