ঢাকা রোববার, ২২ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

পাহাড়ের ‘রেড চিটাগাং’ গরু চাহিদার শীর্ষে

পাহাড়ের ‘রেড চিটাগাং’ গরু চাহিদার শীর্ষে

আকাশে ঈদের চাঁদ এখনও ওঠেনি, কিন্তু দেশের পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে ঈদের আমেজ শুরু হয়ে গেছে বহু আগেই। সেই আমেজের কেন্দ্রবিন্দুতে এবার একটাই নাম ‘রেড চিটাগাং’ গরু। পাহাড়ি অঞ্চলে জন্ম নেওয়া ও প্রাকৃতিক পরিবেশে বেড়ে ওঠা এই বিশেষ জাতের গরু শুধু রাঙামাটি নয়, পুরো দেশজুড়েই এখন কোরবানির মৌসুমে আলোচনার শীর্ষে। রেড চিটাগাং গরু মূলত পাহাড়ি অঞ্চলে লালন-পালন করা হয়। এই গরুর চেহারা আকর্ষণীয়, শরীর সুগঠিত এবং রঙ গাঢ় লাল। এগুলো স্বাভাবিকভাবেই মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তবে শুধু রূপ নয়, গুণেও অনন্য এই জাত। এ গরুর মাংস তুলনামূলকভাবে চর্বিমুক্ত, যা স্বাস্থ্যসচেতন মানুষের কাছে বিশেষভাবে গ্রহণযোগ্য। কৃত্রিম খাবার বা রাসায়নিক ব্যবহার না করে প্রাকৃতিক পরিবেশে লালিত-পালিত হওয়ায় এই গরুর মাংস সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যকর। রাঙামাটি ছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ক্রেতারা এসে এই গরু কিনেন।

বিক্রেতাদের মতে, আগে স্থানীয় বাজারেই এই গরুর বিক্রি সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন দেশের বড় শহরগুলোর ক্রেতারাও আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এতে পাহাড়ি অঞ্চলের খামারিরা যেমন লাভবান হচ্ছেন, তেমনি স্থানীয় অর্থনীতিও সমৃদ্ধ হচ্ছে। চলতি বছরে রেড চিটাগাং গরুর দাম গত বছরের তুলনায় ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বিক্রেতারা জানান, পাহাড়ি এলাকায় গরু লালন-পালনে ব্যয় বেশি। খাদ্য, খামারের রক্ষণাবেক্ষণ এবং যাতায়াত খরচ বেড়ে যাওয়ায় দাম বাড়ানো হয়েছে। বরকল উপজেলার খামারি বিকাশ চাকমা বলেন, এবার পশুর হাটে আমার ২০টিরও বেশি রেড চিটাগাং গরু তোলার অপেক্ষায় আছি। বাজার জমে উঠলে দাম ভালো পাওয়ার আশা করছি। তবে খরচও বেড়েছে আগের তুলনায় দ্বিগুণ। লংগদুর মাইনীমুখের গরু ব্যবসায়ী নুরুন নবী বলেন, এই গরুর চাহিদা এখন সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে দাম কিছুটা বেশি থাকবে, সেটা স্বাভাবিক। দাম বাড়ায় কিছুটা বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। অনেক ক্রেতা শুরুর দিকে না কিনে শেষ মুহূর্তে দাম কমার আশায় অপেক্ষা থাকেন। অন্যদিকে বিক্রেতারা মনে করছেন, ঈদের ঠিক আগ মুহূর্তে দাম আরও বাড়বে। ফলে এখন অনেকেই অপেক্ষায় রয়েছেন, কখন হাটে সবচেয়ে ভালো সময়টিতে গরু কেনা হবে। রাঙামাটি জেলা শহরের একমাত্র ট্রাক টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, ভোর থেকে ট্রাকে গরু বোঝাইয়ের ব্যস্ততা। পাহাড়ি অঞ্চলে পালিত ‘রেড চিটাগাং’ জাতের গরু এখন যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন বড় শহরে। স্থানীয় এক বেপারী জানান, ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ দেশের বড় শহরগুলোতে এই গরুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তিনি বলেন, পাহাড়ি গরু স্বাস্থ্যবান, খাটি ঘাস ও প্রাকৃতিক খাদ্যে বড় হয়। তাই এসব শহরে দামও ভালো পাওয়া যায়। জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর কোরবানির জন্য চাহিদা নির্ধারিত হয়েছে ৩৫,৯৪০টি পশু। তবে খামার ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রস্তুত পশুর সংখ্যা ৩৯,২৯৮টি, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যকই রেড চিটাগাং জাতের গরু।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত