দীর্ঘদিন ধরে সিরামিক শিল্প খাত গ্যাসের সরবরাহ সমস্যায় ভুগছিল। এর মধ্যে আবার শিল্প খাতে নতুন করে গ্যাসের দাম বাড়াতে চায় সরকার। এতে আরো সংকটে পড়বে এ শিল্প। যে কারণে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি না করা ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার দাবি করেছে সিরামিক খাতের সংগঠন বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমইএ)। গতকাল সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) মিলনায়তনে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি না করা, গ্যাসের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার পাশাপাশি সিরামিক পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক প্রত্যাহারে সংবাদ সম্মেলন করেছে সংগঠনটি। এ সময় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মইনুল ইসলাম। তিনি বলেন, সিরামিক গ্যাস নির্ভর একটি শিল্প। এই শিল্পে গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ না থাকলে উৎপাদনে থাকা সব পণ্য তৎক্ষণাৎ নষ্ট হয়ে যায়। যে সমস্যায় দীর্ঘদিন ধরে এ শিল্প ভুগছে। ফলে কোম্পানিগুলো বিপুল আর্থিক ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। এতোদিন গ্যাসের চাপের অভাবে সময়মতো পণ্য সরবরাহ করতে না পারায় বিশ্ববাজারে নামি-দামি কোম্পানির অর্ডার বাতিল হয়েছে। গ্যাস সংকটে অনেক কারখানার একাধিক উৎপাদন লাইনের মধ্যে একটি, কখনো একটিও চালানো সম্ভব হচ্ছে না। দেশের নিবন্ধিত প্রায় ৫০টিরও অধিক সিরামিক কোম্পানি তাদের বিনিয়োগ স্থগিত রেখেছে। পাশাপাশি নতুন স্থাপিত ৫টি কারখানা শুধু গ্যাসের অপ্রতুল সরবরাহের কারণে উৎপাদন শুরু করতে পারেনি। এ অবস্থায় সরকার শিল্পখাতের গ্যাসের দাম আরো বাড়াতে চায়। এতে এ শিল্পখাত ধ্বংসের মুখে পড়বে। কারণ বিগত নয় বছরে (২০১৫ থেকে ২০২৩) শিল্পখাতে প্রায় ৩৪৫ শতাংশ গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। শেষ বিগত ২০২৩ সালে শিল্পখাতে প্রায় ১৫০ শতাংশ গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির ফলে কেজিপ্রতি সিরামিক পণ্যের গড় উৎপাদন ব্যয় ১৮ থেকে ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। এতে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই তৈরি পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির কারণে দেশের অভ্যন্তরীণ বিক্রির পাশাপাশি বিদেশি পণ্যের সঙ্গে মূল্য প্রতিযোগিতার কারণে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়েছে। উৎপাদকরা বিপুল আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে রয়েছে। এর মধ্যে আবারো গ্যাসের দাম বাড়লে নতুন করে পণ্যের উৎপাদন ব্যয় আরো ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ বেড়ে যাবে। এটা হবে এ খাতের জন্য ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’। এতে করে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো ধীরে ধীরে রুগ্ন শিল্পে পরিণত হবে। অন্যদিকে, বিশ্ব বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্যও উৎপাদন খরচ কমাতে শিল্প মালিকরা বাধ্য হয়ে হয়তো শ্রমিক-কর্মচারী ছাঁটাই করবে। ফলে বেকারত্ব বৃদ্ধি পাবে। সময়মতো ব্যাংক ঋণ পরিশোধের ব্যর্থতায় ঋণখেলাপি বৃদ্ধি পাবে। রপ্তানি কমে কমবে সরকারের আয়ও। মইনুল ইসলাম বলেন, আমরা সরকারকে এই ধরনের হঠকারী সিদ্ধান্ত থেকে বিরত থাকার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। পাশাপাশি সংবাদ সম্মেলনে, বর্তমানে সব দেশীয় টাইলস উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ হারে সম্পূরক শুল্ক এবং দেশীয় স্যানিটারি পণ্য উৎপাদন পর্যায়ে ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপিত রয়েছে। এ শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করার দাবি করছেন তারা। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিসিএমইএর উপদেস্টা মীর নাছির হোসেন, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মামুনুর রশীদ, ভাইস প্রেসিডেন্ট আব্দুল হাকিম সুমন প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, দেশে এখন প্রায় ৮০টির বেশি সিরামিক টেবিলওয়্যার, টাইলস ও স্যানিটারিওয়্যার শিল্প কারখানা রয়েছে। এ সব প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা।