প্রিন্ট সংস্করণ
০০:০০, ০৫ নভেম্বর, ২০২৫
প্রশ্ন : ত্বকীর জন্ম ও পরিবারের বৃত্তান্ত বলুন।
উত্তর : ৩১ অক্টোবর ২০০০ সালে কুমিল্লার মুরাদনগরের ডালপা গ্রামে ত্বকীর জন্ম। পাঁচ ভাই ও এক বোনের মধ্যে সে ছিল দ্বিতীয়। তার বাবা মাওলানা বদিউল আলম মাদরাসা পরিচালক।
প্রশ্ন : ছাত্র হিসেবে কেমন ছিল?
উত্তর : সে ৭ বছর আমার প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেছে। শুরু থেকেই অনেক নম্রভদ্র ছিল। তার পড়াশোনার প্রতি যথেষ্ট আগ্রহ ছিল। উস্তাদদের প্রতি অনেক শ্রদ্ধা-ভক্তি ও ভালোবাসা ছিল। মাদ্রাসার প্রত্যেক ছাত্র-শিক্ষক তাকে খুব স্নেহ করত। সে ছিল সবার থেকে আলাদা। তার চলাফেরা ছিল সবার থেকে অন্যরকম। রাতে উঠে তাহাজ্জুদ পড়া, আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করা, সারাদিন পড়ালেখায় ব্যস্ত থাকা ছিল তার স্বভাব। পড়ালেখা ছাড়া তার দ্বিতীয় কোনো কাজই ছিল না। সে কোনো প্রকার লেনদেন পছন্দ করত না। ছাত্র হিসেবে অনেক ভালো ছিল। সে শুধু পড়ালেখায় নয়, আচার-আচরণে সবার জন্য উদাহরণ ছিল। কোরআন-হাদিসের গভীর জ্ঞানার্জন করাই ছিল তার জীবনের লক্ষ্য। শিক্ষক হিসেবে সবসময় তার মধ্যে আলাদা আগ্রহ ও নিষ্ঠা দেখেছি। সে কখনও অলসতা করত না। সামর্থ্যরে সবটুকু দিয়ে জানার চেষ্টা করত। তার বিনয়, শ্রদ্ধা ও আদব আমার মনে গভীর ছাপ ফেলেছে। সে আমাদের মধ্যে নেই, কিন্তু তার স্মৃতি, তার পরিশ্রম আর তার ভালোবাসা চির অম্লান থাকবে।
প্রশ্ন : হিফজে বিশ্বজয়সহ তকির সাফল্যগুলো কী কী?
উত্তর : তার অনেক অর্জন ও সাফল্য রয়েছে। উল্লেখযোগ্য সাফল্যের মধ্যে রয়েছে- ২০১৪ সালে এনটিভিতে প্রচারিত পিএইচপি কোরআনের আলোতে প্রথম স্থান অর্জন করে। ২০১৭ সালে জর্ডান আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করে। ২০১৮ সালে বাহরাইন অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় তৃতীয় স্থান অর্জন করে। ২০১৯ সালে কুয়েতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে।
প্রশ্ন : তার মৃত্যু ও দাফন সম্পর্কে বলুন।
উত্তর : তকি ডেঙ্গুজরে আক্রান্ত ছিল। রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন ছিল। এরপর অক্টোবরের ২৮ তারিখে মারা যায়। তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে। এরপর দ্বিতীয় জানাজা পড়া হয় তার গ্রামের বাড়ি ডালপা, মুরাদনগরে। সেখানেই তাকে দাফন করা হয়।
প্রশ্ন : শিক্ষক হিসেবে তাকে নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
উত্তর : ত্বকী ছাত্র হিসেবে ছিল এক অনন্য উদাহরণ। সবসময় শিক্ষকদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা দেখাত। কখনও কথার মাধ্যমে অসভ্যতা বা অমর্যাদা প্রকাশ করত না। পড়াশোনায় অত্যন্ত মনোযোগী ছিল। কোরআন-হাদিস আর ইসলামি শিক্ষার বিষয়ে সবসময় আগ্রহী ছিল। তার আচরণ সতর্ক, নম্র ও সদাচারপূর্ণ ছিল। সহপাঠী ও ছোটদের জন্য সে ছিল অনুপ্রেরণা। ত্বকী শুধু জ্ঞানার্জন করত না, তা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতেও উৎসাহী ছিল। তার নামাজ, দোয়া ও নৈতিক জীবনধারা তার আধ্যাত্মিকতার প্রমাণ। তার নিষ্ঠা, সৎচরিত্র ও আন্তরিকতা সব ছাত্রের জন্য অনুপ্রেরণা। সামগ্রিকভাবে ত্বকী আমাদের মাদরাসার জন্য একটি দৃষ্টান্ত। সে জ্ঞান, আদব ও ভক্তির মিশ্রণে একজন সত্যিকারের আদর্শ ছাত্রের ছাপ রেখে গেছে। আমি তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। বিশ্বজয়ী কোরআনের হাফেজরা কখনও মরে না। ত্বকীও কোনোদিন মরবে না। বেঁচে থাকবে আমাদের প্রতিটি হৃদয়ে।