ঢাকা রোববার, ২২ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

১০ শতাংশ শুল্ক নেয়া শুরু যুক্তরাষ্ট্রের

১০ শতাংশ শুল্ক নেয়া শুরু যুক্তরাষ্ট্রের

বিশ্বের সিংহভাগ দেশ থেকে সব আমদানি পণ্যে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, তা নেয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। নির্দেশ অনুযায়ী গতকাল শনিবার প্রথম প্রহর থেকেই মার্কিন কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকা পণ্য থেকে নতুন এ শুল্ক নেয়া শুরু করেন। ৫৭টি বড় বাণিজ্য অংশীদারের ওপর ট্রাম্প আরও বেশি শুল্ক চাপিয়েছেন, তা বুধবার থেকে নেয়া শুরু হবে। বার্তাসংস্থা রয়টার্স লিখেছে, সব মার্কিন সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দর ও শুল্ক গুদামে পূর্বাঞ্চলীয় সময় রাত ১২টা ১ মিনিটে এই ‘ভিত্তি শুল্ক’ কার্যকর হয়; এর ভেতর দিয়ে ট্রাম্প দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে নির্ধারিত শুল্ক ব্যবস্থাকে পুরোপুরি গুঁড়িয়ে দেয়ার কাজ শুরু করলেন। ‘আমাদের জীবদ্দশায় এটিই একক বৃহত্তম বাণিজ্য পদক্ষেপ’, বলেছেন আমেরিকান-ব্রিটিশ ল’ ফার্ম হোগান লভেলসের বাণিজ্যবিষয়ক আইনজীবী কেলি অ্যান শ। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে তিনি হোয়াইট হাউসের বাণিজ্য উপদেষ্টাও ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের এক অনুষ্ঠানে শ বলেন, বিভিন্ন দেশ দরকষাকষি শুরু করায় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক পণ্যেই শুল্ক বদলাবে বলে মনে করছেন তিনি। ‘এরপরও এটা বিশাল ব্যাপার। পৃথিবীর প্রত্যেক দেশের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্যের পদ্ধতিতে এটি একটি বিরাট ও তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন,’ বলেছেন তিনি। বুধবার ট্রাম্প তার নতুন শুল্ক নীতি ঘোষণার পর বিশ্বের প্রায় সব শেয়ারবাজার মারাত্মক ধাক্কা খেয়েছে; শুক্রবার লেনদেন শেষ হওয়া পর্যন্ত টানা দুই দিনে এসঅ্যান্ডপি ৫০০তে নিবন্ধিত কোম্পানিগুলো ৫ লাখ কোটি ডলার হারিয়েছে। তেল ও অনেক গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের দাম নামছে, নিরাপত্তার জন্য বিনিয়োগকারীরা ছুটছে সরকারি বন্ডের দিকে। প্রথম যে দেশগুলো ১০ শতাংশ শুল্কের শিকার হয়েছে তার মধ্যে অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, কলম্বিয়া, আর্জেন্টিনা, মিশর ও সৌদি আরব আছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স। নৌযানে পণ্য পরিবহনকারীদের পাঠানো বুলেটিনে শনিবার মধ্য রাতে জলসীমায় থাকলেও কোনো জাহাজকে শুল্ক থেকে ছাড় না দেয়ার ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। যদিও এর আগে বুলেটিনে তারা গতকাল শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলীয় সময় দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটের আগে বিমানে বা নৌযানে ভরা কার্গোর ক্ষেত্রে ৫১ দিনের ‘গ্রেস পিরিয়ড’ বা বাড়তি সময় দেয়া হবে বলে জানিয়েছিল; শর্ত ছিল- ১০ শতাংশ শুল্ক ছাড় পেতে ওই কার্গোগুলোর যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে হবে ২৭ মে পূর্বাঞ্চলীয় সময় রাত ১২টা ১ মিনিটের আগে। গতকাল শনিবার যে সময় থেকে কর্মকর্তারা ১০ শতাংশ ‘ভিত্তি শুল্ক’ নেয়া শুরু করেছেন, বুধবার একই সময় থেকে তারা বড় বাণিজ্য অংশীদারদের ওপর ট্রাম্পের আরোপ করা ১১ থেকে ৫০ শতাংশ শুল্ক নেয়া শুরু করবেন। এ দফায় ট্রাম্প ইউরোপীয় ইউনিয়নের পণ্যে ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং চীনা পণ্যে ৩৪ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করেছেন; আগে ২০ শতাংশ শুল্ক থাকায় যুক্তরাষ্ট্রে এখন অনেক চীনা পণ্য ঢুকতে গুণতে হবে ৫৪ শতাংশ বাড়তি শুল্ক। ট্রাম্পের প্রথম বছরে বেইজিংয়ের সঙ্গে ওয়াশিংটনের বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে লাভবান হওয়া ভিয়েতনামের পণ্যে বসেছে ৪৬ শতাংশ শুল্ক; এই শুল্ক কমিয়ে আনতে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি চুক্তি নিয়ে আলোচনায় রাজিও হয়েছে বলে শুক্রবার জানা গেছে। ট্রাম্পের নতুন শুল্ক থেকে বাদ পড়েছে কানাডা ও মেক্সিকো; দেশদুটির অনেক পণ্যে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট আগেই ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন। তার প্রশাসন এরই মধ্যে শুল্ক থেকে ছাড় পাওয়া হাজারেরও বেশি পণ্যের তালিকাও প্রকাশ করেছে। এসবের মধ্যে আছে অপরিশোধিত তেল, পেট্রোলিয়াম ও অন্যান্য জ্বালানি পণ্য, ওষুধ, ইউরেনিয়াম, টাইটানিয়াম, কাঠ, সেমিকন্ডাক্টর ও তামা। ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ৬৪ হাজার ৫০০ কোটি ডলার সমপরিমাণ এসব পণ্য আমদানি করেছিল। এসবের মধ্যে জ্বালানি খাত বাদে অন্য খাতের আর কোনো পণ্যে শুল্ক বসানো যায় কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত